গুগল সম্প্রতি গুগল ম্যাপস এবং গুগল আর্থ-এ একটি অত্যাধুনিক “টাইম ট্রাভেল” ফিচার চালু করেছে, যা ব্যবহারকারীদের অতীতে ফিরে গিয়ে বিভিন্ন স্থানের আগের রূপ দেখার সুযোগ দিচ্ছে। এই অসাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের বার্লিন, লন্ডন এবং প্যারিসের মতো বিখ্যাত শহরগুলোর ১৯৩০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রূপের পরিবর্তন দেখার সুযোগ দিচ্ছে।
এই অভিনব টুলটি বাস্তবিকভাবেই সময়ের মধ্য দিয়ে ভ্রমণের অনুভূতি দেয়, যা রাস্তা, ভবন এবং শহরগুলোর পুরোনো চিত্র দেখাতে সক্ষম। ব্যবহারকারীরা এর মাধ্যমে স্থানগুলো কীভাবে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে তা বুঝতে পারবেন। প্রযুক্তির এই অগ্রগতি আমাদের সবাইকে ২০-৩০ বছর আগের বিশ্বের একটি ডিজিটাল ঝলক দেখার সুযোগ দিচ্ছে, যদিও বাস্তবে সময়ের মধ্যে ভ্রমণ অসম্ভব।
গুগলের ব্লগ পোস্ট অনুযায়ী, এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রধান শহরগুলোর অতীত দেখতে পারবেন, যা ১৯৩০ সাল পর্যন্ত যায়। এর ফলে, উদাহরণস্বরূপ, আপনি দেখতে পারবেন লন্ডন ১৯৩০ সালে কেমন দেখাতো এবং বর্তমানে কতটা পরিবর্তিত হয়েছে। এই ডিজিটাল টাইম ক্যাপসুল আমাদের ঐতিহাসিক অন্বেষণের একটি সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা উন্মোচন করেছে।
“যদি আপনি কখনও ডক ব্রাউনের মতো টাইম ট্রাভেলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে থাকেন, এখন আপনার সুযোগ,” এমনটাই বলেছেন গুগল স্ট্রিট ভিউয়ের প্রোডাক্ট ম্যানেজার বিনয় শেঠ একটি ব্লগ পোস্টে। “আমরা ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন পুরনো স্ট্রিট ভিউ সংগ্রহ থেকে ঐতিহাসিক চিত্র সংগ্রহ করে বিশ্বের একটি ডিজিটাল টাইম ক্যাপসুল তৈরি করেছি।”
এই অসাধারণ ফিচার ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ। প্রথমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে গুগল ম্যাপস বা গুগল আর্থ খুলুন। এরপর যে স্থানের অতীত দেখতে চান, সেই লোকেশন সার্চ করুন। পরবর্তী ধাপে “লেয়ার্স” অপশনে গিয়ে “টাইম ল্যাপস” সিলেক্ট করুন। এই সহজ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আপনি দেখতে পারবেন কীভাবে সেই স্থান বছরের পর বছর ধরে পরিবর্তিত হয়েছে।
গুগলের টাইম ট্র্যাভেল ফিচারে কেবল স্থির চিত্রই নয়, বরং ব্যবহারকারীদের ইন্টার্যাক্টিভভাবে অতীতের দৃশ্যগুলি অন্বেষণ করার সুযোগ দেয়। প্রতিটি ঐতিহাসিক চিত্র ৩৬০-ডিগ্রি প্যানোরামা হিসাবে ক্যাপচার করা হয়, যা ব্যবহারকারীদের একটি নির্দিষ্ট বছরে সেই স্থানে “দাঁড়ানোর” একটি বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা দেয়। ব্যবহারকারীরা চারপাশে দেখতে, জুম করতে এবং তাদের পরিবেশ অন্বেষণ করতে পারেন, ঠিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অভিজ্ঞতার মতো।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আজ থেকে মাত্র ৫ বছর আগে যে ফিচারগুলো আমরা কল্পনাও করতে পারিনি, সেগুলো এখন আমরা নিয়মিত ব্যবহার করছি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল AI, যা মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে। এখন গুগল একটি এমন সুবিধা নিয়ে এসেছে, যার মাধ্যমে আপনি ৩০-৪০ বছর আগে আপনার শহর কেমন দেখাতো তা পরীক্ষা করতে পারেন।
গুগলের স্ট্রিট ভিউ ফিচারটি কার-মাউন্টেড ক্যামেরা ব্যবহার করে বিশ্বের স্ট্রিট-লেভেল ফটো ক্যাপচার করে, এবং সেই চিত্রগুলিকে গুগলের মানচিত্রে সুপারইম্পোজ করে বাস্তব বিশ্বের একটি ভার্চুয়াল উপস্থাপনা তৈরি করে। গুগলের গাড়িগুলি বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে ঘুরেছে, কিন্তু এটাই প্রথমবার সার্চ জায়ান্ট একাধিক সংস্করণের চিত্র জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ করেছে।
“এখন, স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে, আপনি দেখতে পারেন একটি ল্যান্ডমার্ক কীভাবে বিকশিত হয়েছে, যেমন নিউ ইয়র্ক সিটিতে ফ্রিডম টাওয়ার বা ব্রাজিলের ফোর্টালেজায় ২০১৪ বিশ্বকাপ স্টেডিয়াম,” বলেছেন শেঠ। এই ধরনের ঐতিহাসিক তুলনা আমাদের বিশ্বের পরিবর্তন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি দেয়।
গুগল স্ট্রিট ভিউ আপডেটও উল্লেখযোগ্য। নতুন আপডেটে কার এবং ট্র্যাকার দ্বারা তোলা নতুন ফটো যোগ করা হয়েছে, যা ভিজ্যুয়াল ডাটাবেস ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছে। স্ট্রিট ভিউতে ২৮০ বিলিয়নেরও বেশি ফটো অ্যাক্সেস করে, ব্যবহারকারীরা এখন শহরগুলি আরও সহজে অন্বেষণ করতে এবং স্থান খুঁজতে পারবেন, যা তাদের বিশ্বভ্রমণের একটি সত্যিকারের অভিজ্ঞতা দেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফিচার শুধু নস্টালজিয়ার জন্য নয়, ঐতিহাসিক গবেষণা, শহর পরিকল্পনা, পরিবেশগত পরিবর্তন নিরীক্ষণ এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যেও অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে। এটি পর্যটকদের জন্যও একটি অসাধারণ সম্পদ, যারা একটি স্থান ভ্রমণের আগে তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বুঝতে চান।
গুগল টাইম ট্র্যাভেল ফিচারের হিস্টোরিক্যাল টাইমলাইন স্লাইডার হল একটি মূল উপাদান। এটি ব্যবহারকারীদের একটি হরিজন্টাল স্লাইডার প্রদান করে যা নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষিত চিত্রগুলির বিভিন্ন বছর এবং ঋতু স্ক্রোল করার অনুমতি দেয়। এই ফিচারটি ব্যবহারকারীদের একটি সময়কাল নির্বাচন করতে দেয়, যা তাদের দেখতে সাহায্য করে একটি স্থান বছর আগে কেমন দেখাতো এবং আজ কীভাবে দেখায় তার তুলনা করতে পারেন।
বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, বিশেষ করে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে। শহরগুলি অভূতপূর্ব গতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, এবং প্রায় প্রতিটি স্থান মাত্র কয়েক দশক আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। যদিও ৩০ বা ৪০ বছর আগের স্থানে শারীরিকভাবে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, প্রযুক্তি আমাদের কিছুটা হলেও অতীতে উঁকি দেওয়ার সুযোগ দেয়।
গুগলের এই নতুন টাইম ট্র্যাভেল ফিচার আমাদের অতীতকে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে, যা ভবিষ্যতে আরো উন্নত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের পরিবেশ কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা আরো সহজে বোঝা এবং অভিজ্ঞতা করার সুযোগ পেয়ে, আমরা সবাই এখন বাস্তবিক অর্থেই ডিজিটাল টাইম ট্র্যাভেলার।