How to get rid of house pests: গ্রীষ্মকালে বাড়িতে পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। এই সময় উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পোকামাকড়ের প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে আমাদের ঘরে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দেখা দেয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে আপনি সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আসুন জেনে নেই ঘরের পোকামাকড় দূর করার কয়েকটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপায়।
পোকামাকড় দূর করার প্রাকৃতিক উপায়সমূহ
১. সাইট্রাস ফলের ব্যবহার
লেবু, কমলা ইত্যাদি সাইট্রাস জাতীয় ফলের তীব্র গন্ধ পোকামাকড় তাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। এই ফলগুলোর রস পানির সাথে মিশিয়ে একটি প্রাকৃতিক স্প্রে তৈরি করা যায়। এই মিশ্রণ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করলে পোকামাকড় দূরে থাকবে।
প্রস্তুত প্রণালী:
- ১ কাপ লেবু বা কমলার রস নিন
- ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে নিন
- একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন
- বাড়ির বিভিন্ন কোণায় স্প্রে করুন
২. এসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যবহার
পেপারমিন্ট, ল্যাভেন্ডার, টি ট্রি অয়েল ইত্যাদি এসেন্সিয়াল অয়েল প্রাকৃতিকভাবে পোকামাকড় প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই ঘর থেকে পোকামাকড় দূর করতে পারেন।
ব্যবহার পদ্ধতি:
- একটি ডিফিউজারে পানি নিন
- ৫-১০ ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন
- ঘরের বিভিন্ন স্থানে রেখে দিন
৩. রসুনের ব্যবহার
রসুনের তীব্র গন্ধ পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য বিখ্যাত। রসুন দিয়ে তৈরি একটি প্রাকৃতিক স্প্রে ব্যবহার করে আপনি সহজেই ঘর থেকে পোকামাকড় দূর করতে পারেন।
প্রস্তুত প্রণালী:
- ৫-৬টি রসুন কোয়া থেঁতো করে নিন
- ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে নিন
- একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন
- বাড়ির বিভিন্ন কোণায় স্প্রে করুন
৪. ভিনেগারের ব্যবহার
ভিনেগারের তীব্র গন্ধ পোকামাকড় তাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। পানির সাথে সমপরিমাণ ভিনেগার মিশিয়ে একটি প্রাকৃতিক স্প্রে তৈরি করা যায়। এই মিশ্রণ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করলে পোকামাকড় দূরে থাকবে।
প্রস্তুত প্রণালী:
- ১ কাপ ভিনেগার নিন
- ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে নিন
- একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন
- বাড়ির বিভিন্ন কোণায় স্প্রে করুন
৫. দারচিনির ব্যবহার
দারচিনির তীব্র গন্ধ পিঁপড়াসহ বিভিন্ন পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য বিখ্যাত। দারচিনির গুঁড়া বাড়ির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিলে পোকামাকড় দূরে থাকবে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
- দারচিনির গুঁড়া সংগ্রহ করুন
- বাড়ির প্রবেশপথে ছড়িয়ে দিন
- যেসব জায়গায় পোকামাকড় বেশি আসে সেখানে ছড়িয়ে দিন
পোকামাকড়ের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি
পোকামাকড় শুধু বিরক্তিকর নয়, এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পোকামাকড়ের কারণে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোগ বিস্তার
পোকামাকড় বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। এরা তাদের মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং চামড়া ছাড়ে, যা থেকে বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। বিশেষ করে ইঁদুর প্রায় ৩৫ ধরনের রোগ ছড়াতে পারে, যার মধ্যে সালমোনেলা, মেনিনজাইটিস, লেপটোস্পাইরোসিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এলার্জি
অনেক মানুষ পোকামাকড়ের প্রতি এলার্জিক। এদের কাছাকাছি থাকলেই এলার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিছানার পোকা বা বেড বাগ মানুষের রক্ত খায় এবং কামড়ের ফলে অনেকের শরীরে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
পূর্ব থেকে বিদ্যমান রোগের অবস্থা খারাপ করা
পোকামাকড় পূর্ব থেকে বিদ্যমান কিছু রোগের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। যেমন, আপনার যদি হাঁপানি থাকে, তাহলে তিলাপোকার কারণে এর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। তিলাপোকা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং তাদের চামড়া ছাড়ার ফলে যে কণা তৈরি হয় তা শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে হাঁপানির অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো শুধু বিরক্তিকর নয়, এগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ও সম্পত্তির জন্যও হুমকি স্বরূপ। নিচে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরা হলো:
স্বাস্থ্য সুরক্ষা
পোকামাকড় বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মশা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি রোগ ছড়াতে পারে। প্রতি বছর প্রায় ৮০০,০০০ মানুষ মশার কামড়ের কারণে মারা যায়, যা হাঙ্গর, কুমির ও সাপের মতো প্রাণীদের চেয়েও বেশি।
সম্পত্তি রক্ষা
কিছু পোকামাকড় আমাদের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। যেমন, দীর্ঘমেয়াদে উইপোকার আক্রমণ বাড়ির কাঠামোগত ক্ষতি করতে পারে। প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উইপোকার কারণে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খাদ্য সুরক্ষা
অনেক পোকামাকড় আমাদের খাদ্য দূষিত করতে পারে। ইঁদুর ও অন্যান্য কৃন্তক প্রাণী প্রতি বছর এত পরিমাণ খাদ্য নষ্ট করে যা দিয়ে ২০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো যেত।
শিকলে বাঁধা পা, দেবীর রূপ ভয়ংকর! জানুন হুগলির ‘বৈদ্যদের পুজো’র ইতিহাস
মানসিক স্বাস্থ্য
পোকামাকড়ের উপস্থিতি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, বিছানার পোকার আক্রমণের পর অনেকে দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রা ও উদ্বেগে ভোগেন। এছাড়া যাদের নির্দিষ্ট কোনো পোকামাকড়ের ফোবিয়া আছে, তাদের জন্য এই সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এক্ষেত্রে রাসায়নিক পদ্ধতির পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা উচিত। কারণ প্রাকৃতিক উপায়গুলো নিরাপদ এবং এগুলোর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।