Ganesh Chaturthi 2025: প্রতি বছর ভাদ্র মাসে আমাদের প্রিয় গণপতি বাপ্পার আগমনে সারা ভারতবর্ষ মেতে ওঠে উৎসবে। গণেশ চতুর্থী ২০২৫ আসছে অনেক আনন্দ ও উৎসাহের সাথে। এই বিশেষ উৎসবটি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং একতার প্রতীক। বিঘ্নহর্তা গণেশের জন্মোৎসব হিসেবে পরিচিত এই উৎসবে সারা দেশের মানুষ একসাথে হয়ে ভক্তিভরে পূজা-অর্চনা করে থাকেন।
আসুন জেনে নিই গণেশ চতুর্থী ২০২৫ কবে, কীভাবে এবং কোন নিয়মে পালন করতে হবে।
গণেশ চতুর্থী ২০২৫ এর তারিখ ও সময়
এ বছর গণেশ চতুর্থী ২০২৫ উদযাপিত হবে ২৭শে আগস্ট, বুধবার। বৈদিক পঞ্জিকা অনুসারে, ভাদ্রপদ মাসের শুক্ল পক্ষের চতুর্থী তিথি শুরু হবে ২৬শে আগস্ট ২০২৫ দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭শে আগস্ট বিকেল ৩টা ৪৪ মিনিটে।
এই দশ দিনের মহাউৎসব শুরু হবে ২৭শে আগস্ট থেকে এবং শেষ হবে ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ গণেশ বিসর্জনের মাধ্যমে।
শুভ পূজার মুহূর্ত
গণেশ চতুর্থীর দিন সবচেয়ে শুভ সময় হলো মধ্যাহ্ন গণেশ পূজার মুহূর্ত। এ বছর এই বিশেষ সময়টি হবে সকাল ১১টা ০৫ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ে পূজা করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।
তবে রাহুকাল এড়িয়ে চলতে হবে, যা দুপুর ১২টা ২২ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
বিনায়ক চতুর্থী ফেব্রুয়ারি ২০২৫: তারিখ, সময়, রীতিনীতি এবং তাৎপর্য
গণেশ চতুর্থীর ঐতিহাসিক পটভূমি ও তাৎপর্য
পৌরাণিক কাহিনী
পুরাণ অনুসারে, মা পার্বতী তাঁর শরীরের হলুদ মাখা মিশ্রণ দিয়ে একটি পুত্র তৈরি করেন এবং তাকে জীবন দান করেন। তিনি গণেশকে তার স্নানকক্ষের পাহারা দিতে বলেন। যখন ভগবান শিব ফিরে এসে গণেশের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন, তখন একটি সংঘর্ষ হয় এবং শিব গণেশের মাথা কেটে ফেলেন। পার্বতীর ক্রোধ দেখে শিব গণেশকে পুনর্জীবিত করেন একটি হাতির মাথা দিয়ে এবং তাকে প্রথম পূজ্য (প্রথম পূজ্য) ও বিঘ্নহর্তা হিসেবে আশীর্বাদ করেন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
গণেশ চতুর্থীর উৃসব ১৭ শতকে মারাঠা সাম্রাজ্যের সময় থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যখন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ একতা ও জাতীয়তাবাদ বৃদ্ধির জন্য এই উৎসবকে উৎসাহিত করেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনামলে স্বাধীনতা সংগ্রামী লোকমান্য তিলক এই উৎসবকে জনসাধারণের উৎসব হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলেন ভারতীয়দের মধ্যে সংহতি ও দেশপ্রেমের জন্য।
গণেশ চতুর্থীর আচার-অনুষ্ঠান ও পূজা পদ্ধতি
প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান
গণেশ চতুর্থীর প্রথম দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হলো প্রাণ প্রতিষ্ঠা। এই আচারে বিশেষ মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে মাটির মূর্তিতে গণেশের উপস্থিতি আহ্বান করা হয়।
ষোড়শোপচার পূজা
প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর ১৬টি বিশেষ উপাচার দিয়ে ষোড়শোপচার পূজা করা হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- আবাহন ও প্রতিষ্ঠাপন: হাতের মুদ্রার মাধ্যমে গণেশকে আহ্বান করা
- আসন সমর্পণ: পাঁচটি ফুল দিয়ে গণেশকে আসন প্রদান
- পাদ্য সমর্পণ: গণপতির পা ধোয়ানো
- অর্ঘ্য সমর্পণ: সুগন্ধি জল অর্পণ
স্নান পদ্ধতি
গণেশের মূর্তিকে বিভিন্ন পবিত্র উপাদান দিয়ে স্নান করানো হয়:
- জল স্নান: সাধারণ জল দিয়ে স্নান
- পঞ্চামৃত স্নান: দুধ, ঘি, চিনি, দই ও মধু দিয়ে স্নান
- গঙ্গাজল স্নান: পবিত্র গঙ্গাজল দিয়ে স্নান
নৈবেদ্য ও প্রসাদ
গণেশের প্রিয় খাবার মোদক সহ বিভিন্ন মিষ্টি, ফল, নারকেল, গুড় নিবেদন করা হয়। বিশেষভাবে ২১টি দূর্বা ঘাস এবং ফুল অর্পণ করার নিয়ম রয়েছে।
বিভিন্ন শহরে পূজার সময়সূচী
শহরমধ্যাহ্ন গণেশ পূজার মুহূর্তনয়াদিল্লিসকাল ১১:০৫ – দুপুর ১:৪০চেন্নাইসকাল ১০:৫৬ – দুপুর ১:৫৫জয়পুরসকাল ১১:১১ – দুপুর ১:৪৫
গণেশ চতুর্থীর আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
বিঘ্নহর্তা হিসেবে গণেশ
ভগবান গণেশ বিঘ্নহর্তা এবং জ্ঞান, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবতা হিসেবে পূজিত। যে কোনো নতুন কাজ, ব্যবসা বা বিদ্যা অর্জনের আগে তাঁর পূজা করা হয়। তাঁকে প্রথম পূজ্য দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয়।
সামাজিক একতার প্রতীক
গণেশ চতুর্থী কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও একতার প্রতীকও। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে হয়ে এই উৎসব পালন করে।
গৃহে গণেশ পূজার নিয়মকানুন
মূর্তি স্থাপনা
ঘরে গণেশের মূর্তি স্থাপনের সময় পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে রাখতে হয়। মূর্তিটি পরিষ্কার কাপড়ে মুড়ে রাখতে হয় এবং ফুল, আলো দিয়ে সাজাতে হয়।
দৈনিক পূজা
দশ দিন ধরে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা আরতি করতে হয়। মন্ত্র জপ, ভজন গাওয়া এবং প্রসাদ বিতরণ করার নিয়ম রয়েছে।
গণেশ মন্ত্রের অলৌকিক শক্তি: জীবনের সকল সমস্যার সমাধান এক মন্ত্রে!
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র
গণেশ পূজার সময় এই শক্তিশালী মন্ত্রগুলো জপ করুন:
- “বক্রতুণ্ড মহাকায় সূর্যকোটি সমপ্রভা, নির্বিঘ্নং কুরু মে দেব সর্বকার্যেষু সর্বদা”
- “একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং, বিঘ্নেশ্বরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্”
গণেশ বিসর্জন – পরিসমাপ্তির মহিমা
অনন্ত চতুর্দশী
দশ দিনের উৎসব শেষ হয় অনন্ত চতুর্দশীতে, যা ২০২৫ সালে পড়বে ৬ই সেপ্টেম্বর। এই দিন উত্তরপূজা করে গণেশকে বিদায় জানানো হয়।
বিসর্জন অনুষ্ঠান
“গণপতি বাপ্পা মোরিয়া” ধ্বনির মধ্য দিয়ে মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়া হয়। এটি গণেশের কৈলাস পর্বতে ফিরে যাওয়ার প্রতীক।
আধুনিক যুগে গণেশ চতুর্থীর প্রাসঙ্গিকতা
পরিবেশ সচেতনতা
আজকাল পরিবেশ রক্ষার জন্য মাটির তৈরি মূর্তি ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ছে। প্রাকৃতিক রং ও উপাদান ব্যবহার করে পরিবেশ বান্ধব উৎসব পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সামাজিক সেবা
অনেক পূজা কমিটি এই সময় দান-খয়রাত, খাবার বিতরণ এবং বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে।
গণেশ চতুর্থী ২০২৫ আমাদের জীবনে নিয়ে আসুক অগণিত আশীর্বাদ ও সমৃদ্ধি। এই পবিত্র উৎসব কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। বিঘ্নহর্তা গণেশের কৃপায় আমাদের সকল বাধা-বিপত্তি দূর হোক এবং জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসুক। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা নিজেদের শেকড়ের সাথে যুক্ত থাকি এবং আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি পৌঁছে দিই।