কাশির শব্দ শুনেই যক্ষ্মা ধরা ফেলবে Google HeAR AI – এক যুগান্তকারী আবিষ্কার!

Google সম্প্রতি একটি অত্যাধুনিক AI সিস্টেম উন্মোচন করেছে যা শুধুমাত্র কাশি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনেই যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত করতে পারে। এই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবার অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়াতে এবং সীমিত সম্পদের এলাকায় যক্ষ্মা…

Debolina Roy

 

Google সম্প্রতি একটি অত্যাধুনিক AI সিস্টেম উন্মোচন করেছে যা শুধুমাত্র কাশি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনেই যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত করতে পারে। এই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবার অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়াতে এবং সীমিত সম্পদের এলাকায় যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে বিপ্লব আনতে পারে।

Google-এর HeAR AI মডেল

Google-এর Health Acoustic Representations (HeAR) প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই AI মডেলটি ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি অডিও নমুনা দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাশি, নাক ঝাড়া এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ। এই মডেলটি সূক্ষ্ম অ্যাকাস্টিক সংকেত থেকে যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের রোগ সনাক্ত করতে পারে।

HeAR AI মডেলটি কাশির প্যাটার্নে সূক্ষ্ম পার্থক্য ধরতে পারে, যা যক্ষ্মা সনাক্তকরণের নির্ভুলতা ও গতি বাড়াতে সাহায্য করে। রোগীদের কাশি শোনার মাধ্যমে, এটি তাদের স্বাস্থ্যসেবা যাত্রার প্রাথমিক পর্যায়েই ট্রাইএজ করতে সাহায্য করতে পারে।

ভারতীয় স্টার্টআপের সাথে সহযোগিতা

Google ভারতীয় শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যসেবা AI স্টার্টআপ Salcit Technologies-এর সাথে অংশীদারিত্ব করেছে[2]। Salcit Technologies-এর Swaasa নামক একটি প্রোডাক্ট রয়েছে যা AI ব্যবহার করে কাশির শব্দ বিশ্লেষণ করে ফুসফুসের স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে, তারা স্মার্টফোনে এই প্রযুক্তি ইনস্টল করার পরিকল্পনা করছে, যাতে সীমিত স্বাস্থ্যসেবা সম্পদের এলাকায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে এটি সহজেই পৌঁছে যায়।

যক্ষা রোগের লক্ষণগুলি জানুন – এগুলি উপেক্ষা করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে!

যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব

যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ যা সাধারণত ফুসফুসকে প্রভাবিত করে এবং বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন প্রায় ৪,৫০০ মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়[5]। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মায় মারা গিয়েছিল[2]। ভারতে প্রতি বছর এই মৃত্যুর প্রায় ২৫% ঘটে।

AI মডেলের কার্যপ্রণালী

Google-এর HeAR AI মডেলটি দুই সেকেন্ডের অডিও ক্লিপ ব্যবহার করে যাতে মানুষের কাশি, হাঁচি, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নাক ঝাড়ার শব্দ থাকে। এটি একটি সুস্থ শ্বাসযন্ত্রের শব্দের প্যাটার্ন শেখে। তারপর AI মডেলটি রোগীর দেওয়া অডিও নমুনায় কোনো অস্বাভাবিকতা খুঁজে বের করতে পারে যা সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ইঙ্গিত করে।

মডেলটি রোগীর কাশির শব্দকে একটি ডাটাবেসের সাথে তুলনা করে যক্ষ্মার সূচক খোঁজে। এরপর রোগীরা আরও চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

২০টি সাইলেন্ট কিলার: পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে প্রায়শই উপেক্ষিত ক্যান্সারের লক্ষণগুলি

অন্যান্য রোগের জন্য AI মডেলের কার্যকারিতা

গবেষণা দেখিয়েছে যে এই ধরনের AI মডেল অন্যান্য রোগ সনাক্তকরণেও কার্যকর হতে পারে:

– ক্যান্সারের টিউমার সনাক্তকরণ
– স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ খোঁজা
– মায়োপিয়া সনাক্তকরণ
– হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ খোঁজা

রেডিওলজিস্টরা ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল ইমেজিং বিশ্লেষণের গতি বাড়াতে GenAI টুল ব্যবহার করছেন।

AI-এর মাধ্যমে কাশি বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ

যক্ষ্মা রোগের জন্য AI-চালিত কাশি বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের দুটি প্রধান ব্যবহার দেখা গেছে:

1. যক্ষ্মা রোগ এবং/অথবা চিকিৎসার অগ্রগতির পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য AI-চালিত কাশির সংখ্যা পর্যবেক্ষণ
2. যক্ষ্মা স্ক্রিনিংয়ের জন্য AI-চালিত কাশির শব্দের শ্রেণীবিন্যাস

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যদিও এই প্রযুক্তি আশাব্যঞ্জক, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

– ক্লিনিকাল প্র্যাকটিসে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন
– পরিষ্কার অডিও নমুনা নিশ্চিত করা
– গ্রামীণ এলাকায় ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তির সাথে পরিচিতি

AI দিয়ে তৈরি ছবি চিনতে পারবেন এই ৫টি কৌশলে!

Google এই বায়োঅ্যাকাস্টিক AI-এর অন্যান্য প্রয়োগও অন্বেষণ করছে, যেমন তাইওয়ানের Chang Gung Memorial Hospital-এ আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে প্রাথমিক স্তন ক্যান্সার সনাক্তকরণ।

Google-এর HeAR AI মডেল যক্ষ্মা রোগ সনাক্তকরণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি বিশেষ করে সীমিত সম্পদের দেশগুলিতে প্রাথমিক স্ক্রিনিং ও রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য আরও গবেষণা ও ক্লিনিকাল পরীক্ষা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে, এই ধরনের AI-ভিত্তিক টুল স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের হাতে একটি শক্তিশালী সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে, যা দ্রুত ও সঠিক রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে।

 

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।