২ অক্টোবর ২০২৪-এ পালিত হতে চলেছে মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি ভারতের জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় এবং জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবেও স্বীকৃত। গান্ধীজীর জীবন ও আদর্শকে স্মরণ করার এই বিশেষ দিনটি সারা বিশ্বে শান্তি ও অহিংসার বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
গান্ধী জয়ন্তীর ইতিহাস
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন এবং অহিংস প্রতিরোধের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
গান্ধীজী লন্ডনে আইন পড়াশোনা করেন এবং পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান যেখানে তিনি প্রথম অহিংস প্রতিরোধের কৌশল প্রয়োগ করেন। ভারতে ফিরে এসে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসেন এবং অসহযোগ আন্দোলন, লবণ সত্যাগ্রহ, ভারত ছাড়ো আন্দোলন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজীর মৃত্যুর পর তাঁর জন্মদিনটি জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
গান্ধী জয়ন্তীর তাৎপর্য
গান্ধী জয়ন্তী শুধু একজন মহান নেতার জন্মদিন পালন নয়, এটি তাঁর আদর্শ ও মূল্যবোধকে পুনরায় স্মরণ করার দিন। এই দিনে আমরা গান্ধীজীর অহিংসা, সত্য, স্বনির্ভরতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শগুলিকে স্মরণ করি।
গান্ধীজীর অহিংস প্রতিরোধের দর্শন আজও বিশ্বব্যাপী সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনগুলিকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তাঁর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পদ্ধতি দেখিয়েছে যে, যুদ্ধ ছাড়াও অত্যাচারী শাসনকে উৎখাত করা সম্ভব।
বর্তমান বিশ্বে যখন সংঘাত ও সহিংসতা মানব সমাজকে গ্রাস করছে, তখন গান্ধীজীর অহিংসা ও শান্তির বার্তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের নিজেদের মধ্যে থেকেই শুরু করতে হবে।
গান্ধী জয়ন্তী উদযাপন
গান্ধী জয়ন্তী ভারতে বিভিন্নভাবে পালিত হয়:
– রাজঘাটে শ্রদ্ধা নিবেদন: রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দিল্লির রাজঘাটে গান্ধীজীর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
– প্রার্থনা সভা: স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয় যেখানে গান্ধীজীর প্রিয় ভজন “রঘুপতি রাঘব রাজা রাম” গাওয়া হয়।
– পরিচ্ছন্নতা অভিযান: গান্ধীজী পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দিতেন। তাই এই দিনে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অংশ হিসেবে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করা হয়।
– চলচ্চিত্র প্রদর্শনী: গান্ধীজীর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
– শিল্প প্রতিযোগিতা: স্কুল-কলেজে গান্ধীজীর জীবন ও আদর্শ নিয়ে চিত্রাঙ্কন, রচনা ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
গান্ধীজীর জীবন থেকে কিছু অজানা তথ্য
– গান্ধীজী ৫ বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন কিন্তু কখনোই পুরস্কারটি পাননি।
– একজন আইরিশ শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করার কারণে গান্ধীজী ইংরেজিতে কথা বলার সময় আইরিশ উচ্চারণ হারাননি।
– বর্তমানে ভারতের বাইরে ৪৮টি এবং ভারতের ভিতরে ৫৩টি রাস্তার নাম মহাত্মা গান্ধীর নামে রাখা হয়েছে।
গান্ধীজীর উল্লেখযোগ্য উক্তি
গান্ধীজীর কিছু বিখ্যাত উক্তি যা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে:
– “মানুষ তার চিন্তার ফসল। সে যা ভাবে, তাই হয়ে ওঠে।”
– “পৃথিবী প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট, কিন্তু প্রত্যেকের লোভ মেটাতে নয়।”
– “তুমি যদি পরিবর্তন দেখতে চাও, তাহলে সেই পরিবর্তন নিজে হও।”
– “চোখের বদলে চোখ নেওয়া পুরো পৃথিবীকে অন্ধ করে দেবে।”
গান্ধী জয়ন্তী ২০২৪ উদযাপনের গুরুত্ব
২০২৪ সালের গান্ধী জয়ন্তী বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ:
– এটি গান্ধীজীর ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী।
– বর্তমান বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
– জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় গান্ধীজীর সাদাসিধে জীবনযাপনের আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি।
– কোভিড-১৯ মহামারির পর বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গান্ধীজীর স্বনির্ভরতার আদর্শ গুরুত্বপূর্ণ।
গান্ধী জয়ন্তী ২০২৪ শুধু একটি জাতীয় ছুটির দিন নয়, এটি আমাদের সকলের জন্য একটি আত্মপরীক্ষার দিন। এই দিনে আমরা গান্ধীজীর আদর্শগুলি পুনরায় স্মরণ করি এবং সেগুলি নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করার সংকল্প নিই। অহিংসা, সত্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তুলতে পারি – এটাই হবে গান্ধীজীর প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা নিবেদন।