German engineer underwater record: জার্মানির এক এরোস্পেস প্রকৌশলী পানামার উপকূলে সমুদ্রের তলদেশে 120 দিন বসবাস করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। 59 বছর বয়সী রুডিগার কোচ সমুদ্রের 11 মিটার (36 ফুট) গভীরে একটি ক্যাপসুলে থেকে এই অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।গত 25 জানুয়ারি 2025 তারিখে রুডিগার কোচ 120 দিন পর সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে আসেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর বিচারক সুসানা রেয়েস তার এই অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর আগে আমেরিকান জোসেফ ডিতুরি ফ্লোরিডার একটি লেগুনে 100 দিন থেকে রেকর্ড গড়েছিলেন, যা কোচ ভেঙে ফেলেছেন।
রুডিগার কোচের এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রমাণ করা যে সমুদ্রের তলদেশে দীর্ঘমেয়াদে মানুষের বসবাস সম্ভব। তিনি বলেন, “আমরা এখানে যা করার চেষ্টা করছি তা হল প্রমাণ করা যে সমুদ্র আসলেই মানব সম্প্রসারণের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ।”কোচের পানির নিচের বাসস্থান ছিল 30 বর্গমিটার (320 বর্গফুট) আয়তনের একটি ক্যাপসুল। এতে আধুনিক জীবনযাপনের প্রায় সব সুযোগ-সুবিধা ছিল – বিছানা, টয়লেট, টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং একটি ব্যায়ামের সাইকেল। তবে শাওয়ারের ব্যবস্থা ছিল না। সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো এবং একটি ব্যাকআপ জেনারেটরও ছিল।ক্যাপসুলটি উত্তর পানামার উপকূল থেকে প্রায় 15 মিনিটের নৌকা যাত্রার দূরত্বে অবস্থিত ছিল। এটি জলের উপরে থাকা আরেকটি কক্ষের সাথে একটি টিউবের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। সেই টিউবের ভিতরে একটি সরু স্পাইরাল সিঁড়ি ছিল, যার মাধ্যমে খাবার ও দর্শনার্থীরা নামতে পারতেন।
ডাক্তারও এই পথে আসা-যাওয়া করতেন।কোচের এই অভিযানের সময় চারটি ক্যামেরা তার প্রতিটি গতিবিধি ধারণ করেছে – তার দৈনন্দিন জীবন, মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং তিনি যে কখনও উপরে আসেননি তার প্রমাণ হিসেবে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর বিচারক সুসানা রেয়েস বলেন, “আমাদের 120 দিনেরও বেশি সময় ধরে 24/7 পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করার জন্য সাক্ষী প্রয়োজন ছিল।”রুডিগার কোচ তার এই অভিযান সম্পর্কে বলেন, “এটা একটা দারুণ অ্যাডভেঞ্চার ছিল এবং এখন যখন শেষ হয়েছে, প্রায় একটা অনুশোচনার অনুভূতি হচ্ছে। আমি এখানে আমার সময়টা খুব উপভোগ করেছি।”তিনি পোর্টহোলের মাধ্যমে দেখা দৃশ্য বর্ণনা করে বলেন, “যখন সব শান্ত হয়ে যায় এবং অন্ধকার নেমে আসে আর সমুদ্র জ্বলজ্বল করে, তখন খুব সুন্দর লাগে। এটা বর্ণনা করা অসম্ভব, নিজে অনুভব করতে হয়।”
কোচের এই অর্জনকে উদযাপন করার জন্য তিনি শ্যাম্পেন পান করেন এবং সিগার ধূমপান করেন। এরপর তিনি ক্যারিবিয়ান সাগরে ঝাঁপ দেন, যেখান থেকে একটি নৌকা তাকে তুলে নিয়ে স্থলভাগে নিয়ে যায় উদযাপনের জন্য।রুডিগার কোচের এই অভিযানের পিছনে আরও গভীর উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি মনে করেন এই ধরনের প্রদর্শনী মানুষের জীবন এবং বসবাসের স্থান সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করতে পারে। তিনি বলেন, “একটি প্রজাতি হিসেবে আমাদের সমুদ্রে বসবাস করা উচিত।”কোচ হলেন ওশান বিল্ডার্স নামক একটি কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যারা সি-পড নামে সৌর শক্তিচালিত ভাসমান বাড়ি তৈরি করে।
এই বাড়িগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3 মিটার উপরে ভাসে এবং পানির নিচেও একটি অতিরিক্ত পড সমর্থন করতে পারে।রুডিগার কোচের এই অর্জন সম্পর্কে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর বিচারক সুসানা রেয়েস বলেন, “এই রেকর্ডটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে অসাধারণগুলোর মধ্যে একটি এবং এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম প্রয়োজন হয়েছে।”জুলস ভার্নের “টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি” উপন্যাসের ক্যাপ্টেন নেমোর একজন প্রশংসক হিসেবে কোচ তার বিছানার পাশে এই 19শ শতাব্দীর বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর একটি কপি রেখেছিলেন।রুডিগার কোচের এই অসাধারণ অর্জনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচের টেবিলে দেওয়া হলো:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
নাম | রুডিগার কোচ |
বয়স | 59 বছর |
পেশা | এরোস্পেস প্রকৌশলী |
দেশ | জার্মানি |
রেকর্ড | পানির নিচে সবচেয়ে বেশি সময় বসবাস |
সময়কাল | 120 দিন |
স্থান | পানামার উপকূল |
গভীরতা | 11 মিটার (36 ফুট) |
ক্যাপসুলের আয়তন | 30 বর্গমিটার (320 বর্গফুট) |
পূর্ববর্তী রেকর্ড | 100 দিন (জোসেফ ডিতুরি, আমেরিকা) |
রুডিগার কোচের এই অভিযান শুধু একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানব সভ্যতার নতুন সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। সমুদ্রের তলদেশে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের সম্ভাব্যতা যাচাই করার মাধ্যমে কোচ মানব বসতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তার এই প্রদর্শনী ভবিষ্যতে সমুদ্রতলে মানব বসতি স্থাপনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।তবে এই ধরনের প্রকল্পের সাথে নানা চ্যালেঞ্জও জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ চাপের পরিবেশে থাকার ফলে মানব শরীরে কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়ার হার বাড়ছে: স্বপ্নের দেশ থেকে পালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ
এছাড়া পানির নিচে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব, খাদ্য ও অন্যান্য সরবরাহের চ্যালেঞ্জ, জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধার ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হবে।রুডিগার কোচের এই সাফল্য আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে মানুষের সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে। প্রযুক্তি ও দৃঢ় সংকল্পের সমন্বয়ে আমরা অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারি। তবে এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।সামগ্রিকভাবে, রুডিগার কোচের এই অভিযান মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের গ্রহের অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা এখনও অনেক রয়েছে।
মন্তব্য করুন