heart attack warning signs: বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করে হয় না – এর আগে বিভিন্ন warning signs আপনার শরীর আপনাকে জানান দেয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো প্রকৃত heart attack এর এক মাস আগে থেকেই দেখা দিতে পারে। আজকের এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো heart attack এর সেই সব পূর্বাভাস যা চিনতে পারলে আপনার প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে পারেন।
হার্ট অ্যাটাক কেন হয় এবং কীভাবে চিনবেন?
Heart attack মূলত তখনই হয় যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী (coronary artery) বন্ধ হয়ে যায়। এই বন্ধ হওয়ার মূল কারণ হলো চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থের জমাট বাঁধা, যাকে প্লাক বলা হয়। যখন এই প্লাক ফেটে যায়, তখন রক্ত জমাট বেঁধে ধমনী সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। ফলে হৃদপিণ্ডের সেই অংশে অক্সিজেন পৌঁছায় না এবং পেশী মরে যেতে শুরু করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, শহুরে এলাকায় হার্ট অ্যাটাকের হার গ্রামীণ এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কর্মক্ষেত্রে কাজ করা শহুরে পেশাদারদের মধ্যে এর হার ১৯.৬%, যেখানে গ্রামীণ এলাকায় এটি ১.৮৫% থেকে ৩.৪% এর মধ্যে।
Heart Attack এর প্রধান পূর্ব লক্ষণসমূহ
বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি (Chest Pain)
সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি। এই ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে অনুভূত হয়। অনেকে এটিকে “বুকের উপর হাতি বসে আছে” এভাবে বর্ণনা করেন। এই অস্বস্তি কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হতে পারে বা আসা-যাওয়া করতে পারে।
মায়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যথা চাপ, নিঙড়ানো, পূর্ণতা বা তীব্র যন্ত্রণার মতো অনুভূত হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সবসময় তীব্র ব্যথা হবে এমন নয় – কখনো কখনো হালকা অস্বস্তিও heart attack এর লক্ষণ হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath)
হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া heart attack এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ warning sign। এটি বুকের ব্যথার সাথে বা একা একাও হতে পারে। অনেক সময় মানুষ মনে করেন এটি হয়তো সাধারণ শ্বাসকষ্ট, কিন্তু যদি হঠাৎ করে এবং কোন কারণ ছাড়াই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাহলে এটিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই শ্বাসকষ্ট এমনও হতে পারে যেন পর্যাপ্ত বাতাস পাচ্ছেন না বা গভীর শ্বাস নিতে পারছেন না।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি (Unusual Fatigue)
প্রতিদিনের কাজকর্মে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্তি অনুভব করা heart attack এর একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি আরো বেশি দেখা যায়।
এই ক্লান্তি সাধারণত বিশ্রাম নিলেও কমে না এবং প্রকৃত heart attack এর এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হতে পারে। যদি কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই আপনি দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঘাম (Cold Sweat)
আচমকা ঠান্ডা ঘাম বের হওয়া heart attack এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এই ঘাম সাধারণ গরমের ঘামের মতো নয়, বরং কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া এবং ঘেমে যাওয়ার অনুভূতি হয়।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এই ধরনের ঘাম প্রায়ই অন্যান্য heart attack symptoms এর সাথে দেখা দেয় এবং এটিকে কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য লক্ষণ
বাহু, ঘাড়, পিঠ এবং চোয়ালে ব্যথা
Heart attack এর সময় ব্যথা শুধুমাত্র বুকেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি প্রায়ই বাহু (বিশেষ করে বাম বাহু), কাঁধ, ঘাড়, পিঠ, চোয়াল, এমনকি দাঁত পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো পেটের উপরের অংশেও এই ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এই ধরনের ব্যথা সাধারণত নিস্তেজ বা তীক্ষ্ণ যেকোনো রকমই হতে পারে এবং এটি অনিয়মিত প্রকৃতির হয়ে থাকে। যদি আপনি এই ধরনের ব্যথা অনুভব করেন এবং সাথে অন্যান্য লক্ষণ থাকে, তাহলে অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিন।
বমি বমি ভাব এবং বদহজম
অনেক সময় heart attack এর লক্ষণগুলো বদহজমের মতো মনে হতে পারে। বমি বমি ভাব, পেট খারাপ, বা প্রচণ্ড অম্বল হতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায় এবং প্রায়ই এগুলোকে সাধারণ পেটের সমস্যা ভেবে ভুল হয়।
যদি আপনার প্রচণ্ড বুক জ্বালা বা বদহজম হয় যা স্বাভাবিক ওষুধে কমছে না, এবং সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকে, তাহলে এটিকে গুরুত্ব সহকারে নিন।
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক দ্রুত, ধীর বা অনিয়মিত হওয়া heart attack এর একটি warning sign হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে যে হৃদয় দৌড়াচ্ছে, ফড়ফড় করছে, বা কিছু beat বাদ যাচ্ছে।
সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এই ধরনের palpitation সাধারণত হালকা প্রকৃতির হয়, কিন্তু যদি অন্যান্য heart attack symptoms এর সাথে এটি হয়, তাহলে এটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
নারী এবং পুরুষের মধ্যে Heart Attack এর লক্ষণের পার্থক্য
পুরুষদের ক্ষেত্রে
পুরুষরা সাধারণত heart attack এর “ক্লাসিক” লক্ষণগুলো অনুভব করেন। এর মধ্যে রয়েছে তীব্র বুকের ব্যথা বা চাপ যা বাহু, ঘাড় বা চোয়ালে ছড়িয়ে যেতে পারে। তারা ঘাম, শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের রিপোর্ট করার সম্ভাবনা বেশি।
মহিলাদের ক্ষেত্রে
মহিলাদের ক্ষেত্রে heart attack এর লক্ষণগুলো আরো সূক্ষ্ম হতে পারে, যার কারণে এগুলো সহজেই উপেক্ষিত হয়। মহিলারা সবসময় পুরুষদের মতো তীব্র বুকের ব্যথা অনুভব করেন না। তার পরিবর্তে তারা অনুভব করতে পারেন:
- পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা দুই বাহুতে ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট বা বমি বমি ভাব
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি
- বুকে চাপ বা আঁটসাঁট অনুভূতি
জরুরি অবস্থায় কী করবেন
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
যদি আপনি বা আপনার কাছের কেউ heart attack এর লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে ৯৯৯ নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ হাসপাতালে যান। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করার সময়:
- রোগীকে বিশ্রামে রাখুন এবং অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলুন
- যদি অ্যাসপিরিন পাওয়া যায় এবং রোগীর এতে অ্যালার্জি না থাকে, তাহলে একটি পূর্ণ ট্যাবলেট (৩০০ মিগ্রা) চিবিয়ে খেতে দিন
- আঁটসাঁট পোশাক আলগা করে দিন
- রোগীকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন
হার্ট ব্লক অপারেশন: খরচ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ গাইড
যা করবেন না
- লক্ষণগুলো চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না
- নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না
- শক্ত ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন না
প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
Heart attack প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারেন:
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন – সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার শারীরিক কার্যকলাপ
- ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করুন
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান – ফল, সবজি, পূর্ণ শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন
- অতিরিক্ত লবণ এবং চিনি এড়িয়ে চলুন
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়মিত রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং রক্তের শর্করা পরিমাপ করান। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি বছর একবার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের ৪০-৭৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার ২৭.৫% এর পরবর্তী ১০ বছরে cardiovascular disease এর ঝুঁকি রয়েছে। তাই প্রাথমিক পর্যায়েই সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
Heart attack একটি মারাত্মক অবস্থা, কিন্তু সঠিক জ্ঞান এবং দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব। এই লক্ষণগুলো চিনতে পারলে এবং যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে heart attack থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব। মনে রাখবেন, সন্দেহ হলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন – কারণ heart attack এর ক্ষেত্রে সময়ই জীবন।আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য এই তথ্যগুলো সবার সাথে শেয়ার করুন। কারণ একটি সচেতনতাই হতে পারে কারো জীবন রক্ষার মাধ্যম।