ভারতের ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি বড় সুখবর এসেছে। শিগগিরই দেশের বাজারে পাওয়া যাবে ইনসুলিন ইনহেলার, যা ইনজেকশনের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীরা সুইয়ের ব্যথা এড়িয়ে শ্বাসের মাধ্যমে ইনসুলিন গ্রহণ করতে পারবেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পাশাপাশি চিকিৎসাকে আরও সহজ করে তুলবে। এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশে জনপ্রিয় হয়েছে, এবং এখন ভারতেও এর প্রবেশ ঘটতে চলেছে।
এই ইনসুলিন ইনহেলারটি কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে এটি বাজারে এলো, তা জানতে অনেকেই উৎসুক। জানা গেছে, এটি মূলত আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ম্যানকাইন্ড কর্পোরেশন দ্বারা উন্নত করা হয়েছে, যারা ‘আফ্রেজা’ নামে এই পণ্যটি বাজারে এনেছে। ভারতে এটি ছাড়পত্র পেয়েছে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI) থেকে, যা নিশ্চিত করে যে এটি নিরাপদ এবং কার্যকর। এই ইনহেলারটি পাউডার আকারে ইনসুলিন সরবরাহ করে, যা একটি ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে পৌঁছে যায়। এরপর তা রক্তে মিশে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই এটি ভারতের বাজারে ব্যাপকভাবে পাওয়া যাবে।
ইনসুলিন ইনহেলারের ব্যবহার খুবই সহজ। এটি ব্যবহার করতে রোগীদের একটি ছোট ইনহেলার ডিভাইসে ইনসুলিন পাউডারের কার্টিজ বসাতে হবে। তারপর মুখে ডিভাইসটি রেখে গভীর শ্বাস নিতে হবে, যাতে ইনসুলিন ফুসফুসে পৌঁছায়। এটি ঐতিহ্যবাহী ইনজেকশনের তুলনায় অনেক দ্রুত কাজ করে, কারণ ফুসফুস থেকে রক্তে ইনসুলিন শোষণের গতি বেশি। তবে, এটি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপযুক্ত এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার এখনও পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করা যাবে না, কারণ ডোজ নির্ধারণে সতর্কতা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস ভারতে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (IDF) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতে প্রায় ৭.৭ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন, এবং এই সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ইনসুলিন ইনহেলার একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে। বিশেষ করে যারা ইনজেকশন নিতে ভয় পান বা নিয়মিত সুই ব্যবহারে অস্বস্তি বোধ করেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ। তবে, এর দাম এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সূত্রের খবর, ভারতে এটির দাম প্রতি ডোজ ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, যা ইনজেকশনের তুলনায় বেশি।
এই প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যাদের ফুসফুসের সমস্যা, যেমন অ্যাজমা বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) আছে, তারা এটি ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া ধূমপায়ীদের জন্যও এটি নিষিদ্ধ। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি টাইপ-১ এবং টাইপ-২ উভয় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত, তবে নিয়মিত ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই ধরনের প্রযুক্তিকে স্বাগত জানালেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে যে, ভবিষ্যতে এটিকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা হবে, যাতে বেশি মানুষ এর সুবিধা পায়। এছাড়া, দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোও এই প্রযুক্তির স্বল্পমূল্যের সংস্করণ তৈরির চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভারতের ডায়াবেটিস চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত খুলতে পারে, যদি এর প্রাপ্যতা ও সাশ্রয়ীতা নিশ্চিত করা যায়।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, ইনসুলিন ইনহেলার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি আশার আলো। এটি শুধু চিকিৎসাকে সহজ করবে না, বরং অনেকের জীবনে আরাম ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনবে। তবে, এর সঠিক ব্যবহার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ভারতের বাজারে এটি পুরোপুরি চালু হলে, লাখো রোগীর জীবনে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।