Fort William transformation: কলকাতার ঐতিহাসিক ফোর্ট উইলিয়াম, যা ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল এবং বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তার নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয় দুর্গ’ রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ঔপনিবেশিক ইতিহাসের প্রতীকগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে।
ঘটনার পটভূমি
ফোর্ট উইলিয়াম ১৭৮১ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এটি নামকরণ করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের রাজা উইলিয়াম III-এর নামে। এটি কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা এবং ব্রিটিশ শাসনের সময় একটি শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এখানে প্রায় ১০,০০০ সেনা সদস্য থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
২০০ বছরের শাসনের অবসান: কীভাবে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দিল
নতুন নাম ‘বিজয় দুর্গ’ কেন?
নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারত সরকার ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের ছাপ মুছে ফেলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ‘বিজয় দুর্গ’ নামটি মহারাষ্ট্রের সিন্ধুদুর্গ উপকূলে অবস্থিত একটি প্রাচীন দুর্গের স্মরণে রাখা হয়েছে, যা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের সময়ে মারাঠা নৌবাহিনীর অপরাজেয় ঘাঁটি ছিল। এই নামটি ভারতের সামরিক গৌরব এবং স্বদেশী ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
ফোর্ট উইলিয়ামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা হলো:
- ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা এই দুর্গ আক্রমণ করেন এবং সাময়িকভাবে কলকাতা দখল করেন।
- ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশদের জয়ের পর রবার্ট ক্লাইভ নতুন করে দুর্গ নির্মাণ করেন, যা ১৭৮১ সালে সম্পন্ন হয়।
- এটি ময়দানের পাশে অবস্থিত, যা কলকাতার সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত স্থান হিসাবে পরিচিত।
নাম পরিবর্তনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
ভারতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন শহর ও স্থাপনার নাম পরিবর্তনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো এলাহাবাদ থেকে প্রয়াগরাজ এবং ফৈজাবাদ থেকে অযোধ্যা নামকরণ। এই পদক্ষেপগুলো ঐতিহাসিক পুনর্মূল্যায়ন এবং জাতীয় গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফোর্ট উইলিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয় দুর্গ’ রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা এবং সামরিক গৌরবকে সম্মান জানায়। এটি শুধু একটি নাম পরিবর্তন নয়; বরং একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।