Godarej business history starting from locks: ১৮৯৭ সালে একজন তরুণ আইনজীবী আর্দেশির গোদরেজ তালা তৈরির একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আজ সেই ব্যবসা একটি বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে যা তার ১২৬ বছরের দীর্ঘ যাত্রা উদযাপন করছে।গোদরেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি ছোট্ট তালা তৈরির কারখানা থেকে। কিন্তু আজ তারা রকেট নির্মাণের মতো জটিল প্রযুক্তিতেও সফল।
এই অসাধারণ সাফল্যের পিছনে রয়েছে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, গ্রাহকের চাহিদা বোঝার ক্ষমতা এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার দক্ষতা।গোদরেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল খুব সাধারণ একটি ঘটনা থেকে। আর্দেশির গোদরেজ মুম্বাইয়ে চুরির খবর শুনে উপলব্ধি করলেন যে মানুষের নিরাপত্তার জন্য ভালো তালার প্রয়োজন। তিনি তখন একটি অভেদ্য তালা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন যা ভারতের গরম আবহাওয়ায় মরিচা ধরবে না।তিনি মাত্র ২০ বর্গমিটার জায়গায় ৪০টি স্টিম প্রেস এবং ১২ জন কর্মী নিয়ে তালা তৈরির কারখানা শুরু করেন। তার তৈরি তালাগুলো দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯০৯ সালে তিনি বিশ্বের প্রথম স্প্রিংবিহীন তালা আবিষ্কার করেন।
এমনকি ১৯২১ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবার ভারত সফরে এসে গোদরেজের তালা ব্যবহার করেছিলেন।গোদরেজের সাফল্যের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন আর্দেশিরের ভাই পিরোজশা গোদরেজ। তিনি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কোম্পানিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তিনি মুম্বাইয়ে ৪,৩০০ একর জমি কিনে পিরোজশানগর তৈরি করেন, যা আজ গোদরেজের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।গোদরেজ তাদের ১২৬ বছরের যাত্রায় নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, লাইসেন্স রাজ, ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারীকরণ – এসব কিছুর মধ্য দিয়েই তারা সফলভাবে এগিয়ে গেছে। তারা সবসময় গ্রাহকের চাহিদা বুঝে সেই অনুযায়ী পণ্য তৈরি করেছে।গোদরেজের মূল কৌশল ছিল সাশ্রয়ী মূল্যের সহজ ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি করা।
মাত্র ১০ হাজার টাকায় ২৫টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া: কম পুঁজিতে বড় লাভের সুযোগ
তারা কম দামে ভালো মানের পণ্য বিশাল পরিমাণে বিক্রি করার নীতি অনুসরণ করেছে। এর পাশাপাশি তারা অন্যান্য কোম্পানি অধিগ্রহণের মাধ্যমেও ব্যবসা বাড়িয়েছে।বর্তমানে গোদরেজ গ্রুপের অধীনে রয়েছে Godrej Consumer Products, Godrej Properties, Godrej Industries, Godrej Agrovet সহ বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি। এসব কোম্পানি আর্থিক পণ্য, উৎপাদন, FMCG পণ্য, রিয়েল এস্টেট, কৃষি সহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছে। এমনকি তারা ইসরোর চন্দ্রযান ও মঙ্গলযান মিশনের জন্য মহাকাশযান সরঞ্জাম তৈরি করেছে।গোদরেজের এই অসাধারণ সাফল্যের পিছনে রয়েছে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা।
তারা সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছে। যেমন ১৯৫২ সালে তারা বিশ্বের প্রথম প্রাণীজ চর্বিমুক্ত সাবান তৈরি করে। ১৯৫৮ সালে তারা রেফ্রিজারেটর তৈরি শুরু করে। ১৯৯০ সালে গোদরেজ প্রপার্টিজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে তারা কৃষি খাতে প্রবেশ করে।গোদরেজের সাফল্যের আরেকটি কারণ হল তাদের পরিবেশ সচেতনতা। তারা ২০১৬ সাল থেকে জল-ইতিবাচক হয়েছে। অর্থাৎ তারা যতটা জল ব্যবহার করে তার চেয়ে বেশি জল সংরক্ষণ করে। এছাড়া তারা বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমও পরিচালনা করে।
গোদরেজ গ্রুপের বর্তমান বার্ষিক রাজস্ব ৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। তাদের পণ্য বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে বিক্রি হয়। তারা প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস কোম্পানি একাই ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪,৭৯৬ কোটি টাকার রাজস্ব অর্জন করেছে।গোদরেজের এই সাফল্য আসলে তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনার ফল। তারা সবসময় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন পিরোজশা গোদরেজ যখন মুম্বাইয়ে বিশাল জমি কিনেছিলেন তখন অনেকেই তা নিয়ে সমালোচনা করেছিল। কিন্তু আজ সেই জমির মূল্য প্রায় ৪,৩৫,০০০ কোটি টাকা, যা গোদরেজের সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধনের ৪ গুণ।গোদরেজের সাফল্যের আরেকটি কারণ হল তাদের পারিবারিক ঐক্য। যদিও সম্প্রতি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কিছু মতভেদ দেখা দিয়েছিল, কিন্তু তারা তা সমাধান করে নিয়েছেন। এখন পরিবারের নতুন প্রজন্মের সদস্যরা যেমন নায়রিকা হোলকার ও পিরোজশা গোদরেজ কোম্পানির নেতৃত্বে এসেছেন।
গোদরেজের ১২৬ বছরের যাত্রা আসলে ভারতের শিল্পায়নের ইতিহাস। তারা ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে শুরু করে স্বাধীন ভারতের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে গেছে। তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি ছোট্ট তালা তৈরির কারখানা থেকে। আজ তারা মহাকাশযানের জন্য যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। এটাই গোদরেজের সবচেয়ে বড় সাফল্য।গোদরেজের এই সাফল্য থেকে আমরা শিখতে পারি যে কীভাবে একটি ছোট আইডিয়া থেকে একটি বিশাল ব্যবসা গড়ে তোলা যায়। তারা সবসময় গ্রাহকের চাহিদা বুঝে সেই অনুযায়ী পণ্য তৈরি করেছে। পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে তারা সবসময় এগিয়ে ছিল। এর ফলে তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছে।গোদরেজের সাফল্যের কাহিনী আমাদের শেখায় যে ব্যবসায়ে সফল হতে হলে শুধু লাভের দিকে তাকালে চলবে না।
জীবন বদলে দিতে পারে APJ Abdul Kalam-এর এই ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি
সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। গোদরেজ সবসময় পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে। এর ফলে তারা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।সবশেষে বলা যায়, গোদরেজের ১২৬ বছরের যাত্রা আসলে একটি সাধারণ আইডিয়া থেকে একটি বিশাল স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার গল্প। তারা প্রমাণ করেছে যে কঠোর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। গোদরেজের এই সাফল্যের কাহিনী নিঃসন্দেহে অনেক উদ্যোক্তাকে অনুপ্রাণিত করবে।