What is an elevated expressway and its impact: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম Elevated Expressway। এই উড়াল মহাসড়কটি ঢাকা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা শহরের যানবাহন চলাচলকে দ্রুততর ও সহজতর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।এই Elevated Expressway-এর মোট দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার।
এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে শুরু হয়ে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে ৩১টি র্যাম্প থাকছে, যা মিলিয়ে এর মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। প্রকল্পটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রথম পর্যায় হল কাওলা থেকে বনানী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত, দ্বিতীয় পর্যায় বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত এবং তৃতীয় পর্যায় মগবাজার রেলক্রসিং থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত।
স্বাধীন বাংলাদেশ ! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবককে খাইয়ে-দাইয়ে পিটিয়ে হত্যা
২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই Elevated Expressway-এর ১১.৫ কিলোমিটার অংশের (বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত) উদ্বোধন করেন। পরের দিন থেকে এই অংশে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এই Expressway-তে গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। তবে প্রাথমিকভাবে কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত গতিসীমা রাখা হয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।এই Elevated Expressway-তে ৮ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে, যার মধ্যে রয়েছে বাস, মিনিবাস, সেডান, এসইউভি, নির্দিষ্ট ধরনের ট্রাক ও পিকআপ। তবে মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, তিন চাকার যানবাহন, সাইকেল এবং পথচারীদের এই Expressway-তে প্রবেশের অনুমতি নেই।Elevated Expressway-এর নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে মোট ১৩,৮৫৭ কোটি টাকা (প্রায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এর মধ্যে রয়েছে মূল নির্মাণ খরচ, জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, উপযোগিতা সেবা লাইন স্থানান্তর এবং পরামর্শ সেবার খরচ।
এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট ৫১%, চীনের শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেশন গ্রুপ ৩৪% এবং সাইনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড ১৫% শেয়ার ধারণ করছে।Elevated Expressway-এর নির্মাণের ফলে ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা শহরে গাড়ির গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ১০ কিলোমিটার। এই ধীর গতির কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা এবং ৫ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে একটি গবেষণায় দেখা গেছে।
Elevated Expressway চালু হওয়ার ফলে এই ক্ষতি অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।তবে Elevated Expressway নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাহাড়ি অঞ্চলে এই ধরনের নির্মাণকাজ করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পাহাড় কাটা এবং নিম্নমানের নির্মাণকাজের কারণে ঢাল অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় এই ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
Elevated Expressway-এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাবিয়ন (তার জালের বাক্স যা পাথর বা মাটি দিয়ে ভর্তি করা হয়) নির্মাণ, উন্মুক্ত পাথরের উপর শটক্রিট ও স্টিল রোপ নেট প্রয়োগ, এবং অস্থির পাথর ও মাটির গঠন স্থিতিশীল করতে সেলফ-ড্রিভেন অ্যাংকর ব্যবহার। এছাড়া ঢালের স্থায়িত্ব বাড়াতে স্থানীয় প্রজাতির গাছ লাগানোর মতো বায়োইঞ্জিনিয়ারিং কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে।Elevated Expressway নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূতাত্ত্বিক, জলতাত্ত্বিক এবং ভূ-প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান ও ডিজাইনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সড়ক কংগ্রেসের হিল রোড ম্যানুয়াল ২০২৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে, যাতে ঢাল স্থিতিশীলকরণ ও পাহাড় কাটার নতুন প্রোটোকল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই নতুন নির্দেশিকা অনুসরণ করে Elevated Expressway নির্মাণ করা হলে তার স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Elevated Expressway নির্মাণের ফলে ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর ফলে শহরের উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া এর ফলে শহরের বিভিন্ন শিল্প এলাকা যেমন সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের সাথে যোগাযোগ সহজতর হবে।তবে Elevated Expressway-এর সফল বাস্তবায়নের জন্য কিছু বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন। এছাড়া Expressway-এর আশেপাশে অপরিকল্পিত বসতি গড়ে ওঠা রোধ করাও জরুরি।
ঢাকার সেরা কলেজের তালিকা 2024: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্ভরযোগ্য গাইড
সামগ্রিকভাবে, ঢাকা Elevated Expressway বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক। এটি শুধু যানজট কমাবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে এর সফল বাস্তবায়ন ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি খাত এবং নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আশা করা যায়, এই Elevated Expressway ঢাকা শহরকে একটি আধুনিক, গতিশীল ও বাসযোগ্য মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।