বাংলাদেশের সকল মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সুখবর! আগামী ১৮ জুলাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেশের সব মোবাইল গ্রাহক পাবেন বিনামূল্যে ১ জিবি ইন্টারনেট ডাটা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সকল মোবাইল অপারেটরকে এই বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছে। এই ফ্রি ইন্টারনেট সেবার মেয়াদ থাকবে পূর্ণ পাঁচ দিন, যা গ্রাহকদের কাছে একটি অভূতপূর্ব উপহার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারি উদ্যোগের পেছনের কারণ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালনের অংশ হিসেবে এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছর জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সেই বিষয়কে মাথায় রেখেই আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এমন উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামী ১৮ জুলাই গ্রাহকদের বিনা মূল্যে ১ জিবি ইন্টারনেট দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)”।
Fake App Fraud: ডিজিটাল জঙ্গলে সাবধান, ভুয়া অ্যাপের ফাঁদ এড়ানোর
বিটিআরসির নির্দেশনার বিস্তারিত
বুধবার (৯ জুলাই) বিটিআরসি থেকে সকল মোবাইল অপারেটরকে এই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালন, জন আকাঙ্ক্ষা পূরণ এবং জনস্বার্থে ১৮ জুলাই ফ্রি ইন্টারনেট ডে ঘোষণা উপলক্ষে গ্রাহকদের ফ্রি ইন্টারনেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনা এবং ৮ জুলাই কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কিভাবে পাবেন ফ্রি ইন্টারনেট
স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া
এই ফ্রি ইন্টারনেট পেতে গ্রাহকদের কোনো বিশেষ কাজ করতে হবে না। মোবাইল অপারেটরসমূহ ১৮ জুলাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকদের ৫ দিন মেয়াদি ১ জিবি ফ্রি ডাটা প্রদান করবে।
পূর্ব অবহিতকরণ
অপারেটরগুলো গ্রাহকদের ফ্রি ডাটা দেওয়ার বিষয়টি এসএমএসের মাধ্যমে আগেই অবহিত করবে। এর ফলে গ্রাহকরা জানতে পারবেন যে তারা এই বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন।
সকল অপারেটরের অন্তর্ভুক্তি
দেশের সকল মোবাইল অপারেটর এই নির্দেশনা মেনে চলবে। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল এবং টেলিটক – সবার গ্রাহকরাই এই সুবিধা পাবেন।
ডাটা প্যাকেজের বৈশিষ্ট্য
ডাটার পরিমাণ ও মেয়াদ
-
ডাটার পরিমাণ: ১ জিবি (১০২৪ এমবি)
-
মেয়াদকাল: পূর্ণ ৫ দিন
-
খরচ: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে
-
ব্যবহারের সীমা: কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই
বিশেষ বার্তা
বিটিআরসির চিঠিতে একটি বিশেষ বার্তা রয়েছে: “কেউ কেড়ে নেবে না ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ১৮ জুলাই পাচ্ছেন ১ জিবি ডাটা ফ্রি। মেয়াদ ৫ দিন”।
ইতিহাসের পটভূমি
জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি
২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ইন্টারনেটের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতীক হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জনকল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত
এই সিদ্ধান্ত জনআকাঙ্ক্ষা এবং জনস্বার্থ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সরকার চায় যেন সকল মানুষ ইন্টারনেটের সুবিধা উপভোগ করতে পারে এবং কেউ যেন তাদের যোগাযোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
গ্রাহকদের প্রস্তুতি
যা করতে হবে
গ্রাহকদের বিশেষ কিছু করতে হবে না। তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা ভালো:
-
মোবাইল ফোন চালু রাখুন
-
এসএমএস গ্রহণের জন্য ইনবক্স খালি রাখুন
-
১৮ জুলাই সকাল থেকে ডাটা ব্যালেন্স চেক করুন
কোড ব্যবহার
বিভিন্ন অপারেটরের ডাটা ব্যালেন্স চেকের কোড:
-
গ্রামীণফোন: 1211*4#
-
রবি/এয়ারটেল: 844488#
-
বাংলালিংক: 1245#
-
টেলিটক: 1116#
সামাজিক প্রভাব
ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি
এই উদ্যোগ বাংলাদেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। যারা আর্থিক কারণে ইন্টারনেট কিনতে পারেন না, তারাও এই পাঁচ দিন ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভাব
ছাত্রছাত্রীরা এই ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। বিশেষ করে যারা ডাটা কিনতে সক্ষম নয়, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই ধরনের সরকারি উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে সরকার আরও এমন পদক্ষেপ নিতে পারে যা সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের উদ্যোগ দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় সহায়ক হবে।
১৮ জুলাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে এই ৫ দিন মেয়াদি ফ্রি ইন্টারনেট অফার বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি শুধু একটি সেবা নয়, বরং ইন্টারনেট স্বাধীনতার একটি প্রতীক। সকল গ্রাহক এই সুবিধা গ্রহণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশীদার হতে পারবেন।