Ashwin month marriage: আশ্বিন মাস এলেই অনেক পরিবারে বিয়ের পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। আশ্বিন মাসে বিয়ে করা নিয়ে বাঙালি সমাজে রয়েছে নানা মত ও পরামর্শ। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, আশ্বিন মাসে বিয়ে করলে সাধারণত বিশেষ কোনো শুভ ফল প্রাপ্তির উল্লেখ পাওয়া যায় না, যার কারণে এই মাসে সাধারণত বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয় না। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ যোগে এই মাসেও বিয়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে।
বিয়ে মানুষের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাই বিয়ের সময় ও তারিখ নির্ধারণে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আজকের এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানব আশ্বিন মাসে বিয়ে করার শাস্ত্রীয় দিক, এর প্রভাব এবং কী কী বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।
জ্যোতিষশাস্ত্রে আশ্বিন মাসের অবস্থান
হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে বারো মাসের মধ্যে কিছু মাস বিয়ের জন্য বিশেষভাবে শুভ হিসেবে বিবেচিত হয়। মাঘ, ফাল্গুন, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও অগ্রহায়ণ – এই ছয়টি মাসে বিবাহ অনুষ্ঠান করা হলে বিশেষ শুভ ফল পাওয়া যায় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।
আশ্বিন মাস এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। এর প্রধান কারণ হলো, এই মাসে বিয়ে করলে দাম্পত্য জীবনে যে বিশেষ কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, তার স্পষ্ট উল্লেখ জ্যোতিষশাস্ত্রে পাওয়া যায় না। তবে এর অর্থ এই নয় যে আশ্বিন মাসে বিয়ে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আশ্বিন মাসে বিয়ের শাস্ত্রীয় বিধান
শাস্ত্র অনুযায়ী, আশ্বিন মাসে সাধারণত বিয়ের দিন নির্ধারণ করা হয় না। কিন্তু যদি কোনো জরুরি কারণে এই মাসে বিয়ে দিতে হয়, তাহলে সুতহিবুক যোগে বিয়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে। সুতহিবুক যোগ হলো একটি বিশেষ জ্যোতিষীয় অবস্থা যা অনেক দোষ নাশ করে এবং শুভ ফল প্রদান করে।
সুতহিবুক যোগ তখনই হয় যখন বিবাহের সময় লগ্ন, পঞ্চম, নবম বা দশম ভাবে বৃহস্পতি গ্রহ অবস্থান করে। এই যোগের প্রভাবে লগ্নের গ্রহসংস্থান জনিত সকল প্রকার দোষ দূর হয়ে যায় এবং বিয়ে শুভ হয়।
তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার ১০টি কার্যকরী টোটকা: আপনার জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে
আশ্বিন মাসে বিয়ের সম্ভাব্য প্রভাব
জ্যোতিষীদের মতে, আশ্বিন মাসে বিয়ে করলে নিম্নোক্ত প্রভাবগুলো দেখা দিতে পারে:
দাম্পত্য জীবনে প্রভাব
আশ্বিন মাসে বিয়ে হলে দাম্পত্য জীবনে সাধারণত কোনো বিশেষ শুভত্বের প্রভাব পড়ে না। তবে এর মানে এই নয় যে দাম্পত্য জীবন অশুভ হবে। সঠিক লগ্ন ও যোগ দেখে বিয়ে করলে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপন করা সম্ভব।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব
এই মাসে বিয়ে করলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিশেষ উন্নতি বা অবনতির কথা শাস্ত্রে উল্লেখ নেই। তবে বর-কনের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে সফলতা অর্জন সম্ভব।
সন্তান-সন্ততির ক্ষেত্রে
আশ্বিন মাসে বিয়ে হলে সন্তান-সন্ততি নিয়ে কোনো বিশেষ সমস্যার কথা জ্যোতিষশাস্ত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় না। সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যবান সন্তানের জন্ম হতে পারে।
আশ্বিন মাসে বিয়ের শুভ তারিখ
যদিও আশ্বিন মাস বিয়ের জন্য আদর্শ সময় নয়, তবুও জরুরি প্রয়োজনে এই মাসে কিছু নির্দিষ্ট তারিখে সুতহিবুক যোগে বিয়ে করা যায়। সাধারণত আশ্বিন মাসে ৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৬ তারিখে বিয়ের জন্য শুভ মুহূর্ত পাওয়া যায়।
তবে এই তারিখগুলোও নির্ভর করে প্রতি বছরের নক্ষত্র, তিথি ও অন্যান্য জ্যোতিষীয় গণনার উপর। তাই বিয়ের আগে অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বিয়ের জন্য শুভ মাসগুলো
আশ্বিন মাসের তুলনায় যে মাসগুলোতে বিয়ে করা অধিক শুভ বলে বিবেচিত হয়:
মাঘ মাস
মাঘ মাস বিয়ের জন্য অত্যন্ত শুভ। এই মাসে বিয়ে হলে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।
ফাল্গুন মাস
ফাল্গুন মাসও বিয়ের জন্য বিশেষ উপযোগী। এই মাসে বিয়ে করলে বর-কনের মধ্যে প্রেম ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।
বৈশাখ মাস
বৈশাখ মাসে বিয়ে হলে নতুন দম্পতির জীবনে নতুন শুরুর সূচনা হয় এবং উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়।
জ্যৈষ্ঠ মাস
জ্যৈষ্ঠ মাসে বিয়ে করলে সংসারে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে এবং সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
আশ্বিন মাসে বিয়ে করার আগে যা বিবেচনা করবেন
জ্যোতিষীর পরামর্শ
আশ্বিন মাসে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর পরামর্শ নিন। তিনি বর-কনের জন্মকুণ্ডলী বিশ্লেষণ করে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
সুতহিবুক যোগের গুরুত্ব
যদি আশ্বিন মাসে বিয়ে করতেই হয়, তাহলে অবশ্যই সুতহিবুক যোগের সময় বিয়ে সম্পন্ন করুন। এটি অনেক দোষ দূর করে এবং বিয়েকে শুভ করে তোলে।
পারিবারিক সম্মতি
বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পরিবারের সবার মতামত ও সম্মতি নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে বয়স্কদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ কাজে আসতে পারে।
আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়
আজকের যুগে অনেকেই জ্যোতিষশাস্ত্রের পাশাপাশি ব্যবহারিক দিকগুলোও বিবেচনা করেন। আশ্বিন মাসে আবহাওয়া সাধারণত মনোরম থাকে, যা বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য উপযোগী। তবে শাস্ত্রীয় বিধান মেনে চলার ঐতিহ্যও আমাদের সংস্কৃতির অংশ।
ব্যবহারিক সুবিধা
আশ্বিন মাসে বিয়ে করলে আবহাওয়াগত সুবিধা পাওয়া যায়। এই সময় বৃষ্টি কম হয় এবং তাপমাত্রাও সহনীয় থাকে।
সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা
যদিও জ্যোতিষশাস্ত্রে আশ্বিন মাস বিয়ের জন্য আদর্শ নয়, তবুও সমাজে এই মাসে বিয়ে হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক পরিবার জরুরি প্রয়োজনে এই মাসে বিয়ে সম্পন্ন করে থাকেন।
বিশেষ পরিস্থিতিতে আশ্বিন মাসে বিয়ে
কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে আশ্বিন মাসে বিয়ে করতে হতে পারে:
জরুরি কারণে
পারিবারিক বা সামাজিক জরুরি প্রয়োজনে এই মাসে বিয়ে করতে হলে সুতহিবুক যোগে বিয়ে সম্পন্ন করা যায়।
অন্য মাসে সুবিধা না থাকলে
যদি বিয়ের জন্য অন্য কোনো শুভ মাসে সুবিধাজনক সময় না পাওয়া যায়, তাহলে জ্যোতিষীর পরামর্শ নিয়ে আশ্বিন মাসে বিয়ে করা যেতে পারে।
আশ্বিন মাসে বিয়ে করার পর করণীয়
যদি আশ্বিন মাসে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে, তাহলে দাম্পত্য জীবনকে সুখী করতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার:
পারস্পরিক বোঝাপড়া
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা। এটি যে কোনো মাসে বিয়ে হোক না কেন, সবসময়ই প্রযোজ্য।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন
নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন ও পূজা-পার্বণ করলে পারিবারিক সুখ-শান্তি বৃদ্ধি পায়।
সৎ কর্মে নিয়োজিত থাকা
সততা ও নিষ্ঠার সাথে কর্মক্ষেত্রে কাজ করলে জীবনে সফলতা আসে, যা দাম্পত্য জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আশ্বিন মাসে বিয়ে করা সম্পর্কে জ্যোতিষশাস্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে এই মাস বিয়ের জন্য বিশেষভাবে শুভ নয়, তবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধও নয়। জরুরি প্রয়োজনে সুতহিবুক যোগে এই মাসে বিয়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি অন্য কোনো শুভ মাসে বিয়ের ব্যবস্থা করা যায়।
মনে রাখতে হবে যে, দাম্পত্য জীবনের সুখ-দুঃখ শুধুমাত্র বিয়ের মাসের উপর নির্ভর করে না। পারস্পরিক ভালোবাসা, বোঝাপড়া, সম্মান ও সহযোগিতার মাধ্যমেই একটি সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ে তোলা সম্ভব। তাই আশ্বিন মাসে বিয়ে হলেও সঠিক মানসিকতা ও আচরণের মাধ্যমে একটি আদর্শ পারিবারিক জীবন যাপন করা যায়।