ভারতীয় মান ব্যুরো (বিআইএস) দিল্লিতে আমাজন এবং ফ্লিপকার্টের গুদামে দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা মূল্যের আইএসআই মার্কবিহীন বা নকল আইএসআই লেবেলযুক্ত পণ্য বাজেয়াপ্ত করেছে। গত ১৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে পরিচালিত এই অভিযানে আমাজন থেকে গীজার, ফুড মিক্সার সহ ৩,৫০০টিরও বেশি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং ফ্লিপকার্টের সহযোগী সংস্থা থেকে ৫৯০ জোড়া স্পোর্টস জুতা জব্দ করা হয়েছে।
দিল্লির মোহন কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় অবস্থিত আমাজন সেলার্স প্রাইভেট লিমিটেডের গুদামে চালানো অভিযানে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যের পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এসব পণ্যের অধিকাংশই হয় বাধ্যতামূলক আইএসআই মার্ক ছাড়াই বিক্রির জন্য প্রস্তুত ছিল অথবা নকল আইএসআই সার্টিফিকেশন লেবেল সংযুক্ত করা হয়েছিল। একই সময়ে, দিল্লির ত্রিনগর এলাকায় ফ্লিপকার্টের সহযোগী সংস্থা ইনস্টাকার্ট সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের গুদামে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫৯০ জোড়া স্পোর্টস জুতা জব্দ করা হয়, যেগুলিতে বাধ্যতামূলক আইএসআই মার্ক ছিল না এবং উৎপাদনের তারিখও উল্লেখ করা ছিল না।
উল্লেখ্য, দিল্লিতে এই অভিযান চালানোর আগে গত সপ্তাহে তামিলনাড়ুতেও একই ধরনের অভিযান চালানো হয়েছিল, যেখানে বিআইএস কর্মকর্তারা উভয় সংস্থার গুদামে আইএসআই মার্কবিহীন পণ্য সংরক্ষণ, বিক্রয় ও প্রদর্শনের প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, গত মাসে দিল্লি, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, লখনউ এবং শ্রীপেরুম্বুদুরসহ বিভিন্ন স্থানে এধরনের অভিযান চালানো হয়েছে।
ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের বিভিন্ন নিয়ামক সংস্থা এবং মন্ত্রণালয় ৭৬৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেশন জারি করেছে। বিআইএস আইন, ২০১৬ অনুযায়ী, বিআইএস থেকে বৈধ লাইসেন্স বা কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট (CoC) ছাড়া এইসব পণ্য উৎপাদন, আমদানি, বিতরণ, বিক্রয়, ভাড়া, লিজ, সংরক্ষণ বা প্রদর্শন (বিক্রয়ের জন্য) করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইন লঙ্ঘন করলে জরিমানা, কারাদণ্ড বা উভয় শাস্তিই হতে পারে।
আমাজন এবং ফ্লিপকার্ট ভারতের ই-কমার্স বাজারে প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। বেইন কনসাল্টেন্সির অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের ই-কমার্স বাজারের মূল্য ছিল প্রায় ৫৭ থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি ১৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে।
এই গুদাম তল্লাশি ও পণ্য বাজেয়াপ্তকরণ আমাজন এবং ফ্লিপকার্টের জন্য নতুন নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে1। গত বছর সেপ্টেম্বরে একটি অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তে দেখা গিয়েছিল যে, এই দুই সংস্থা তাদের প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট কিছু বিক্রেতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া, ২০২১ সালে রয়টার্সের একটি অনুসন্ধানে অভ্যন্তরীণ কোম্পানির নথি উদ্ধৃত করে দেখানো হয়েছিল যে, আমাজন বছরের পর বছর ধরে ছোট বিক্রেতা গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ভারতীয় নিয়ম-কানুন এড়িয়ে চলেছিল। তবে আমাজন এ ধরনের কোনো অনিয়ম অস্বীকার করেছে।
একজন ফ্লিপকার্ট মুখপাত্র জানিয়েছেন, “একটি মার্কেটপ্লেস হিসেবে আমরা স্থানীয় ভারতীয় বিক্রেতাদের সাথে কাজ করি সচেতনতা বাড়াতে এবং সমস্ত প্রযোজ্য আইন মেনে চলতে। প্ল্যাটফর্মে বিক্রেতারা যে লিস্টিং করেন তা পর্যালোচনা করার জন্য আমাদের বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া রয়েছে, এবং আমরা নিয়মিত অডিটও পরিচালনা করি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে”।
অন্যদিকে, আমাজনের একজন মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন যে, মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের অবশ্যই সমস্ত প্রাসঙ্গিক আইন, নিয়ম এবং আমাজনের নীতি মেনে চলতে হবে তাদের পণ্য তালিকাভুক্ত করার সময়, যার মধ্যে নকল পণ্য বিক্রি না করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। “আমরা সক্রিয়ভাবে ব্যবস্থা নিই অনিরাপদ পণ্য তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে বাধা দিতে এবং আমাদের স্টোর নিরন্তর পর্যবেক্ষণ করি। যদি আমরা এমন কোনো পণ্য আবিষ্কার করি যা আমাদের স্বয়ংক্রিয় চেক এড়িয়ে গেছে, আমরা দ্রুত সমস্যাটি সমাধান করি এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করি,” মুখপাত্র জানিয়েছেন।
বিআইএস-এর এই ধারাবাহিক অভিযান দেশজুড়ে নিম্নমানের এবং নকল পণ্যের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক অভিযানের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যেখানে পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করা আরও চ্যালেঞ্জিং, সেখানে এই ধরনের অভিযান ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি আমাজন তার ব্র্যান্ড প্রোটেকশন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে কোম্পানি নকল পণ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছে। তারা দাবি করেছে যে গত বছর ১৫ মিলিয়নেরও বেশি নকল পণ্য শনাক্ত করে নষ্ট করা হয়েছে। আমাজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের প্ল্যাটফর্মে পণ্য তালিকা নিরন্তর পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাব্য নকল এবং নিয়মবিরোধী আইটেম শনাক্ত করার জন্য।