হৃদরোগ প্রতিরোধে রাতের খাবারে এড়িয়ে চলুন এই ১০টি খাবার

Dinner foods heart health risks: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে রাতের খাবারে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি ৮০% পর্যন্ত কমাতে পারে। তাই আসুন জেনে…

Debolina Roy

 

Dinner foods heart health risks: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে রাতের খাবারে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি ৮০% পর্যন্ত কমাতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই কোন খাবারগুলো রাতের খাবারে এড়িয়ে চলা উচিত।হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে রাতের খাবারে নিম্নলিখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:

১. প্রক্রিয়াজাত মাংস

বেকন, হট ডগ, স্যালামি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৪২% বৃদ্ধি পায়।

২. ভাজা খাবার

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি ভাজা খাবারে ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ২-৩ বার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেলে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ: জেনে নিন এই গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলি

৩. লাল মাংস

গরু, ভেড়া ইত্যাদি লাল মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো বেশি খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম লাল মাংস খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৭% বৃদ্ধি পায়।

৪. মিষ্টি পানীয়

সোডা, এনার্জি ড্রিংক ইত্যাদি মিষ্টি পানীয়তে অতিরিক্ত চিনি থাকে। এগুলো নিয়মিত পান করলে ওজন বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১-২ ক্যান সোডা পান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৫% বৃদ্ধি পায়।

৫. বেকারি জাতীয় খাবার

কেক, বিস্কুট, পেস্ট্রি ইত্যাদি বেকারি জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে ওজন বেড়ে যায় এবং রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৬. প্রক্রিয়াজাত খাবার

ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চিপস ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত খাবারে সোডিয়াম ও ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪ বার বা তার বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৬২% বৃদ্ধি পায়।

৭. পূর্ণ-ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার

পূর্ণ-ফ্যাটযুক্ত দুধ, চীজ, মাখন ইত্যাদিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো বেশি খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৮. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার

চিপস, আচার, কেচাপ ইত্যাদি খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে। এগুলো বেশি খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দৈনিক লবণের গ্রহণ ২,৩০০ মিলিগ্রামের কম হওয়া উচিত।

৯. অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার

ক্যান্ডি, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবারে অতিরিক্ত চিনি থাকে। এগুলো বেশি খেলে ওজন বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দৈনিক চিনির গ্রহণ মোট ক্যালরির ১০% এর কম হওয়া উচিত।

১০. অতিরিক্ত মদ্যপান

অতিরিক্ত মদ্যপান করলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পুরুষদের দৈনিক ২ ড্রিংক এবং মহিলাদের দৈনিক ১ ড্রিংকের বেশি মদ্যপান করা উচিত নয়।

হৃদরোগ প্রতিরোধে রাতের খাবারে কী খাওয়া উচিত?

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে রাতের খাবারে নিম্নলিখিত খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

১. সবজি

পালং শাক, ব্রকলি, গাজর ইত্যাদি সবজিতে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তচাপ কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৫ সার্ভিং সবজি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ২৮% কমে যায়।

২. ফল

আপেল, কমলা, কিউই ইত্যাদি ফলে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩ সার্ভিং ফল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৫% কমে যায়।

৩. পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার

ওটস, ব্রাউন রাইস, হোলগ্রেইন ব্রেড ইত্যাদি পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩ সার্ভিং পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ২২% কমে যায়।

বাইপাস নাকি ওপেন হার্ট সার্জারি: কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত?

৪. মাছ

সালমন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন ইত্যাদি মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সপ্তাহে কমপক্ষে ২ বার মাছ খাওয়া উচিত।

৫. ডাল ও বীজ

সয়াবিন, মসুর ডাল, চিনাবাদাম ইত্যাদি ডাল ও বীজে প্রোটিন ও ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১/২ কাপ ডাল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৪% কমে যায়।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।