Soumya Chatterjee
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

গগনযান মিশন ২০২৪: ভারতের মহাকাশ অভিযানের অজানা রহস্য ফাঁস!

Gaganyaan mission 2024 launch details:ভারতের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে গগনযান মিশন। এই মিশনের মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো নিজস্ব প্রযুক্তিতে মানুষকে মহাকাশে পাঠাতে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে এই মিশনের প্রথম পর্যায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

গগনযান শব্দটির অর্থ হল ‘আকাশযান’। এটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) কর্তৃক নির্মিত একটি মানববাহী মহাকাশযান। এই যানটি তিনজন নভোচারীকে বহন করে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে নিয়ে যাবে।গগনযান মিশনের প্রথম পর্যায়ে একটি মানবশূন্য পরীক্ষামূলক উড়ান সম্পন্ন হবে। এই উড়ানের নাম হবে গগনযান-১। এর মাধ্যমে মূল মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি যাচাই করা হবে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে এই পরীক্ষামূলক উড়ান সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি গগনযান মিশনের জন্য নির্বাচিত চারজন নভোচারীর নাম ঘোষণা করেছেন। এঁরা হলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রশান্ত বালকৃষ্ণন নায়ার, গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজিত কৃষ্ণন, গ্রুপ ক্যাপ্টেন অঙ্গদ প্রতাপ এবং উইং কমান্ডার শুভাংশু শুক্লা। এই চারজনই ভারতীয় বিমান বাহিনীর অফিসার এবং টেস্ট পাইলট হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের।প্রধানমন্ত্রী মোদি এই চারজন নভোচারীকে মর্যাদাসূচক ‘অ্যাস্ট্রোনট উইংস’ প্রদান করেছেন। তিনি তাঁদের ১.৪ বিলিয়ন ভারতীয়ের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গগনযান মিশনের জন্য ইসরো তার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট LVM3 ব্যবহার করবে। এই রকেটটি ইতিমধ্যে সাতবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। মানুষ বহনের উপযোগী করার জন্য রকেটটির সব উপাদান পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।গগনযান মিশনের জন্য ব্যবহৃত ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন CE20-এর চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। এই পরীক্ষায় ইঞ্জিনটি সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং মানুষ বহনকারী মিশনের জন্য প্রমাণিত হয়েছে।
নির্বাচিত নভোচারীরা বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে ইসরোর নভোচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত আছেন। তাঁরা বিভিন্ন উপপ্রণালীর কার্যপ্রণালী সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং ক্রু মডিউলের নকশা তৈরিতেও অংশগ্রহণ করছেন।এই চারজন নভোচারীর মধ্যে একজনকে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা প্রশিক্ষণ দেবে বলে জানা গেছে। নাসার প্রশাসক বিল নেলসন ২০২৩ সালে নয়াদিল্লি সফরকালে এই ঘোষণা করেছিলেন।গগনযান মিশনের মূল লক্ষ্য হল তিনজন নভোচারীকে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং তিন দিন পর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। এই মিশন সফল হলে ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর ক্ষমতা অর্জনকারী চতুর্থ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
গগনযান মিশনের সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এর মাধ্যমে ভারত অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে। এছাড়া এই মিশন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতির প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।গগনযান মিশনের জন্য ইসরো দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। ১৯৮৪ সালে উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা সোভিয়েত মহাকাশযানে করে প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে যান। তারপর থেকেই ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর স্বপ্ন দেখছিল। ২০০৬ সালে ভারত একটি কক্ষপথ যান মিশনের কাজ শুরু করে, যা পরবর্তীতে গগনযান নামে পরিচিত হয়।
গগনযান মিশনের জন্য ব্যবহৃত LVM3 রকেটটি তিনটি ধাপে কাজ করে – তরল ধাপ, কঠিন ধাপ এবং ক্রায়োজেনিক ধাপ। ইসরো এই রকেটের সব উপাদানকে মানুষ বহনের উপযোগী করে পুনর্বিন্যাস করেছে। তরল ধাপে ব্যবহৃত বিকাশ ইঞ্জিন এবং কঠিন ধাপের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত সলিড বুস্টার ইতিমধ্যে মিশনের জন্য যোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
গগনযান মিশনের সাফল্য শুধু ভারতের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এর মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করবে যে সে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জটিল মহাকাশ মিশন সম্পন্ন করতে সক্ষম।গগনযান মিশনের সাফল্য ভারতের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে মহাকাশ প্রযুক্তি সংক্রান্ত শিল্পের বিকাশ ঘটবে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এছাড়া এই মিশনের সাফল্য ভারতকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।গগনযান মিশন ভারতের যুব সমাজকেও অনুপ্রাণিত করবে। এর ফলে আরও বেশি তরুণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করতে উৎসাহিত হবে। এভাবে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী জনবল গড়ে উঠবে।
গগনযান মিশনের সাফল্য ভারতের জাতীয় গৌরবকেও বৃদ্ধি করবে। এর মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করবে যে সে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশ। এটি ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।সর্বোপরি, গগনযান মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। এর সাফল্য ভবিষ্যতে আরও জটিল ও দূরবর্তী মহাকাশ অভিযানের পথ প্রশস্ত করবে। এভাবে ভারত ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মহাকাশ শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।
মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close