একাদশে ফেল করলেও দ্বাদশে ভর্তির সুযোগ, নতুন নিয়মে চমক দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার!

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বড় সুখবর হতে চলেছে। এখন থেকে একাদশ শ্রেণিতে পাশ না করলেও ছাত্রছাত্রীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা…

Avatar

 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বড় সুখবর হতে চলেছে। এখন থেকে একাদশ শ্রেণিতে পাশ না করলেও ছাত্রছাত্রীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে। তবে এই সুযোগ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এই নতুন নিয়মের ফলে অনেক শিক্ষার্থী, যারা একাদশে ব্যর্থ হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিল, তারা আবার সুযোগ পাবে তাদের শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে গেলে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ শ্রেণিতে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করেছে। এরপর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতেও এই পদ্ধতি কার্যকর হবে। এই নতুন নিয়মে একাদশ শ্রেণির পড়াশোনা দুটি সেমিস্টারে ভাগ করা হয়েছে—প্রথমটি নভেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি মার্চে। যদি কোনো ছাত্রছাত্রী এই দুই সেমিস্টারের পরীক্ষায় পাশ করতে না পারে, তবুও তারা দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে শর্ত হলো, তাদের একাদশ শ্রেণির ব্যাকলগ পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে। এই ব্যাকলগ পরীক্ষা সাধারণত স্কুলগুলো ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজন করবে। এরপর তারা দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এই নিয়মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে একধাপে পাশ করার চাপ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

নতুন এই সিদ্ধান্তের পিছনে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষানীতি ২০২৩-এর প্রভাব রয়েছে। গত বছর আগস্টে প্রকাশিত এই নীতিতে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার বোঝা কমিয়ে ধাপে ধাপে মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার মান বাড়ানো। সংসদের প্রেসিডেন্ট চিরঞ্জিব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও নমনীয় এবং সুযোগসমৃদ্ধ হবে। যারা একবারে পাশ করতে না পারে, তারাও হাল ছাড়বে না।” এছাড়া, দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে একাদশ ও দ্বাদশ—দুই শ্রেণির সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করা হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের একটি পরীক্ষার ওপর নির্ভরতা কমবে।

এই নিয়মে আরও কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য জানা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমিস্টারে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) থাকবে, আর দ্বিতীয় সেমিস্টারে থাকবে বর্ণনামূলক ও সংক্ষিপ্ত উত্তরের প্রশ্ন। এই দুই ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিকে মূল্যায়ন করা হবে। দ্বাদশ শ্রেণিতেও একইভাবে সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। তবে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা তৃতীয় ও চতুর্থ সেমিস্টারের পর অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে প্রতিটি বিষয়ে ন্যূনতম ৩০% নম্বর পেতে হবে। এছাড়া, যেসব ছাত্রছাত্রী একাদশে ব্যর্থ হয়, তাদের জন্য সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। এই পরীক্ষায় পাশ না করলে দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশিত হবে না।

শিক্ষার্থীদের জন্য এই নিয়ম বোঝা খুব জরুরি। সহজ কথায় বলতে গেলে, এখন থেকে একাদশে ফেল করলেও সব শেষ নয়। তারা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তে পারবে, কিন্তু পিছিয়ে থাকা পরীক্ষাগুলো পরে পাশ করতে হবে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক মনে করেন, এর ফলে ড্রপআউটের হার কমবে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই নিয়মে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তাই স্কুলগুলোকে এই নতুন পদ্ধতি সঠিকভাবে কার্যকর করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আরও একটি তথ্য জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ৭.৫ থেকে ৮.২ লক্ষ ছাত্রছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত বছর (২০২৪) ৭,৫৫,৩২৪ জন পরীক্ষার্থী ছিল। এত বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য এই নতুন নিয়ম একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এছাড়া, ২০২৫ সালে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ৩ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, এই নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুযোগের দরজা খুলে দিচ্ছে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে স্কুল, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর। সবাই মিলে এই পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে পারলে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইতিহাস তৈরি হতে পারে।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম