Largest religious gatherings in India: গঙ্গাসাগর মেলা এবং কুম্ভ মেলা – দুটিই ভারতের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু ভিড়ের দিক থেকে গঙ্গাসাগর মেলা কি সত্যিই কুম্ভ মেলার সমকক্ষ? নাকি এখনও পিছিয়ে রয়েছে? আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
গঙ্গাসাগর মেলা ২০২৫: রেকর্ড ভাঙা ভিড়
২০২৫ সালের গঙ্গাসাগর মেলায় অভূতপূর্ব সংখ্যক তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এবছর প্রায় ১ কোটি তীর্থযাত্রী গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করেছেন। এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ লক্ষ বেশি।রাজ্যের বিদ্যুৎ, ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ এবং আবাসন দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, “এবছরের পরিসংখ্যান সমস্ত প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে, যা গঙ্গাসাগর মেলাকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”
মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫: সঙ্গমস্থলে ১০ অভিনব সাধুর অদ্ভুত সাধনা, কারও মাথায় শস্যখেত তো কারও কোমরে
কুম্ভ মেলা ২০২৫: বিশাল জনসমুদ্র
অন্যদিকে, প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫-এ আরও বেশি সংখ্যক তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটেছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং জানিয়েছেন, এবছর প্রায় ৩৫ কোটি তীর্থযাত্রী কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তুলনামূলক পরিসংখ্যান
গঙ্গাসাগর মেলা এবং কুম্ভ মেলার মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়:
বিষয় | গঙ্গাসাগর মেলা ২০২৫ | কুম্ভ মেলা ২০২৫ |
---|---|---|
মোট তীর্থযাত্রী | প্রায় ১ কোটি | প্রায় ৩৫ কোটি (আনুমানিক) |
মেলার স্থান | সাগর দ্বীপ, পশ্চিমবঙ্গ | প্রয়াগরাজ, উত্তরপ্রদেশ |
মেলার সময়কাল | ৯ দিন | ৪৫ দিন |
মেলা এলাকা | প্রায় ১,০০০ হেক্টর | প্রায় ৪,০০০ হেক্টর |
গঙ্গাসাগর মেলার বৈশিষ্ট্য
গঙ্গাসাগর মেলা পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগর দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়। এটি হিন্দুদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মেলা। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী গঙ্গা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমে পুণ্যস্নান করেন।
কুম্ভ মেলার বৈশিষ্ট্য
কুম্ভ মেলা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। এটি প্রতি ১২ বছর অন্তর প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিকে পালাক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলা প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গম রয়েছে।
ভিড়ের মিটারে গঙ্গাসাগর এখনও পিছিয়ে
যদিও গঙ্গাসাগর মেলায় তীর্থযাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, তবুও এটি এখনও কুম্ভ মেলার তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কুম্ভ মেলায় তীর্থযাত্রীর সংখ্যা গঙ্গাসাগর মেলার প্রায় ৩৫ গুণ বেশি।এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
- ভৌগোলিক অবস্থান: গঙ্গাসাগর মেলা একটি দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পৌঁছানো তুলনামূলকভাবে কঠিন। অন্যদিকে, প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলায় যাওয়া অনেক সহজ।
- পরিকাঠামো: কুম্ভ মেলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল অর্থ ব্যয় করে, যা গঙ্গাসাগর মেলার ক্ষেত্রে হয় না।
- ঐতিহাসিক গুরুত্ব: কুম্ভ মেলার ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক গুরুত্ব অনেক বেশি, যা এটিকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করেছে।
গঙ্গাসাগর মেলার উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঙ্গাসাগর মেলার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
- পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি: ৩২টি জাহাজ এবং ১০০টি মোটর লঞ্চ চালু করা হয়েছে তীর্থযাত্রীদের জন্য।
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা: প্রায় ১৩,০০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
- স্বাস্থ্য পরিষেবা: ৫৫০ শয্যার হাসপাতাল, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং জল অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: ১,১৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ২০টি ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য।
কুম্ভ মেলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
কুম্ভ মেলার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে:
- মেলা এলাকা বৃদ্ধি: ২০১৯ সালের তুলনায় মেলা এলাকা ২৫% বাড়ানো হয়েছে।
- পরিকাঠামো উন্নয়ন: ৩০টি পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা: প্রায় ৪৫,০০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার মর্যাদা দেওয়ার দাবি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার কুম্ভ মেলার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে, কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার দিকে নজর দেয় না।
Kumbh Mela 2025: আধ্যাত্মিক উৎসব যা কোটি মানুষের জীবন বদলে দেবে
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গঙ্গাসাগর মেলা এবং কুম্ভ মেলার মধ্যে তুলনা করা উচিত নয়। প্রত্যেকটি মেলার নিজস্ব ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব রয়েছে। তবে, গঙ্গাসাগর মেলার উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সরকারি মনোযোগ এবং অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।
যদিও ভিড়ের দিক থেকে গঙ্গাসাগর মেলা এখনও কুম্ভ মেলার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে, তবে এর গুরুত্ব কম নয়। গঙ্গাসাগর মেলা পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত। এর ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সরকারি উদ্যোগ এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে গঙ্গাসাগর মেলা আরও বেশি তীর্থযাত্রীকে আকৃষ্ট করতে পারে।