Santiniketan Spring Festival: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের বসন্তোৎসব উদযাপিত হবে ১১ মার্চ ২০২৫ (মঙ্গলবার, ২৬ শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ)। দোল পূর্ণিমার দিন (১৪ মার্চ) নয়, বরং এর দুদিন আগে এই উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উৎসবে শুধুমাত্রবিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রাক্তনীওআশ্রমিকদেরঅংশগ্রহণ অনুমোদিত থাকবে। বহিরাগত দর্শক বা পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে।
বসন্তোৎসবের তারিখ ও স্থান: ২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্য
তারিখ | স্থান | অংশগ্রহণের নিয়ম |
১১ মার্চ ২০২৫ | গৌর প্রাঙ্গণ, শান্তিনিকেতন | কেবল বিশ্বভারতীর সদস্যদের জন্য |
এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শান্তিনিকেতনের সুরক্ষা। গত কয়েক বছরে দোলের দিন অপ্রতুল ব্যবস্থাপনা, ভিড় ও আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
ICC Champions Trophy 2025: পাকিস্তানে ৮ দলের মহারণ শুরু ফেব্রুয়ারিতে!
বসন্তোৎসবের ঐতিহাসিক পটভূমি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে ১৯০৭ সালে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর “ঋতু-উৎসব” হিসাবে এই অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ফাল্গুনী পূর্ণিমায় আনুষ্ঠানিকভাবে “বসন্তোৎসব” চালু করেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতি, সংগীত ও নৃত্যের মাধ্যমে বসন্তের আগমন উদযাপন।
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন:
১৯০৭–১৯৫০: মাত্র ৫০০–৭০০ জনের অংশগ্রহণ
২০১৯: ২.৫ লক্ষ দর্শকের ভিড়
২০২০–বর্তমান: করোনা ও নিরাপত্তার কারণে সীমিত আয়োজন
২০২৫ সালের নিয়মাবলী: কী পরিবর্তন হলো?
১. প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা:
বহিরাগত দর্শক, পর্যটক বা মিডিয়া প্রতিনিধিদের জন্য উৎসবস্থল বন্ধ।
শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আইডি ধারীরাই অংশ নিতে পারবেন।
২. আয়োজনের ধরন:
১০ মার্চ সন্ধ্যা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে।
১১ মার্চ সকালে শান্তিনিকেতন বাড়ি থেকে শোভাযাত্রা বের হবে।
রবীন্দ্রসংগীত, নৃত্য ও কবিতাপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন।
৩. রঙ খেলার নিয়ম:
পূর্বের মতো আবির ব্যবহার হবে, তবে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
অ্যালকোহল বা অশালীন আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি।
Republic Day: ২৬ জানুয়ারি কেন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়?
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটনশিল্পের প্রভাব
বসন্তোৎসব ও পৌষমেলাকে কেন্দ্র করে শান্তিনিকেতনের হোটেল ও দোকানপাটে বছরের ৬০% আয় হতো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে:
বোলপুর হোটেল মালিক সমিতি ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
স্থানীয় দোকানদাররা বিকল্প আয়োজনের দাবি তুলেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অনিল কোনার (শান্তিনিকেটন ট্রাস্ট): “বিশ্বভারতীর নিজস্ব উৎসব। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত”।
অমিতরসূদন ভট্টাচার্য (রবীন্দ্র গবেষক): “দোলের দিনের ভিড় এড়াতে তারিখ পরিবর্তন যুক্তিযুক্ত”।
কেন এই পরিবর্তন?
১. ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট: ২০২৩ সালে শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ভিড়ে স্থাপত্যের ক্ষতি রোধই মূল উদ্দেশ্য।
২. অতীতের অভিজ্ঞতা:
২০১৯ সালে ২.৫ লক্ষ দর্শকের ভিড়ে সৃষ্ট হয়েছিল অরাজকতা।
মহিলা শিক্ষার্থীদের ওপর অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ।
বসন্তোৎসবের ঐতিহ্য বনাম আধুনিক চ্যালেঞ্জ
ঐতিহ্য | আধুনিক সমস্যা |
রবীন্দ্রসংগীত-নৃত্যের মাধ্যমে প্রকৃতি উদযাপন | পর্যটকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ |
হলুদ বসন্তী পোশাকের সমারোহ | মদ্যপান ও ভিড়ের কারণে নিরাপত্তাহীনতা |
শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ | ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা |
বসন্তোৎসব ২০২৫ শান্তিনিকেতনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয়োজনের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যদিও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন থাকছে, তবুও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই সমর্থন করছেন। আসন্ন বছরে উৎসবের পরিবর্তিত রূপ কীভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়, তা সকলের কাছেই পর্যবেক্ষণের বিষয়।