অষ্টম বেতন কমিশনের আগমনের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর সামনে এসেছে। সাম্প্রতিক সংবাদ অনুযায়ী, এবার মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ (Dearness Allowance) বৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ২ শতাংশ, যা গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই বৃদ্ধি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আগামী মার্চ মাসে বেতনের সঙ্গে যোগ হবে এবং দুই মাসের বকেয়াও প্রদান করা হবে। তবে এই সামান্য বৃদ্ধি সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই সপ্তাহে ডিএ বৃদ্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সাধারণত সরকার বছরে দু’বার—জানুয়ারি ও জুলাই মাসে—ডিএ এবং পেনশনভোগীদের জন্য ডিআর (Dearness Relief) সংশোধন করে। গত জুলাই মাসে ডিএ ৫০ শতাংশ থেকে ৫৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এর আগে ২০২৪ সালের মার্চে এটি ৪৬ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে বৃদ্ধি পায় এবং অক্টোবরে আরও ৩ শতাংশ বেড়ে ৫৩ শতাংশে পৌঁছায়। কিন্তু এবারের ২ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা গত সাত বছরে সবচেয়ে কম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অষ্টম বেতন কমিশন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে এটি সপ্তম বেতন কমিশনের অধীনে শেষ ডিএ বৃদ্ধি হতে পারে। এই কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হয়ে শূন্য থেকে শুরু হবে।
ডিএ বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয় অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI) এর তথ্যের ভিত্তিতে, যা শিল্প শ্রমিকদের জন্য মূল্যস্ফীতির হার নির্দেশ করে। সাম্প্রতিক AICPI তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২৪-এ মূল্যস্ফীতির হার ০.৮ শতাংশ কমে ১৪৩.৭-এ দাঁড়িয়েছে। এই কম মূল্যস্ফীতির কারণেই ডিএ বৃদ্ধি ২ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত সাত বছরে সরকার সাধারণত ৩ থেকে ৪ শতাংশ হারে ডিএ বৃদ্ধি করেছে, যা এবারের তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে প্রতিবার অন্তত ৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। তাই এই কম বৃদ্ধি কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করতে পারে।
এই সংবাদের প্রাসঙ্গিকতা আরও বাড়ে যখন আমরা অষ্টম বেতন কমিশনের প্রেক্ষাপটে এটি বিবেচনা করি। গত ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫-এ সরকার অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা করে, যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর বেতন ও ভাতা সংশোধন করবে। সপ্তম বেতন কমিশন, যা ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল, সর্বনিম্ন বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকায় এবং সর্বোচ্চ বেতন ২,২৫,০০০ টাকায় উন্নীত করেছিল। অষ্টম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যার ফলে সর্বনিম্ন বেতন ৫১,৪৮০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিভিন্ন কর্তনের কারণে প্রকৃত বৃদ্ধি এতটা নাও হতে পারে।
এই ডিএ বৃদ্ধি সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি অপেক্ষাকৃত ছোট সুখবর হতে পারে। যেহেতু এটি হোলির আগে ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এটি উৎসবের সময় কিছুটা আর্থিক স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু যারা ৩ বা ৪ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করছিলেন, তাদের জন্য এটি হতাশাজনক হতে পারে। অতীতে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১৮ মাস ডিএ বৃদ্ধি স্থগিত ছিল। তখন তিনটি বৃদ্ধি বন্ধ থাকায় কর্মচারী ইউনিয়নগুলো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল। এবারও তারা আরও বেশি বৃদ্ধির দাবি জানাতে পারে।
এই বৃদ্ধি ঘোষণার জন্য সবাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। সাধারণত হোলির আগে জানুয়ারির ডিএ ঘোষণা করা হয়, যাতে কর্মচারীরা উৎসবের সময় সুবিধা পান। অন্যদিকে, জুলাইয়ের বৃদ্ধি দীপাবলির সময় ঘোষণা হয়। এবারও এই প্রথা মেনে মার্চের মাঝামাঝি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে ২ শতাংশ বৃদ্ধির খবরে অনেকে মনে করছেন, এটি তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যথেষ্ট নয়।
শেষ পর্যন্ত, অষ্টম বেতন কমিশনের আগে এই শেষ ডিএ বৃদ্ধি কর্মচারীদের জন্য কতটা স্বস্তি বয়ে আনবে, তা নির্ভর করছে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর। আগামী দিনে এই কমিশন বেতন কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে, তবে তার আগে এই সামান্য বৃদ্ধিই তাদের একমাত্র ভরসা। সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা এখন অপেক্ষায় আছেন—দেখা যাক, হোলির আগে তাদের জন্য কী সুখবর আসে!