End of 200 Years British Rule in India : ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দীর্ঘ দুই শতাব্দীর ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে এই দিনে। কিন্তু কেন ব্রিটিশরা তাদের সবচেয়ে মূল্যবান উপনিবেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হল? এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যেগুলো একত্রে ব্রিটিশদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করেছিল। এই প্রতিবেদনে আমরা সেই কারণগুলি বিশদভাবে আলোচনা করব।
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর থেকেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রতিরোধ গড়ে উঠতে থাকে। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই আন্দোলন সংগঠিত রূপ নেয়।মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস আন্দোলন ব্রিটিশদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। ১৯২০ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলন এবং ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এই আন্দোলনগুলো ব্যাপক জনসমর্থন পায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যুদ্ধের পর, ব্রিটেনের পক্ষে এত বড় একটি সাম্রাজ্য বজায় রাখা আর সম্ভব ছিল না। অর্থনৈতিক চাপ এবং যুদ্ধের পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্রিটিশদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করে।যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা ভারতীয় সৈন্যদের ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছিল। এতে ভারতীয়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং তারা নিজেদের শক্তি সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এছাড়া যুদ্ধের সময় জাপানের হাতে সিঙ্গাপুর, হংকং, বার্মা ও মালয়ের পতন ব্রিটিশ শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ করে।
১৯৪৬ সালের রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি বিদ্রোহ ব্রিটিশদের বুঝতে সাহায্য করে যে তারা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উপর আর নির্ভর করতে পারছে না। এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দেয় এবং তাদের প্রস্থানকে ত্বরান্বিত করে।বিদ্রোহীরা বোম্বাই, কলকাতা ও করাচির নৌঘাঁটিগুলো দখল করে নেয়। এতে ব্রিটিশরা বুঝতে পারে যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কমে যাচ্ছে। ফলে ভারত শাসন করা তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি উপনিবেশবাদ বিরোধী নীতি গ্রহণ করে। এই আন্তর্জাতিক চাপও ব্রিটিশদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করে।১৯৪১ সালের আটলান্টিক সনদে উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জাতিসংঘের চার্টারেও উপনিবেশগুলোর স্বশাসনের অধিকার স্বীকৃত হয়। ফলে ব্রিটেনের পক্ষে ভারতকে দীর্ঘদিন উপনিবেশ হিসেবে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ শাসনের সময় ভারতীয় সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল। শিক্ষিত ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করে এবং স্বশাসনের দাবি জানায়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন পরিচালনা করে।১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন চালু হয়। এতে ভারতীয়রা শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার অভিজ্ঞতা লাভ করে। ফলে তাদের মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি আরও জোরদার হয়।
ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার পেছনে একাধিক কারণ ছিল, যার মধ্যে স্বাধীনতা আন্দোলনের চাপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব, সামরিক বিদ্রোহ, আন্তর্জাতিক চাপ এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। এই কারণগুলির সম্মিলিত প্রভাব ব্রিটিশদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করেছিল এবং ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছিল।তবে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ব্রিটিশরা স্বেচ্ছায় ভারত ছেড়ে যায়নি। বরং ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও আন্দোলনের ফলেই তারা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস আন্দোলন, সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রাম এবং অন্যান্য নেতাদের অবদান ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
মন্তব্য করুন