বাম রাজনীতির পরিচিত মুখ দীপ্সিতা ধর এবার অভিনয় জগতে সবার নজর কেড়েছেন। অ্যামাজন প্রাইমের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘জিদ্দি গার্লস’-এ একজন আন্দোলনরত তরুণীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাঁকে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিরিজে সিপিএমের এই নেত্রী রাজনৈতিক ময়দানের বাইরে এক নতুন পরিচয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। পরিচালক সোনালি বসুর অনুরোধে ভাঙা হাত নিয়েই শ্যুটিং করেছেন তিনি, যা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে।
দীপ্সিতা ধর, যিনি এতদিন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে স্লোগান দেওয়ার জন্য চেনা মুখ, এবার ক্যামেরার সামনে অভিনয় করে চমক দিয়েছেন। ‘জিদ্দি গার্লস’ সিরিজটি মেয়েদের কলেজ ও হোস্টেল জীবনের সংগ্রাম, বন্ধুত্ব এবং স্বপ্ন নিয়ে নির্মিত। এখানে দীপ্সিতার চরিত্রটি একজন সক্রিয় ছাত্রনেত্রী, যিনি প্রতিষ্ঠানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হন। বাস্তব জীবনের মতোই পর্দাতেও তিনি লড়াইয়ের ভাষা খুঁজে নিয়েছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাত ভাঙার পরও দিল্লি ও মুম্বাইয়ে শ্যুটিং চালিয়ে যান তিনি।
এই সিরিজে অভিনয়ের সিদ্ধান্তকে দীপ্সিতা ব্যক্তিগত পর্যায়ের একটি অভিজ্ঞতা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, পরিচালক সোনালি বসুর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং চরিত্রটির প্রতি আকর্ষণই তাঁকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল। “কেউ চাইলেই যেমন রাজনীতিবিদ হতে পারেন না, তেমনি অভিনয়ের জগতেও শুধু ইচ্ছাই যথেষ্ট নয়,” বলেছেন দীপ্সিতা। তাঁর মতে, এই চরিত্রে অভিনয় করা সামাজিক আন্দোলনেরই একটি সম্প্রসারণ।
দীপ্সিতার রাজনৈতিক জীবন নিয়েও এই সিরিজে কিছুটা প্রতিফলন দেখা গেছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বালি বিধানসভা আসনে তিনি সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে লড়লেও জয়ী হতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের জাতীয় যুগ্ম সম্পাদক এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক। রাজনীতির পাশাপাশি অভিনয়ে আসাকে অনেকে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার প্রকাশ হিসেবেই দেখছেন।
‘জিদ্দি গার্লস’-এর প্লটে রয়েছে পাঁচ কলেজছাত্রীর গল্প, যারা হোস্টেলের নিয়ম-কানুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। দীপ্সিতা ছাড়াও এই সিরিজে অভিনয় করেছেন নন্দিতা দাস, দিয়া দামিনী এবং লিলেট দুবের মতো অভিনেত্রীরা। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘প্রীতিশ নন্দী কমিউনিকেশন’-এর ব্যানারে তৈরি এই প্রজেক্টটি ইতিমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
রাজনীতি ও অভিনয়—দুই ক্ষেত্রেই সমান সক্রিয় দীপ্সিতা বলছেন, “এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক বিরতি নয়, বরং একটি শৈল্পিক অভিব্যক্তি।” তাঁর এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেক সহকর্মী, যদিও কিছু মহল থেকে প্রশ্নও উঠেছে। ভবিষ্যতে আরও অভিনয়ের পরিকল্পনা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, “এটি নির্ভর করবে চরিত্র এবং প্রোজেক্টের উপর।”
দীপ্সিতার এই যাত্রা শুধু একজন রাজনীতিবিদের বহুমাত্রিকতাই নয়, বরং যুব প্রজন্মের জন্য একটি প্রেরণাদায়ক উদাহরণ তৈরি করেছে। অ্যামাজন প্রাইমে উপলব্ধ এই সিরিজটি দেখে নিতে পারেন যে কেউ, যাঁরা রাজনৈতিক আদর্শ ও শিল্পের সমন্বয় দেখতে চান। ভোটের মাঠে হেরে গেলেও ওটিটি পর্দায় দীপ্সিতা কীভাবে জয়ী হচ্ছেন, তা এখন দেখার বিষয় সবার।