Gold Price in Kolkata 12 november 2024: ১২ই নভেম্বর ২০২৪-এ কলকাতায় সোনার দাম অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২৪ ক্যারাট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ৮০,৩৫০ টাকা এবং ২২ ক্যারাট সোনার দাম ৭৩,৬৫০ টাকায় পৌঁছেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সোনার দাম প্রায় ১.১১% বেড়েছে, যদিও গত মাসের তুলনায় ২.১২% কমেছে।
এই মূল্যবৃদ্ধির পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা সোনার দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া ভারতীয় টাকার মূল্যমান কমে যাওয়া এবং আসন্ন উৎসব মরসুমে চাহিদা বৃদ্ধিও সোনার দাম বাড়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
BSA Gold Star 650: ভারতে ফিরল কিংবদন্তি ব্রিটিশ মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড
বার্কার আরও উল্লেখ করেছেন যে, সোনার দুই বৃহত্তম ভোক্তা দেশ ভারত ও চীনের অর্থনীতির ক্রমাগত বৃদ্ধি চাহিদা বাড়াতে থাকবে। এটি উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে সোনা খনন বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে যে কোনও সরবরাহ বৃদ্ধি হতে পারে তা অফসেট করতে পারে।কলকাতায় সোনার বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধি বেশ প্রভাব ফেলেছে। শহরের বিভিন্ন জুয়েলারি শপে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। অনেকেই আসন্ন শারদীয় উৎসব ও বিয়ের মরসুমের আগে সোনা কিনতে আগ্রহী। তবে অনেকেই উচ্চ মূল্যের কারণে কিনতে দ্বিধাগ্রস্ত।
স্থানীয় এক জুয়েলারি মালিক জানিয়েছেন, “গত কয়েকদিনে গ্রাহকদের সংখ্যা বেড়েছে। তবে অনেকেই শুধু দাম জানতে আসছেন, কিনছেন না। যারা কিনছেন তারাও কম ওজনের গয়না পছন্দ করছেন।”অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সোনায় বিনিয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। গোল্ড ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং সভরেন গোল্ড বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে। অনেকে মনে করছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সোনা একটি নিরাপদ বিনিয়োগ।
কলকাতার একজন আর্থিক পরামর্শদাতা বলেছেন, “বর্তমানে সোনায় বিনিয়োগ করা যুক্তিযুক্ত। তবে সতর্কতার সাথে করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য সোনা ভালো বিকল্প হতে পারে।”সোনার দামের এই ঊর্ধ্বগতি শুধু কলকাতায় নয়, সারা ভারতেই দেখা যাচ্ছে। দিল্লিতে ২৪ ক্যারাট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ৭৯,৫০০ টাকা এবং মুম্বাইতে ৭৯,৩৫০ টাকায় পৌঁছেছে। চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতেও একই ধরনের মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। অ্যালেক্স এবকারিয়ান, অ্যালেজিয়েন্স গোল্ডের সিওও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, “বছরের শেষের আগে সোনার দাম ৩০০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।”
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায়: জনগণের জীবনযাত্রা কঠিন হচ্ছে
এবকারিয়ান বলেছেন, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির শক্তিশালী ও চলমান ক্রয়; বন্ডের তুলনায় সোনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে এমন নিম্ন সুদের পরিবেশ; বাড়তি অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এমন দুর্বল চাকরির বাজার; চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা; মন্দার ঝুঁকি; ডলারের ক্রমাগত অবনতি; বর্ধিত ঘাটতি ব্যয়; এবং ক্রমাগত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি – এই সবকিছুই সোনার দাম বাড়ার কারণ হতে পারে।
তবে সব বিশেষজ্ঞ একমত নন যে নভেম্বর মাসে সোনার দাম দ্রুত বাড়বে। মাইকেল মার্টিন, ট্রেডিং ব্লকের মার্কেট স্ট্র্যাটেজি ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “নির্বাচনের পর নভেম্বরে সোনার দাম কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে। তবে এটি স্বল্পমেয়াদী হতে পারে, কারণ কোনও দলেরই বাড়তি ঘাটতি মোকাবেলার জন্য স্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। আমরা যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি, তাতে সোনা সাধারণত ভাল কাজ করে, যদিও এটি একটি অস্থির যাত্রা হতে পারে।”সামগ্রিকভাবে, কলকাতায় সোনার দাম বৃদ্ধি শহরের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলছে। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশল নিয়ে আসছেন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে। অনেকে কম ওজনের গয়না বা নকশায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন যাতে দাম কম হয়। আবার কেউ কেউ পুরনো সোনা বিক্রি করে নতুন কিনছেন।
অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগের নতুন পথ খুঁজছেন। গোল্ড ইটিএফ, সভরেন গোল্ড বন্ড ছাড়াও ডিজিটাল গোল্ড বা গোল্ড সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো বিকল্পগুলি জনপ্রিয় হচ্ছে। এগুলি ভৌত সোনা রাখার ঝুঁকি ও খরচ কমায়।তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতাও দিচ্ছেন। তারা বলছেন, শুধুমাত্র মূল্যবৃদ্ধির আশায় সোনায় বিনিয়োগ করা উচিত নয়। পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণের অংশ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ করা উচিত।
সামগ্রিকভাবে, কলকাতায় সোনার দাম বৃদ্ধি একদিকে যেমন চিন্তার কারণ হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি নতুন সুযোগও সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনগুলোতে কীভাবে এই প্রবণতা চলে তা লক্ষ্য করার বিষয়। তবে এটা স্পষ্ট যে, সোনার চকচকে আবেদন কলকাতাবাসীর কাছে অটুট রয়েছে, এবং এই মূল্যবান ধাতু শহরের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূ অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে
মন্তব্য করুন