Agnipath scheme Gorkhas: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নেপালি গোর্খা সৈন্য নিয়োগের দীর্ঘ ঐতিহ্য শেষ হতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক সম্পর্কে নতুন মোড় আসতে পারে। গত দুই শতাব্দী ধরে ভারতীয় সেনায় অসাধারণ সাহসিকতা ও দক্ষতার জন্য বিখ্যাত নেপালি গোর্খা সৈন্যদের নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তের ফলে সেই ঐতিহ্যবাহী প্রথার অবসান ঘটতে চলেছে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’ সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, নেপাল সরকার আর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গোর্খা সৈন্য নিয়োগের অনুমতি দেবে না। এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে নেপালের জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার উদ্দেশ্য। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত-নেপাল সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
গোর্খা সৈন্যদের ইতিহাস ১৮১৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় থেকে শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই তাদের অসাধারণ সাহসিকতা ও যুদ্ধ কৌশলের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বর্তমানে ভারতীয় সেনায় প্রায় ৩৫,০০০ নেপালি গোর্খা সৈন্য রয়েছে।গোর্খা সৈন্যদের বীরত্ব ও দক্ষতার কারণে তারা বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কারগিল যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধে তারা অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৩ জন গোর্খা সৈন্য পরমবীর চক্র পেয়েছেন, যা ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা।
নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্তের পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, নেপাল তার নাগরিকদের বিদেশি সেনাবাহিনীতে যোগদান করা নিরুৎসাহিত করতে চায়। দ্বিতীয়ত, নেপাল নিজের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে চায় এবং দক্ষ সৈন্যদের নিজের দেশেই রাখতে চায়। তৃতীয়ত, নেপাল মনে করে এই প্রথা তাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভ৮মত্বের পরিপন্থী।
যদিও এই সিদ্ধান্ত সরাসরি বাংলাদেশকে প্রভাবিত করে না, তবে এর পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি হ্রাস পেলে তা অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গোর্খা সৈন্যদের অভাবে ভারতীয় সেনার দক্ষতা কমে গেলে তা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
গোর্খা সৈন্য নিয়োগ বন্ধ হলে তা নেপালের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ প্রতি বছর প্রায় ৩০,০০০ নেপালি যুবক ভারতীয় সেনায় যোগদানের জন্য আবেদন করে। এর ফলে নেপালে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া ভারত থেকে নেপালে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স যায়, যা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, যদি ভারতের সামরিক খরচ বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার।
গোর্খা সৈন্যদের অভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কমে যেতে পারে। এর ফলে ভারতের সামরিক শক্তি হ্রাস পেতে পারে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ তার নিজস্ব সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে এর জন্য বাংলাদেশকে তার সামরিক বাজেট ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত-নেপাল সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি দুই দেশের মধ্যে নতুন ধরনের সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করতে পারে। যেমন, সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন ধরনের সহযোগিতা গড়ে উঠতে পারে।বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ ভারত ও নেপালের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে।
গোর্খা সৈন্য নিয়োগ বন্ধ হলে তা নেপালের সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কারণ অনেক নেপালি পরিবার প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে এই পেশায় যুক্ত। এর ফলে নেপালে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, যদি নেপাল থেকে অভিবাসন বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ নেপালি শ্রমিকরা কম মজুরিতে কাজ করতে রাজি হতে পারে।
যদিও বর্তমানে গোর্খা সৈন্য নিয়োগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ভারত ও নেপাল উভয় দেশই এই প্রথার গুরুত্ব উপলব্ধি করে। তবে এর জন্য দুই দেশকে নতুন ধরনের চুক্তি করতে হবে, যাতে উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়।বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ ভারতের সাথে নতুন ধরনের সামরিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারে। যেমন, যৌথ সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ইত্যাদি।
মন্তব্য করুন