অবাক হচ্ছেন? এখন হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয় করা সম্ভব! জেনে নিন ৭টি গোপন কৌশল

আজকালকার দিনে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন অথচ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে গল্প করা থেকে শুরু করে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চালাচালি পর্যন্ত, সবকিছুই…

Soumya Chatterjee

 

আজকালকার দিনে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন অথচ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে গল্প করা থেকে শুরু করে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চালাচালি পর্যন্ত, সবকিছুই এখন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হয়। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিনের ব্যবহারের এই অ্যাপটিই হতে পারে আপনার উপার্জনের একটি দারুণ মাধ্যম? হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! আজকের এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কীভাবে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয় করা যায় এবং সেই পদ্ধতিগুলো আপনার জন্য কতটা সহজ হতে পারে। চ্যাটিং অ্যাপের গণ্ডি পেরিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ এখন অনেকের কাছেই একটি মিনি-ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

চলুন, আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সেই সব অসাধারণ উপায়, যা আপনার স্মার্টফোনটিকে একটি টাকা তৈরির মেশিনে পরিণত করতে পারে।

হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয়: এটা কি সত্যিই বাস্তবসম্মত?

অনেকের মনেই প্রথম প্রশ্ন আসে, “চ্যাট করে আবার টাকা আয় করা যায় নাকি?” উত্তরটা হলো, সরাসরি চ্যাট করে হয়তো নয়, কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন ফিচারকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে অবশ্যই আয় করা সম্ভব।

ইউটিউব বা ফেসবুকের মতো হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের টাকা দেয় না। তবে এর বিশাল ব্যবহারকারী সংখ্যা (বিশ্বজুড়ে ২০০ কোটিরও বেশি) এবং যোগাযোগের সহজলভ্যতার কারণে এটি মার্কেটিং এবং ব্যবসার জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। আপনাকে শুধু জানতে হবে, কোন পথে হাঁটলে এবং কোন কৌশল অবলম্বন করলে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে আপনিও আয় করতে পারবেন। এটি কোনো কাল্পনিক ধারণা নয়, সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপকে তাদের আয়ের অন্যতম উৎস বানিয়ে ফেলেছেন।

নতুনদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয়ের সেরা ৫টি উপায়

আপনি যদি এই জগতে একেবারে নতুন হন, তাহলে সহজ কিছু পদ্ধতি দিয়ে শুরু করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিচে এমন ৫টি উপায় আলোচনা করা হলো যা যে কেউ শুরু করতে পারে।

১. নিজের ব্যবসার প্রচার ও প্রসার ঘটানো

আপনার যদি কোনো ছোট ব্যবসা থাকে—হোক তা কাপড়ের, কেক তৈরির, গয়না বিক্রির বা অন্য কোনো পরিষেবা—তবে হোয়াটসঅ্যাপ আপনার জন্য সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন মাধ্যম হতে পারে।

  • WhatsApp Business অ্যাপ ব্যবহার করুন: সাধারণ হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে WhatsApp Business অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এখানে আপনি আপনার ব্যবসার জন্য একটি প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন, যেখানে ঠিকানা, ওয়েবসাইট, এবং ক্যাটালগ যোগ করার সুবিধা রয়েছে।
  • ক্যাটালগ তৈরি করুন: আপনার পণ্যের ছবি, বিবরণ এবং মূল্য দিয়ে একটি সুন্দর ক্যাটালগ তৈরি করুন। গ্রাহকরা সরাসরি আপনার ক্যাটালগ দেখে অর্ডার করতে পারবে।
  • স্ট্যাটাস ও গ্রুপের সঠিক ব্যবহার: নিয়মিত আপনার পণ্যের ছবি বা অফার নিয়ে স্ট্যাটাস দিন। আপনার পরিচিতদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করুন এবং সেখানে নতুন পণ্য সম্পর্কে আপডেট দিন। এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার ব্যবসার প্রচার করতে পারবেন এবং বিক্রি বাড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।

২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর মাধ্যমে আয়

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমান সময়ে অনলাইনে আয়ের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম। আর এই কাজটি করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম।

সংজ্ঞা: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে আপনি অন্য কোনো কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবা আপনার মাধ্যমে প্রচার করেন এবং আপনার দেওয়া লিঙ্ক থেকে যখন কেউ সেই পণ্য কেনে, তখন আপনি একটি নির্দিষ্ট কমিশন পান।

Amazon, Flipkart, বা অন্য অনেক ই-কমার্স সাইটের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিন। এরপর আপনার পছন্দের পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক তৈরি করে সেটি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, কন্টাক্ট লিস্ট বা স্ট্যাটাসে শেয়ার করুন। আপনার শেয়ার করা লিঙ্ক থেকে যত বেশি বিক্রি হবে, আপনার আয়ও তত বাড়বে।

৩. রিসেলিং ব্যবসা শুরু করুন

রিসেলিং হলো এমন একটি ব্যবসা যেখানে আপনাকে নিজের কোনো পণ্য তৈরি করতে বা স্টক করতে হয় না। আপনি শুধু একটি সোর্স থেকে পণ্য নিয়ে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেন।

  • কীভাবে শুরু করবেন?: অনেক কোম্পানি আছে যারা রিসেলারদের জন্য পণ্য সরবরাহ করে। আপনি তাদের ক্যাটালগ থেকে পণ্যের ছবি এবং বিবরণ নিয়ে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং স্ট্যাটাসে শেয়ার করুন।
  • লাভের হিসাব: ধরা যাক, সরবরাহকারী একটি পোশাকের দাম রেখেছে ৫০০ টাকা। আপনি সেটিকে আপনার লাভ যুক্ত করে ৭০০ টাকায় বিক্রি করলেন। গ্রাহক আপনাকে ৭০০ টাকা পেমেন্ট করার পর, আপনি সরবরাহকারীকে ৫০০ টাকা দিয়ে গ্রাহকের ঠিকানায় পণ্যটি পাঠিয়ে দিতে বলবেন। মাঝখানের ২০০ টাকাই আপনার লাভ।

এই ব্যবসায় কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না, তাই ঝুঁকিও অনেক কম।

৪. অন্যদের পণ্য বা পরিষেবার প্রচার করা

আপনার যদি অনেক বড় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থাকে বা আপনার কন্টাক্ট লিস্টে অনেক মানুষ থাকে, তাহলে আপনি একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও কাজ করতে পারেন।

আপনার এলাকার কোনো ছোট রেস্তোরাঁ, বিউটি পার্লার বা কোনো নতুন দোকান তাদের প্রচারের জন্য আপনাকে অর্থ দিতে পারে। আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে তাদের বিজ্ঞাপন বা অফার আপনার গ্রুপ বা স্ট্যাটাসে শেয়ার করতে পারেন। একে “লোকাল ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং” বলা হয় এবং এটি হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয় করার একটি চমৎকার উপায়।

৫. অনলাইন টিউশন বা পরামর্শ প্রদান

আপনার যদি কোনো বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা থাকে (যেমন – পড়াশোনা, আঁকা, গিটার বাজানো, রান্না, বা ফিটনেস), তবে আপনি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অন্যদের তা শেখাতে পারেন।

  • একটি গ্রুপ তৈরি করুন: আগ্রহী ছাত্রছাত্রী বা ক্লায়েন্টদের নিয়ে একটি পেইড হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করুন।
  • ক্লাস পরিচালনা করুন: ভিডিও কল, ভয়েস নোট, পিডিএফ ফাইল এবং টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে আপনি আপনার ক্লাস বা কনসালটেন্সি সেশন পরিচালনা করতে পারেন। পেমেন্ট নেওয়ার জন্য WhatsApp Payments বা অন্যান্য অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যাডভান্সড লেভেলের জন্য আরও কিছু কার্যকরী কৌশল

সাধারণ পদ্ধতিগুলো আয়ত্তে এসে গেলে, আপনি আপনার আয় বাড়ানোর জন্য আরও কিছু উন্নত কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল (Channel) ব্যবহার করে আয়

হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার হলো চ্যানেল। এটি অনেকটা টেলিগ্রাম চ্যানেলের মতো, যেখানে আপনি আনলিমিটেড সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার যোগ করতে পারেন।

  • একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে চ্যানেল তৈরি করুন: যেমন – প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, শেয়ার বাজার বা চাকরির খবর নিয়ে একটি চ্যানেল তৈরি করুন।
  • নিয়মিত কন্টেন্ট দিন: আপনার ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য নিয়মিত মূল্যবান তথ্য শেয়ার করুন।
  • মনিটাইজেশন: ফলোয়ার সংখ্যা বাড়লে আপনি সেখানে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক, স্পনসরড পোস্ট, বা নিজের কোনো কোর্স বিক্রি করে সহজেই আয় করতে পারবেন।

হোয়াটসঅ্যাপ পেমেন্টস (Payments) এর সঠিক ব্যবহার

যদিও WhatsApp Payments সরাসরি আয়ের উৎস নয়, তবে এটি আপনার ব্যবসাকে অনেক সহজ করে দেয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করার জন্য এটি একটি নিরাপদ এবং দ্রুত মাধ্যম। যখন গ্রাহকরা দেখেন যে পেমেন্ট প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ, তখন তাদের পণ্য কেনার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়, যা পরোক্ষভাবে আপনার আয় বাড়াতে সাহায্য করে।

শুরু করার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন

যেকোনো কাজ শুরু করার আগে তার নিয়মকানুন জেনে নেওয়া জরুরি। হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আয় করার ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:

  • স্প্যামিং করবেন না: অনুমতি ছাড়া কাউকে বারবার মেসেজ বা লিঙ্ক পাঠাবেন না। এতে আপনার নম্বর ব্লক হয়ে যেতে পারে।
  • বিশ্বাস অর্জন করুন: গ্রাহক বা ফলোয়ারদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন। ভুল তথ্য দিয়ে বা নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করে বিশ্বাস হারাবেন না।
  • ধৈর্য ধরুন: রাতারাতি লাখপতি হওয়ার কোনো উপায় নেই। 꾸준히 কাজ করে যেতে হবে এবং নিজের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সময় দিতে হবে।
  • হোয়াটসঅ্যাপের নীতি মেনে চলুন: হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবসায়িক নীতি (Business Policy) সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন এবং সেগুলো মেনে চলুন।

আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে আপনি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন যে, সঠিক পথে এগোলে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয় করা মোটেও কোনো কঠিন কাজ নয়। এটি এখন আর শুধু একটি মেসেজিং অ্যাপ নয়, বরং সঠিক ব্যবহারকারীর জন্য এটি একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক হাতিয়ার। আপনার প্রয়োজন শুধু একটি ভালো পরিকল্পনা, ধৈর্য এবং সৃজনশীলতা। উপরে আলোচিত যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিয়ে আপনিও আপনার আয়ের একটি নতুন রাস্তা তৈরি করতে পারেন।

আপনার কাছে কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হলো? কমেন্ট করে আমাদের জানান এবং পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদেরও আয়ের সুযোগ করে দিন!

About Author
Soumya Chatterjee

সৌম্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক এবং প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালিখিতে বিশেষ আগ্রহী। তিনি একজন উদ্যমী লেখক, যিনি প্রযুক্তির জটিল ধারণাগুলোকে সহজভাবে উপস্থাপন করতে দক্ষ। তার লেখার মূল ক্ষেত্রগুলোতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নতুন প্রযুক্তি, গ্যাজেট রিভিউ, সফটওয়্যার গাইড, এবং উদীয়মান টেক প্রবণতা। সৌম্যর প্রাঞ্জল ও তথ্যবহুল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রযুক্তি সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান এবং অনুসন্ধিৎসু মনোভাব তাকে পাঠকদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় করে তুলেছে। টেক জগতে চলমান পরিবর্তনগুলির সাথে তাল মিলিয়ে সৌম্য সর্বদা নতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ বিষয়বস্তু নিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।