Future of India-UK Relation: ২০২৪ সালের ৪ জুলাই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি ঐতিহাসিক জয় লাভ করেছে। কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি ৪০৮টি আসন পেয়েছে, যা সংসদে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা। অন্যদিকে, ঋষি সুনকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র ১৫০টি আসন পেয়েছে। এই ফলাফলের মাধ্যমে ১৪ বছরের কনজারভেটিভ শাসনের অবসান ঘটল এবং কেয়ার স্টারমার যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন।
ঋষি সুনকের পরাজয়: প্রেক্ষাপট
ঋষি সুনকের নেতৃত্বে ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক বেশ ইতিবাচক ছিল। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে একটি বিশেষ সংযোগ তৈরি হয়েছিল। সুনকের আমলে:
- ২০২১ সালে ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের জন্য ‘২০৩০ রোডম্যাপ’ চালু করা হয়।
- বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
- মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং ১৪টি রাউন্ড সম্পন্ন হয়।
- দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২১.৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
ঋষি সুনকের আমলে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক
ঋষি সুনকের আমলে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক বেশ মজবুত ছিল। তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে ভারতীয়দের মধ্যে একটি বিশেষ সংযোগ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া, তার নেতৃত্বে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক
কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টির জয়ের পর ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্কে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে:
১. মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA):
- স্টারমার FTA সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
- লেবার পার্টির ইলেকশন ম্যানিফেস্টোতে ভারতের সাথে “নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব” গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
- FTA আলোচনা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে, অক্টোবর ২০২৪ নাগাদ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
২. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ:
- দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বাড়তে পারে।
- ভারতীয় পণ্য ও সেবার জন্য যুক্তরাজ্যের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়তে পারে।
- যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. অভিবাসন নীতি:
- দক্ষ কর্মীদের ভিসা নিয়ে নতুন নীতি আসতে পারে।
- ভারতীয় পেশাজীবীদের জন্য যুক্তরাজ্যে কাজের সুযোগ বাড়তে পারে।
৪. প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা:
- ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথ উদ্যোগ বাড়তে পারে।
- সাইবার নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতা জোরদার হতে পারে।
৫. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিচ্ছন্ন শক্তি:
- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যৌথ উদ্যোগ বাড়তে পারে।
- পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতা জোরদার হতে পারে।
৬. শিক্ষা ও গবেষণা:
- শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিময় কার্যক্রম বাড়তে পারে।
- যৌথ গবেষণা প্রকল্প বৃদ্ধি পেতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
চ্যালেঞ্জ:
- কাশ্মীর ইস্যুতে লেবার পার্টির অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
- অবৈধ অভিবাসন নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে।
- FTA আলোচনায় শুল্ক হ্রাস ও বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে জটিলতা থাকতে পারে।
সম্ভাবনা:
- দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর ও বহুমুখী হতে পারে।
- ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
- প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হতে পারে
সম্ভাব্য পরিবর্তন ও প্রভাব
১. বাণিজ্য সম্পর্ক:
ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত হতে পারে। স্টারমার তার নির্বাচনী প্রচারে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের বাণিজ্য নীতি কেমন হবে তা নির্ভর করবে স্টারমারের সরকারের উপর।
২. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা:
ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বাড়তে পারে। স্টারমার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সাথে যৌথ উদ্যোগ নিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
৩. প্রযুক্তি ও শিক্ষা:
প্রযুক্তি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সহযোগিতা বাড়তে পারে। স্টারমার তার নির্বাচনী প্রচারে শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।
ঋষি সুনকের পরাজয়ের পর ভারত ও ইউনাইটেড কিংডমের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে এই সম্পর্কের কিছু পরিবর্তন হতে পারে, তবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে, যা উভয় দেশের জন্যই সুফল বয়ে আনতে পারে।