পেটের অ্যাসিডঘটিত সমস্যা, যেমন গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), পেপটিক আলসার বা বুকজ্বালা, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের এক সাধারণ স্বাস্থ্য উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। এই ধরণের সমস্যা লাঘব করতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে ওষুধগুলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) শ্রেণীর ওষুধ অন্যতম। এক্সিয়াম মাপস ২০ (Exium MUPS 20) হলো এই শ্রেণীর একটি অত্যাধুনিক ও বহুল ব্যবহৃত ওষুধ, যার মূল উপাদান হলো এসোমেপ্রাজোল (Esomeprazole)। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে বুকজ্বালা, আলসার এবং অ্যাসিড সম্পর্কিত অন্যান্য অস্বস্তি থেকে দীর্ঘস্থায়ী মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
এক্সিয়াম মাপস ২০ হলো একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। এর মূল উপাদান এসোমেপ্রাজোল, যা পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষের হাইড্রোজেন-পটাশিয়াম অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেটেজ (H+/K+ ATPase) এনজাইম সিস্টেম বা অ্যাসিড পাম্পকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর ফলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ কার্যকরভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এসোমেপ্রাজোলকে তাদের জরুরি ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা এর কার্যকারিতা এবং সুরক্ষার প্রমাণ দেয়। এই ওষুধটি শুধুমাত্র রোগের লক্ষণ উপশমই করে না, বরং খাদ্যনালীর ক্ষত নিরাময় এবং আলসারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর “মাপস” (MUPS – Multiple-Unit Pellet System) প্রযুক্তি সাধারণ ট্যাবলেটের তুলনায় আরও উন্নত এবং কার্যকর ফলাফল নিশ্চিত করে।
এক্সিয়াম মাপস ২০ (Exium MUPS 20) কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
এক্সিয়াম মাপস ২০ একটি আধুনিক প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) ওষুধ। এর জেনেটিক নাম এসোমেপ্রাজোল ম্যাগনেসিয়াম ট্রাইহাইড্রেট। এই ওষুধটি মূলত পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আমাদের পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণে থাকা প্যারাইটাল কোষগুলো থেকে অ্যাসিড তৈরি হয়, যা হজমে সাহায্য করে। কিন্তু যখন এই অ্যাসিড অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হয় বা খাদ্যনালীতে উঠে আসে, তখন বুকজ্বালা, টক ঢেকুর এবং অন্যান্য গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়।
কার্যকারিতার মূল কৌশল: প্রোটন পাম্প নিষ্ক্রিয়করণ
এক্সিয়াম মাপস ২০-এর মূল উপাদান, এসোমেপ্রাজোল, পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষে অবস্থিত H+/K+ ATPase নামক এনজাইমকে (যা “প্রোটন পাম্প” নামে পরিচিত) বাধা প্রদান করে। এই প্রোটন পাম্পই হলো অ্যাসিড তৈরির প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ। ড্রাগব্যাঙ্ক (DrugBank) এর তথ্য অনুযায়ী, এসোমেপ্রাজোল এই পাম্পের সাথে অপরিবর্তনীয়ভাবে আবদ্ধ হয়ে এটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে, যতক্ষণ না শরীর নতুন প্রোটন পাম্প তৈরি করছে, ততক্ষণ অ্যাসিড উৎপাদন বন্ধ থাকে। এই কারণেই এটি দীর্ঘ সময় ধরে (২৪ ঘণ্টার বেশি) কার্যকর থাকে এবং অ্যাসিডঘটিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
মাপস (MUPS) প্রযুক্তির বিশেষত্ব
“MUPS” এর পূর্ণরূপ হলো “মাল্টিপল-ইউনিট পিলেট সিস্টেম” (Multiple-Unit Pellet System)। এটি একটি উন্নত ফার্মাসিউটিক্যাল প্রযুক্তি। সাধারণ ট্যাবলেটের পরিবর্তে, এক্সিয়াম মাপস ২০ ট্যাবলেটটি অসংখ্য ছোট ছোট দানাদার পিলেট (pellet) দ্বারা গঠিত।
এই প্রযুক্তির সুবিধাগুলো হলো:
- দ্রুত কার্যকারিতা: ট্যাবলেটটি খাওয়ার পর পাকস্থলীতে গিয়ে দ্রুত গলে যায় এবং ছোট ছোট পিলেটগুলো ছড়িয়ে পড়ে। এই পিলেটগুলোর ওপর একটি বিশেষ আস্তরণ (enteric coating) থাকে, যা পাকস্থলীর অ্যাসিড থেকে মূল উপাদানকে রক্ষা করে।
- সুষম শোষণ: পিলেটগুলো পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে ওষুধটি আরও ভালোভাবে এবং নির্দিষ্ট হারে শোষিত হয়। এর ফলে ওষুধের কার্যকারিতা আরও নির্ভরযোগ্য হয়।
- ডোজ ডাম্পিং-এর ঝুঁকি কম: কিছু ক্ষেত্রে, সাধারণ ট্যাবলেট পাকস্থলীতে একবারে পুরো ওষুধ ছেড়ে দিতে পারে, যাকে “ডোজ ডাম্পিং” বলা হয়। মাপস প্রযুক্তির কারণে এই ঝুঁকি প্রায় থাকে না বললেই চলে, যা ওষুধটিকে আরও নিরাপদ করে তোলে।
যে সব রোগের চিকিৎসায় এক্সিয়াম মাপস ২০ ব্যবহৃত হয়
এক্সিয়াম মাপস ২০ বিভিন্ন অ্যাসিড-সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। নিচে এর প্রধান ব্যবহারগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)
GERD একটি হজমজনিত রোগ যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড বারবার খাদ্যনালীতে (Esophagus) উঠে আসে। এর ফলে বুকজ্বালা, টক ঢেকুর, মুখে অ্যাসিডিক স্বাদ এবং কখনো কখনো কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এক্সিয়াম মাপস ২০ অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে এই লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দেয় এবং অ্যাসিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যনালীর আস্তরণকে নিরাময় হতে সাহায্য করে। বিশ্ব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সংস্থার (World Gastroenterology Organisation) মতে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার প্রায় ১০-২০% মানুষ GERD-এ আক্রান্ত।
ইরোসিভ এসোফ্যাগাইটিস (Erosive Esophagitis)
GERD যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে খাদ্যনালীর ভেতরের আস্তরণে ক্ষত বা প্রদাহ হতে পারে, যাকে ইরোসিভ এসোফ্যাগাইটিস বলা হয়। এক্সিয়াম মাপস ২০ এই ক্ষত নিরাময়ে এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে অত্যন্ত কার্যকর।
পেপটিক আলসার ডিজিজ (Peptic Ulcer Disease)
পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে (ডিওডেনাম) যখন অ্যাসিডের কারণে ক্ষত তৈরি হয়, তখন তাকে পেপটিক আলসার বলে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (Helicobacter pylori) নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন-এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার।
- এইচ. পাইলোরি নির্মূল: এইচ. পাইলোরি দ্বারা সৃষ্ট ডিওডেনাল আলসারের চিকিৎসায়, এক্সিয়াম মাপস ২০-কে দুটি অ্যান্টিবায়োটিক (সাধারণত অ্যামোক্সিসিলিন এবং ক্লারিথ্রোমাইসিন) এর সাথে একত্রে দেওয়া হয়, যা “ট্রিপল থেরাপি” নামে পরিচিত।
- NSAID-জনিত আলসার প্রতিরোধ: যারা আর্থ্রাইটিস বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার জন্য নিয়মিত NSAID জাতীয় ওষুধ সেবন করেন, তাদের ক্ষেত্রে পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এক্সিয়াম মাপস ২০ এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
জলিঞ্জার-এলিসন সিনড্রোম (Zollinger-Ellison Syndrome)
এটি একটি বিরল রোগ যেখানে অগ্ন্যাশয় বা ডিওডেনামে এক বা একাধিক টিউমার (গ্যাস্ট্রিনোমাস) তৈরি হয়। এই টিউমারগুলো থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা পাকস্থলীকে অস্বাভাবিক পরিমাণে অ্যাসিড তৈরি করতে উদ্দীপিত করে। এক্সিয়াম মাপস ২০ এই অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।
পরিসংখ্যান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য
অ্যাসিড-সম্পর্কিত রোগ বিশ্বব্যাপী একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা।
- পেপটিক আলসার: গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (Global Burden of Disease) স্টাডি ২০১৯-এর একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী পেপটিক আলসার রোগের প্রকোপ কমলেও, দক্ষিণ এশিয়ায় এর হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং সহজলভ্য ব্যথানাশক ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।
- GERD-এর প্রকোপ: এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষ করে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে, GERD-এর প্রকোপ বাড়ছে। একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা যা জার্নাল অফ নিউরোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড মোটিলিটি-তে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় যে এশিয়ায় GERD-এর হার ৫.২% থেকে ৮.৫% পর্যন্ত পৌঁছেছে।
রোগের নাম | প্রধান লক্ষণ | এক্সিয়াম মাপস ২০-এর ভূমিকা |
GERD | বুকজ্বালা, টক ঢেকুর, বুকে ব্যথা | অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে লক্ষণ উপশম করে |
ইরোসিভ এসোফ্যাগাইটিস | গিলতে কষ্ট, খাদ্যনালীতে ক্ষত | খাদ্যনালীর ক্ষত নিরাময় করে ও প্রতিরোধ করে |
পেপটিক আলসার | পেটের উপরের অংশে ব্যথা, বমি, ওজন হ্রাস | আলসার নিরাময় এবং H. pylori নির্মূলে সহায়তা করে |
জলিঞ্জার-এলিসন সিনড্রোম | গুরুতর আলসার, ডায়রিয়া | অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে |
সেবনবিধি ও ডোজ
এক্সিয়াম মাপস ২০ ট্যাবলেটের ডোজ রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
সাধারণত, এটি দিনে একবার, খাবারের কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে খালি পেটে সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ট্যাবলেটটি চিবিয়ে বা ভেঙে না খেয়ে, এক গ্লাস জল দিয়ে গিলে ফেলা উচিত।
- GERD-এর জন্য: সাধারণত প্রতিদিন ২০ মিগ্রা ডোজ ৪ সপ্তাহের জন্য দেওয়া হয়।
- ইরোসিভ এসোফ্যাগাইটিস নিরাময়ে: প্রতিদিন ২০ বা ৪০ মিগ্রা ডোজ ৪-৮ সপ্তাহের জন্য দেওয়া হতে পারে।
- এইচ. পাইলোরি নির্মূলের জন্য: প্রতিদিন ২০ মিগ্রা এক্সিয়াম মাপস ২০, দিনে দুবার অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে ৭-১০ দিনের জন্য দেওয়া হয়।
- জলিঞ্জার-এলিসন সিনড্রোম: এক্ষেত্রে ডোজ রোগীর অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় এবং তা অনেক বেশি হতে পারে।
যদি কোনো ডোজ নিতে ভুলে যান, তবে মনে পড়ার সাথে সাথে সেটি গ্রহণ করুন। কিন্তু পরবর্তী ডোজের সময় কাছাকাছি হলে, ভুলে যাওয়া ডোজটি এড়িয়ে যান। দুটি ডোজ একসাথে গ্রহণ করবেন না।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা
যেকোনো ওষুধের মতোই, এক্সিয়াম মাপস ২০-এরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যদিও সবার ক্ষেত্রে এগুলি দেখা যায় না, তবে কিছু সাধারণ এবং গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি।
সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত হালকা এবং কিছুদিন পর தானாகவே চলে যায়।
- মাথাব্যথা
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- পেট ব্যথা বা গ্যাস
- বমি বমি ভাব বা বমি
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এর মতে, এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করা এবং বিশ্রাম নেওয়া উচিত। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (বিরল)
কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা ঘটলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
- গুরুতর ডায়রিয়া: যদি জলযুক্ত এবং রক্তমিশ্রিত ডায়রিয়া হয়, তবে এটি ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল (Clostridium difficile) সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
- কিডনির সমস্যা: প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবে রক্ত, জ্বর বা শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিলে তা কিডনির প্রদাহের (Acute Interstitial Nephritis) লক্ষণ হতে পারে।
- ম্যাগনেসিয়ামের অভাব: দীর্ঘ সময় ধরে (সাধারণত এক বছরের বেশি) এই ওষুধ সেবনের ফলে রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। এর ফলে মাংসপেশিতে খিঁচুনি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে।
- হাড় ভাঙার ঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে, নিতম্ব, কব্জি বা মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার ঝুঁকি সামান্য বাড়তে পারে।
- ভিটামিন বি১২-এর অভাব: শরীর পাকস্থলীর অ্যাসিডের সাহায্যে ভিটামিন বি১২ শোষণ করে। অ্যাসিড কমে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে এই ভিটামিনের অভাব হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি, স্নায়ুবিক সমস্যা বা জিহ্বায় ঘা হতে পারে।
পাবমেড সেন্ট্রাল (PubMed Central)-এ প্রকাশিত একাধিক গবেষণায় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরগুলির দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে এই ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
অন্যান্য ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া (Drug Interactions)
এক্সিয়াম মাপস ২০ কিছু ওষুধের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আপনি যদি অন্য কোনো ওষুধ সেবন করেন, তবে তা আপনার চিকিৎসককে অবশ্যই জানান।
- অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ: কেটোকোনাজোল বা ইট্রাকোনাজোলের মতো ওষুধের শোষণের জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিড প্রয়োজন। এক্সিয়াম মাপস ২০ এদের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ: ওয়ারফারিন বা ক্লোপিডোগ্রেলের মতো ওষুধের সাথে এটি সেবন করলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- এইচআইভি-এর ওষুধ: অ্যাটাজানাভির বা নেলফিনাভিরের মতো ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
- ডায়াজিপাম: এই ওষুধের প্রভাব শরীরে দীর্ঘ সময় থাকতে পারে।
- ডিগোক্সিন: হার্টের এই ওষুধের শোষণ বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় এক্সিয়াম মাপস ২০ ব্যবহারের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তাই, গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির চেয়ে সুবিধা বেশি হলেই চিকিৎসক এই ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এই বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।
- স্তন্যদান: ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (NCBI) এর ল্যাক্টমেড (LactMed) ডেটাবেস অনুযায়ী, এসোমেপ্রাজোল অল্প পরিমাণে বুকের দুধে নিঃসৃত হয়। তবে এটি শিশুর জন্য ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
এক্সিয়াম মাপস ২০ (Exium MUPS 20) অ্যাসিড-সম্পর্কিত রোগ, যেমন GERD, পেপটিক আলসার এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার চিকিৎসায় একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য ওষুধ। এর আধুনিক মাপস (MUPS) প্রযুক্তি ওষুধের সুষম শোষণ এবং দ্রুত কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। তবে, এটি একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি সেবন করা বা ডোজ পরিবর্তন করা উচিত নয়। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরি। সঠিক ব্যবহার এবং সতর্কতার মাধ্যমে এই ওষুধটি অ্যাসিডঘটিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।