Food adulteration detection methods: ভারতে খাদ্য ভেজাল একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অবৈধ প্রথা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশে পরীক্ষা করা ৩৮,৯৭৭টি খাদ্য নমুনার মধ্যে ৮,৪১৬টি নমুনা বা ২২% নমুনা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যের ভেজাল শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
খাদ্য ভেজালের প্রধান কারণ
খাদ্য ভেজালের পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
- ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়
- অন্য খাদ্যপণ্যের অনুকরণ করা
- সঠিক খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব
- খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রয় বাড়ানোর জন্য
- দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে
- কম বিনিয়োগে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের জন্য
সাধারণ ভেজাল পদ্ধতি
খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:
- ফল দ্রুত পাকানোর জন্য রাসায়নিক ব্যবহার
- ভালো ফল-সবজির সাথে পচা ফল-সবজি মেশানো
- আকর্ষণীয় করার জন্য কৃত্রিম রং ব্যবহার
- শস্য, ডাল ইত্যাদিতে মাটি, নুড়ি, পাথর মেশানো
- ভালো পণ্যের সাথে নিম্নমানের পণ্য মেশানো
ভেজাল শনাক্তকরণের পদ্ধতি
সাধারণ মানুষ নিজেরাই কিছু সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে খাদ্যের ভেজাল শনাক্ত করতে পারেন:
চিনি:
- ১০ গ্রাম চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে থিতিয়ে রাখুন। চক পাউডার থাকলে তলায় জমে যাবে।
মধু:
- বিশুদ্ধ মধুতে ডোবানো তুলার সলতে জ্বালালে জ্বলবে। ভেজাল থাকলে পানির উপস্থিতির কারণে জ্বলবে না বা মড়মড় শব্দ হবে।
গুড়:
- গুড়ের সামান্য পরিমাণ পানিতে গুলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মেশালে বুদবুদ বের হলে চক পাউডার আছে বোঝা যাবে।
গম/আটা:
- পানির উপরে ছিটিয়ে দিলে ভুসি ভেসে উঠবে
- লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের সাথে নাড়লে বুদবুদ বের হলে চক পাউডার আছে।
ডাল:
- খেসারি ডাল মেশানো আছে কিনা বোঝার জন্য লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে গোলাপি রং দেখা গেলে খেসারি ডাল আছে বোঝা যাবে।
তেল:
- নারকেল তেলে অন্য তেল মেশানো আছে কিনা জানতে ফ্রিজে রাখলে নারকেল তেল জমে যাবে এবং ভেজাল তেল আলাদা স্তর হিসেবে থাকবে।
Vitamin B12 এর ঘাটতি মেটাতে পারে যেসব ড্রাই ফ্রুটস
ভেজালের প্রভাব
খাদ্য ভেজালের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ে:
- ডায়রিয়া, বমি, অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া
- পুষ্টি ঘাটতিজনিত রোগ
- কিডনি সমস্যা
- হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের সমস্যা
সরকারি উদ্যোগ
ভারত সরকার খাদ্য ভেজাল রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে:
- ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) গঠন করা হয়েছে
- রাজ্য খাদ্য পরীক্ষাগারগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করা হয়েছে
- মোবাইল ফুড টেস্টিং ল্যাব “ফুড সেফটি অন হুইলস” চালু করা হয়েছে
তবে এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও খাদ্য ভেজালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি ধীর। গত তিন বছরে ৫১৯টি মামলার মধ্যে মাত্র ৮৩টি (১৬%) মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।
খাদ্যসাথী প্রকল্প: জানুন ২০২৪ সালে কীভাবে আপনিও উপকৃত হতে পারেন!
সমাধানের উপায়
খাদ্য ভেজাল রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
- নিয়মিত খাদ্য পরিদর্শন
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি
- খাদ্য পরীক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার
- খাদ্য উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ
- সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি
খাদ্য ভেজাল ভারতের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। এটি শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। সরকার, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ – সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খাদ্য ভেজালের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করা প্রয়োজন। প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতন থাকা এবং ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।