অলিম্পিক ভিলেজ: খেলা শেষে নতুন জীবনের সূচনা।

অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার পর অলিম্পিক ভিলেজগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে। এই বিশাল আবাসিক কমপ্লেক্সগুলি, যা হাজার হাজার অ্যাথলিট ও কর্মীদের আশ্রয় দেয়, খেলা শেষে কী হয়? গবেষণা দেখায়…

Ishita Ganguly

 

অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার পর অলিম্পিক ভিলেজগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে। এই বিশাল আবাসিক কমপ্লেক্সগুলি, যা হাজার হাজার অ্যাথলিট ও কর্মীদের আশ্রয় দেয়, খেলা শেষে কী হয়? গবেষণা দেখায় যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই স্থাপনাগুলি নতুন জীবন লাভ করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (IOC) একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ২১ শতকের ৯২% স্থায়ী অলিম্পিক ভেন্যু এবং সব মিলিয়ে ৮৫% স্থায়ী ভেন্যু আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান দেখায় যে অধিকাংশ অলিম্পিক ভিলেজই সফলভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে।

অলিম্পিক ভিলেজের পুনর্ব্যবহারের বিভিন্ন রূপ:

অলিম্পিক ভিলেজগুলির পুনর্ব্যবহারের ধরন বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু সাধারণ উদাহরণ:
আবাসিক এলাকায় রূপান্তর:
 অনেক ক্ষেত্রেই অলিম্পিক ভিলেজগুলি আবাসিক কমপ্লেক্সে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
  • ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের পর, ইস্ট ভিলেজকে প্রায় ৩,০০০টি নতুন বাড়ি, রেস্তোরাঁ, দোকান ও স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। বর্তমানে সেখানে দুই শয়নকক্ষের ফ্ল্যাটের দাম ১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
  • ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকের পর, সংপা-গু জেলায় নির্মিত ভিলেজটি ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে সিউল শহরকে হস্তান্তর করা হয় আবাসন হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
  • ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকের পর, নিউইংটন এলাকায় নির্মিত ভিলেজটি ৫,০০০ এরও বেশি মানুষের জন্য আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর:
কিছু ক্ষেত্রে অলিম্পিক ভিলেজগুলি শিক্ষার্থীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
  • ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকের ভিলেজটি বর্তমানে মিউনিখের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসে পরিণত হয়েছে।
  • ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিকের ভিলেজটি প্রথমে জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং পরে ২০০৭ সাল থেকে জর্জিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে পরিণত হয়।
পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তর:
 কিছু অলিম্পিক ভিলেজ পর্যটন ও বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
  • ২০১৪ সালের সোচি শীতকালীন অলিম্পিকের ভিলেজগুলি, যার কিছু সমুদ্রের পাশে বা স্কি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ছিল, পরবর্তীতে রিসোর্টে পরিণত হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা:
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অলিম্পিক ভিলেজগুলি সফলভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়, কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ:
  • ২০১৬ সালের রিও ডি জেনেইরো অলিম্পিকের ৭০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ভিলেজটি বিলাসবহুল কন্ডোতে রূপান্তরিত হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী বছরগুলিতে সেগুলি খালি পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে।
  • ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকের পর, পারনিথা এলাকায় নির্মিত নতুন আবাসিক এলাকাটি পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। পরিকল্পিত পরিষেবা অবকাঠামো, যেমন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং হাসপাতাল কখনও নির্মিত হয়নি, এবং স্থানীয় দোকানগুলি বন্ধ হয়ে গেছে।
  • ২০০৬ সালের টুরিন শীতকালীন অলিম্পিকের ভিলেজটি আবাসিক এলাকায় রূপান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু ২০১৬ সাল পর্যন্ত তা খালি পড়ে ছিল। পরে, একটি ইতালীয় অভিবাসন কর্মসূচি হঠাৎ শেষ হওয়ার পর ১,০০০ এরও বেশি আফ্রিকান অভিবাসী ও শরণার্থী সেখানে আশ্রয় নেয়।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি:

অলিম্পিক আয়োজনকারীরা ক্রমশ অলিম্পিক ভিলেজের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার নিয়ে বেশি সচেতন হচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ:
  • টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের আয়োজকরা ঘোষণা করেছেন যে খেলার পর অ্যাথলিটদের আবাসন আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে রূপান্তরিত করা হবে। তাদের লক্ষ্য হল “একটি নতুন সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করা যেখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ মিথস্ক্রিয়া করতে এবং আরামে বাস করতে পারে”।
  • আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC) তার অলিম্পিক এজেন্ডা ২০২০ এর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছে। আয়োজক শহরগুলিকে তাদের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে খেলাকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে, বিদ্যমান ভেন্যুগুলির ব্যবহার সর্বাধিক করা হচ্ছে এবং শুধুমাত্র প্রমাণিত দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজন থাকলেই নতুন ভেন্যু নির্মাণ করা হচ্ছে।
অলিম্পিক ভিলেজগুলির ভবিষ্যৎ জটিল এবং বহুমুখী। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি সফলভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়, কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। সফল পুনর্ব্যবহারের চাবিকাঠি হল সাবধান পরিকল্পনা করা এবং স্থানীয় প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য রাখা।অলিম্পিক ভিলেজগুলি শুধু অস্থায়ী আবাসন নয়, বরং এগুলি শহরের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে, এই বিশাল বিনিয়োগগুলি আয়োজক শহর ও দেশের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সুফল বয়ে আনতে পারে, যা শুধু ক্রীড়া নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারে।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।