First Bengali item song by Pulak Bandopadhyay: বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে ‘আইটেম সং’ এর ধারণাটি নতুন নয়। তবে এর সূচনা কোথায় এবং কে প্রথম এই ধরনের গান লিখেছিলেন, তা অনেকেরই অজানা। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম ‘আইটেম সং’ হিসেবে পরিচিত “আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না” গানটি লিখেছিলেন বিখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “প্রথম কদম ফুল” চলচ্চিত্রের জন্য এই গানটি রচনা করা হয়েছিল। গানটি তখনকার সময়ে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এবং বাংলা চলচ্চিত্রে একটি নতুন ধারার সূচনা করেছিল।
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন প্রথিতযশা ভারতীয় বাঙালি সুরকার ও গীতিকার। তিনি ১৯৩১ সালের ২ মে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবদ্দশায় তিনি বাংলা চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।”আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না” গানটি বাংলা চলচ্চিত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। এই গানটি ছিল মূলত একটি হাস্যরসাত্মক গান, যা চলচ্চিত্রের মূল কাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত না হয়েও দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ধরনের গান পরবর্তীতে ‘আইটেম সং’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই গানটি শুধুমাত্র বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয় না, বরং এটি তার প্রতিভার একটি উজ্জ্বল নিদর্শনও বটে। তিনি তার কর্মজীবনে প্রায় চার হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন, যা বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে একটি অনন্য কীর্তি।
স্বর্ণযুগের সুরস্রষ্টা: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবনের অনন্য পরিক্রমা
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও কর্মের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি শুধুমাত্র গীতিকার হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি একজন সফল সুরকার, উপন্যাসিক এবং চিত্রনাট্যকারও ছিলেন। তার লেখা গান বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মনে এখনও গভীর ছাপ রেখে যায়।বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত জগতে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান অপরিসীম। ১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তার লেখা গান হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, গীতা দত্ত, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা, অরুণধতী হোমচৌধুরী প্রমুখ বিখ্যাত শিল্পীরা কণ্ঠদান করেছেন।”আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না” গানটি ছাড়াও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক গান বাঙালি শ্রোতাদের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে। “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল”, “গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি”, “নিঝুম সন্ধ্যায় ক্লান্ত পাখীরা”, “খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার” – এই গানগুলি আজও বাঙালি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও কর্মের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি শুধুমাত্র গীতিকার হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি একজন সফল সুরকার, উপন্যাসিক এবং চিত্রনাট্যকারও ছিলেন। তার লেখা গান বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মনে এখনও গভীর ছাপ রেখে যায়।পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল হাওড়ার সালকিয়ায়। তার পিতা কান্তিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন নির্বাক যুগের একজন বিখ্যাত অভিনেতা। এই শিল্পী পরিবেশে বেড়ে ওঠার ফলে পুলকের মধ্যে শৈশব থেকেই সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ জন্মেছিল। মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি প্রথম গান লেখেন চলচ্চিত্র পরিচালক সরোজ মুখোপাধ্যায়ের ‘অভিমান’ ছবিতে।
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মজীবন শুধু গান লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি উপন্যাস, চিত্রনাট্য এবং ছড়াও লিখেছেন। তার লেখা গানের সংকলন ‘আমার প্রিয় গান’, ছড়ার সংকলন ‘বাহাত্তুরে’, গল্প সংকলন ‘শেষ সংলাপ’ এবং আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘কথায় কথায় রাত হয়ে যায়’ পাঠকদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়।পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের শেষ দিনগুলি ছিল বেদনাদায়ক। ১৯৯৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি হুগলী নদীতে লঞ্চ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন।
Instagram Notes Music Add: ইনস্টাগ্রাম নোটে গান যোগ করে বন্ধুদের চমকে দিন!
তার এই আকস্মিক মৃত্যু বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীত জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।”আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না” গানটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই গানটি শুধু বাংলা চলচ্চিত্রে ‘আইটেম সং’-এর ধারণাটি প্রবর্তন করেনি, বরং এটি পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিভার একটি উজ্জ্বল নিদর্শনও বটে। তার এই অবদান বাংলা চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও কর্ম থেকে আমরা শিখতে পারি যে, প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের সমন্বয়ে কীভাবে একজন ব্যক্তি তার শিল্পক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখতে পারেন। তার লেখা গানগুলি আজও নতুন প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। “আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না” গানটি শুধু বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম ‘আইটেম সং’ হিসেবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপও বটে।