Effective ways to reduce mental stress: মানসিক চাপ আজকের দিনে একটি সাধারণ সমস্যা। প্রতিদিনের জীবনে আমরা নানা ধরনের চাপের সম্মুখীন হই যা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। তবে সঠিক কৌশল অবলম্বন করে আমরা এই চাপকে কমিয়ে আনতে পারি এবং একটি সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করতে পারি। চলুন জেনে নেই মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকর উপায়।
মানসিক চাপ আমাদের জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে। এর ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা, সম্পর্ক – সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৭৭% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মাথাব্যথা, ক্লান্তি ও বিষণ্নতার মতো মানসিক চাপের লক্ষণ অনুভব করেন।তাই মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত জরুরি। নিচে মানসিক চাপ কমানোর কয়েকটি কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো:
নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ কমানোর একটি দারুণ উপায়। এটি শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত ২.৫ ঘণ্টা মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।আপনি হাঁটা, জগিং, সাঁতার, সাইক্লিং ইত্যাদি যেকোনো ধরনের ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে শরীরে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসরণ হয় যা মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ধ্যান ও মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি কার্যকর উপায়। এর মাধ্যমে আমরা বর্তমান মুহূর্তে মনোনিবেশ করতে শিখি এবং নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারি।গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধ্যান অনুশীলনের ফলে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমে যায়। আপনি প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট সময় বের করে ধ্যান অনুশীলন করতে পারেন। এছাড়া মাইন্ডফুলনেস-ভিত্তিক স্ট্রেস রিডাকশন (MBSR) প্রোগ্রামও খুব কার্যকর।
ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল চেক করা: আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে!
পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় যা মানসিক চাপ বাড়ায়।প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের আগে স্ক্রিন দেখা এড়িয়ে চলুন এবং শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন।
আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত চিনি, ক্যাফেইন ও প্রক্রিয়াজাত খাবার মানসিক চাপ বাড়াতে পারে।পরিবর্তে ফল, সবজি, হোলগ্রেইন, লিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন সালমন মাছ, চিয়া সিড ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সাথে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সামাজিক সম্পর্ক আমাদের মানসিক সহায়তা দেয় এবং একাকীত্ব দূর করে।গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দীর্ঘায়ু হয়। নিয়মিত বন্ধুদের সাথে দেখা করুন, পরিবারের সাথে সময় কাটান বা কোনো সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত হোন।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া মানসিক চাপ কমানোর একটি দারুণ উপায়। গাছপালা, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলে মন প্রশান্ত হয় এবং মানসিক চাপ কমে।গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালেও মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে যায়। আপনি নিকটবর্তী পার্কে হাঁটতে যেতে পারেন বা বাগানে সময় কাটাতে পারেন।
ভালো সময় ব্যবস্থাপনা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অনেক সময় কাজের চাপে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি যা মানসিক চাপ বাড়ায়।প্রতিদিনের কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাজান। বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। নিয়মিত বিরতি নিন এবং “না” বলতে শিখুন।
হাসি মানসিক চাপ কমানোর একটি দারুণ উপায়। হাসলে শরীরে এন্ডরফিন নিঃসরণ হয় যা মেজাজ ভালো রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।আপনি কোনো হাস্যকর সিনেমা বা সিরিজ দেখতে পারেন, কৌতুক পড়তে পারেন বা বন্ধুদের সাথে হাসি-ঠাট্টা করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
আপনার প্রিয় শখ বা হবি চর্চা করা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে আনন্দ দেয় এবং দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি দেয়।আপনি যেকোনো শখ বেছে নিতে পারেন – যেমন বই পড়া, ছবি আঁকা, বাগান করা, রান্না করা ইত্যাদি। নিয়মিত আপনার শখ চর্চার জন্য সময় বের করুন।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির ৯টি কার্যকর উপায় – যা আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে!
যদি আপনি অত্যধিক মানসিক চাপে ভুগছেন এবং নিজে সামলাতে পারছেন না, তাহলে পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত। একজন মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলর আপনাকে মানসিক চাপ সামলানোর কৌশল শেখাতে পারেন।গবেষণায় দেখা গেছে, কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT) মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে খুব কার্যকর।
লজ্জা না পেয়ে প্রয়োজনে অবশ্যই পেশাদার সাহায্য নিন।মানসিক চাপ জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। তবে সঠিক কৌশল অবলম্বন করে আমরা এই চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। উপরের উপায়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করে দেখুন। মনে রাখবেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ধৈর্য ধরুন এবং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন।
মন্তব্য করুন