পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সবসময়ই এক রঙিন মঞ্চ। এই মঞ্চে রং বদলানোর খেলায় দক্ষ পাঁচটি চরিত্রের কথা আজ সামনে এসেছে। কেউ রাজনৈতিক রং মেখে নতুন দলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন, কেউ আবার রং ছড়িয়ে অন্যকে প্রভাবিত করেছেন, আর কেউ কেউ জ্বরের মতো অসুস্থতায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। এই চরিত্রদের গল্প শুধু রাজনীতির দলবদলের কাহিনি নয়, বরং বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা তাদের জীবনের এই রঙিন মোড়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
ঘটনার শুরু হয় সম্প্রতি, যখন বাংলার রাজনীতিতে দলবদলের হাওয়া আবারও জোরালো হয়ে উঠেছে। প্রথম চরিত্র হিসেবে আসেন শুভেন্দু অধিকারী। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি রাজ্য রাজনীতিতে বড় ধরনের ঝড় তুলেছিলেন। তাঁর এই রং বদল শুধু তাঁর নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারের জন্যই নয়, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এরপর এলেন মুকুল রায়। তিনি বিজেপি থেকে ফিরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে দেখালেন যে রাজনীতিতে রং বদলানোর খেলা চিরকালের। তৃতীয় হলেন সৌমিত্র খাঁ, যিনি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়ে বাঁকুড়ার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছিলেন। চতুর্থ চরিত্র হিসেবে আছেন অর্জুন সিং, যিনি বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে এসে আবারও আলোচনায়। আর পঞ্চম চরিত্র হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, যিনি এই দলবদলের মাঝে অসুস্থতায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বিস্তারিত জানতে গেলে শুভেন্দু অধিকারীর গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জিতে তিনি প্রমাণ করেন যে তাঁর রং বদল শুধু কৌশল নয়, শক্তির প্রদর্শনও। অন্যদিকে, মুকুল রায়ের যাত্রা ছিল উল্টো পথে। ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ২০২১-এ ফিরে আসেন পুরোনো দলে। তাঁর এই ফিরে আসা তৃণমূলের জন্য একটি বড় জয় হিসেবে দেখা হয়। সৌমিত্র খাঁয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৯ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি সাংসদ হন। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। অর্জুন সিংয়ের কাহিনি আরও নাটকীয়। ২০১৯-এ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়ে সাংসদ হন, কিন্তু ২০২২-এ আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি জ্বরে ভুগে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছেন, যা তাঁর দলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পাঁচ চরিত্রের গল্পে প্রাসঙ্গিক তথ্য যোগ করলে বোঝা যায়, বাংলার রাজনীতিতে দলবদল নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটেছে। শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদানের পর প্রায় ৩০ জন তৃণমূল বিধায়ক তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন। মুকুল রায়ের ফিরে আসার সময়ও অনেকে তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। এই দলবদলের পেছনে কখনও ক্ষমতার লোভ, কখনও ব্যক্তিগত স্বার্থ কাজ করে। তবে মমতার গৃহবন্দি অবস্থা দলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি যখন অসুস্থ, তখন দলের নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রাজনীতির এই রঙিন খেলা সাধারণ মানুষের জন্য কী বয়ে আনে? শুভেন্দু বা মুকুলের মতো নেতারা যখন দল বদলান, তখন ভোটারদের মনে প্রশ্ন জাগে—এঁরা কি জনগণের জন্য কাজ করেন, নাকি নিজেদের জন্য? সৌমিত্র বা অর্জুনের গল্পেও একই প্রশ্ন ওঠে। আর মমতার অসুস্থতা দেখে অনেকে ভাবেন, তৃণমূলের ভবিষ্যৎ কী হবে? এই সব প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।
তবে একটা জিনিস পরিষ্কার, বাংলার রাজনীতিতে রং বদলানোর এই চরিত্ররা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে। কেউ রং মেখে নতুন পথ খুঁজেছেন, কেউ রং ছড়িয়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন, আর কেউ জ্বরে গৃহবন্দি হয়ে নিজের শক্তি প্রমাণের অপেক্ষায়। এই গল্প শেষ নয়, বরং এক নতুন শুরুর ইঙ্গিত।