Exercise for nerve disease: নার্ভের রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যায়াম করা খুবই উপকারী হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ব্যায়াম করলে নার্ভের রোগের লক্ষণগুলি কমে যায় এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে এরোবিক এবং শক্তি বৃদ্ধিকারী ব্যায়াম নার্ভের রোগীদের জন্য খুবই কার্যকর।
নার্ভের রোগের মধ্যে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি একটি সাধারণ সমস্যা, যা হাত-পায়ে ব্যথা এবং অসাড়তা সৃষ্টি করে। আমেরিকায় প্রায় ২ কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন। এছাড়াও ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, সায়াটিকা ইত্যাদি নার্ভের রোগ বর্তমানে বেশ প্রচলিত। এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যথা নিরাময়কারী ওষুধ ব্যবহার করা হলেও সেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই চিকিৎসকরা এখন ব্যায়ামকে একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখছেন।ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ তীব্রতার এরোবিক ব্যায়াম করলে পার্কিনসন্স রোগের ক্ষেত্রে ডোপামিন উৎপাদনকারী নিউরন সংরক্ষিত হয়।
Diabetes and Snacking: চাঞ্চল্যকর তথ্য! ডায়াবেটিস রোগীরা মুড়ি খেলে কী
৬ মাস ব্যায়াম করার পর দেখা গেছে এই নিউরনগুলি আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং বেশি ডোপামিন উৎপাদন করছে। ডোপামিন হল একটি রাসায়নিক যা মস্তিষ্কের কোষগুলিকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে।আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত এরোবিক এবং শক্তি বৃদ্ধিকারী ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিক পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির রোগীদের লক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এই গবেষণায় ১৭ জন রোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৬৩.৩% রোগী সম্পূর্ণ ১০ সপ্তাহের ব্যায়াম প্রোগ্রাম শেষ করতে পেরেছিলেন। ফলাফলে দেখা গেছে তাদের ব্যথার মাত্রা এবং নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
নার্ভের রোগীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। এরোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো ইত্যাদি রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং এনডরফিন নির্গমন করে যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং ব্যায়াম পেশী এবং জয়েন্টগুলিকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।বিশেষজ্ঞরা নার্ভের রোগীদের জন্য নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলি সুপারিশ করেন:
১. সাইড লেগ রেইজ:
একটি চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে একটি পা পাশে তুলুন এবং ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তারপর ধীরে ধীরে নামিয়ে আনুন। অন্য পা দিয়েও একই প্রক্রিয়া করুন।
২. কাফ রেইজ:
একটি চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে দুই পায়ের গোড়ালি মাটি থেকে তুলুন যাতে আপনি আঙ্গুলের ডগায় দাঁড়ান। তারপর ধীরে ধীরে নেমে আসুন। ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
৩. কাফ স্ট্রেচ:
একটি পা পিছনে রেখে সামনের পা হাঁটু থেকে সামান্য বাঁকান। পিছনের পায়ের গোড়ালি মাটিতে রেখে সামনে ঝুঁকুন। ১৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। প্রতি পায়ে ৩ বার করুন।
৪. হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ:
একটি চেয়ারের কিনারায় বসুন। একটি পা সামনে প্রসারিত করে রাখুন। অন্য পায়ের হাঁটু বাঁকিয়ে পা মাটিতে রাখুন। বুক সোজা পা’র দিকে ঝুঁকান। ১৫-২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। প্রতি পায়ে ৩ বার করুন।
৫. রিকাম্বেন্ট বাইক:
এটি একটি ভালো এরোবিক ব্যায়াম যা ভারসাম্য সমস্যা থাকা রোগীদের জন্যও নিরাপদ। এতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেই।তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারণ প্রতিটি রোগীর অবস্থা আলাদা হতে পারে। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যায়াম নির্ধারণ করে দিতে পারেন।নিয়মিত ব্যায়াম করলে নার্ভের রোগীরা নানাভাবে উপকৃত হতে পারেন:
• ব্যথা ও অস্বস্তি কমে:
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ব্যায়াম করলে নার্ভের রোগীদের ব্যথা এবং অন্যান্য অস্বস্তিকর লক্ষণগুলি কমে যায়। একটি গবেষণায় ১০ সপ্তাহ ব্যায়াম করার পর রোগীদের সর্বোচ্চ ব্যথার মাত্রা এবং নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
• রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে:
নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি বিশেষ করে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
• রক্ত সঞ্চালন বাড়ে:
ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এর ফলে নার্ভগুলি পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত নার্ভগুলি আরোগ্য লাভ করতে পারে।
• পেশীর শক্তি বাড়ে:
নিয়মিত ব্যায়াম করলে পেশীর শক্তি বাড়ে। এর ফলে হাঁটাচলা এবং ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়।• মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে: ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে এনডরফিন নামক হরমোন নির্গত হয় যা মেজাজ ভালো রাখে এবং উদ্বেগ কমায়। এটি নার্ভের রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
• ঘুমের মান উন্নত হয়:
নিয়মিত ব্যায়াম করলে ঘুমের মান উন্নত হয়। ভালো ঘুম নার্ভের রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।• ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: অতিরিক্ত ওজন নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তবে ব্যায়াম করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন:
• ধীরে ধীরে শুরু করুন: হঠাৎ করে কঠিন ব্যায়াম শুরু করবেন না। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ান।
• নিয়মিত বিরতি নিন: ব্যায়াম করার সময় মাঝে মাঝে বিরতি নিন। ক্লান্তি বোধ হলে বিশ্রাম নিন।
• পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ব্যায়াম করার আগে, পরে এবং মাঝে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
পা ভাঙ্গা প্লাস্টার: কতদিন পর খুলবেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
• উপযুক্ত পোশাক ও জুতা পরুন: আরামদায়ক পোশাক এবং ভালো মানের জুতা পরুন যাতে পায়ে আঘাত না লাগে।
• গরম ও ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন: অত্যধিক গরম বা ঠান্ডায় ব্যায়াম করা এড়িয়ে চলুন।
• নিয়মিত পা পরীক্ষা করুন: ব্যায়াম করার পর পা পরীক্ষা করুন। কোনো ক্ষত বা ফোস্কা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।