Government free training centers for Woman: ভারতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। মেয়েদের বিনামূল্যে ট্রেনিং কেন্দ্র সরকারের নব্যা যোজনার মাধ্যমে এখন কিশোরী মেয়েরা পাবে আধুনিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ। ২০২৫ সালের ২৪ জুন উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রায় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া এই প্রকল্পটি দেশের ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছে অভূতপূর্ব সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ স্বপ্নের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ মেয়েদের আত্মনির্ভর করে তুলতে চায় অপ্রচলিত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে।
নব্যা যোজনা কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
নব্যা মানে “Nurturing Aspirations through Vocational Training for Young Adolescent Girls”। এটি মূলত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগ। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো কিশোরী মেয়েদের এমন কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেগুলো ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষদের কাজ বলে বিবেচিত হতো।
কারা পাবেন এই সুযোগ?
এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য মেয়েদের বয়স হতে হবে ১৬ থেকে ১৮ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে কমপক্ষে দশম শ্রেণী পাস থাকতে হবে। বিশেষ করে আকাঙ্ক্ষিত জেলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেয়েরা এই প্রকল্পে অগ্রাধিকার পাবে।
কোন কোন দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে?
নব্যা যোজনার আওতায় মেয়েরা যেসব আধুনিক দক্ষতায় প্রশিক্ষণ পাবে তার মধ্যে রয়েছে:
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- স্মার্টফোন প্রযুক্তিবিদ
- ড্রোন সংযোজন বিশেষজ্ঞ
- সিসিটিভি ইনস্টলেশন প্রযুক্তিবিদ
- পেশাদার মেকআপ আর্টিস্ট
- সোলার প্যানেল ইনস্টলেশন
- হস্তশিল্প এবং এমব্রয়ডারি
সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিস্তৃত কার্যক্রম
মেয়েদের বিনামূল্যে ট্রেনিং কেন্দ্র সরকারের এই নব্যা প্রকল্প প্রাথমিকভাবে ১৯টি রাজ্যের ২৭টি জেলায় চালু হয়েছে। পরবর্তীতে এটি সারাদেশে সম্প্রসারিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার সাথে সংযোগ
নব্যা প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (PMKVY) এবং PM বিশ্বকর্মা স্কিমের আওতায় পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা সরকারি স্বীকৃত সার্টিফিকেট পাবে যা তাদের চাকরি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
বিশেষ সহায়ক প্রশিক্ষণ মডিউল
মূল কারিগরি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একটি ৭ ঘণ্টার বিশেষ প্রশিক্ষণ মডিউল থাকবে যা চারটি মূল বিষয়ে ফোকাস করবে:
- ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন
- যোগাযোগ দক্ষতা
- ডিজিটাল সাক্ষরতা
- উদ্যোক্তা উন্নয়ন
বাংলাদেশেও সরকারি মহিলা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশেও সরকার মেয়েদের জন্য বিভিন্ন বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর জাতীয় মহিলা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমীতে চার মাস মেয়াদী বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে:
- দর্জি বিজ্ঞান
- এমব্রয়ডারি
- ব্লক বাটিক এন্ড টাই ডাই
- কম্পিউটার বেসিক এবং গ্রাফিক ডিজাইন
এসব কোর্সে ভর্তি ফি মাত্র ১৩০ টাকা এবং ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাস হলেই আবেদন করা যায়।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যক্রম
বাংলাদেশের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীদের জন্য ছয় মাস মেয়াদী কম্পিউটার বেসিক এবং ICT অ্যাপ্লিকেশন কোর্স পরিচালনা করে। এই কোর্সে ভর্তি ফি ১০০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণার্থীরা মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পান।
আধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মেয়েদের সুযোগ
ডিজিটাল যুগের নতুন পেশা
মেয়েদের বিনামূল্যে ট্রেনিং কেন্দ্র সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে মেয়েরা এখন শিখতে পারবে এমন দক্ষতা যা আগে শুধু ছেলেদের কাজ বলে মনে করা হতো। ড্রোন চালানো, মোবাইল ফোন মেরামত, সোলার প্যানেল ইনস্টলেশনের মতো কাজ এখন মেয়েরাও শিখতে পারবে।
উদ্যোক্তা হওয়ার পথ
এই প্রশিক্ষণ শুধু চাকরির জন্য নয়, বরং মেয়েদের উদ্যোক্তা হতেও সাহায্য করবে। নিজের ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পথও খুলে দেবে এই দক্ষতা প্রশিক্ষণ।
বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
পশ্চিমবঙ্গে মহিলা প্রশিক্ষণ
পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ চালু আছে। বাঁকুড়ায় স্কিল ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেট-সহ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে গ্রামের স্ব-সহায়ক দলের মহিলাদের ১৫ দিনের বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ
নব্যা প্রকল্প প্রাথমিকভাবে ৯টি রাজ্যের ৯টি জেলায় পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে শুরু হয়েছে। এই জেলাগুলো হলো মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশ।
মহিলাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ: মহিলা সম্মান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে পান 7.5% সুদ!
প্রশিক্ষণের সুবিধা এবং সহায়তা
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ
এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণার্থীদের কোনো ফি দিতে হয় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণকালীন ভাতাও দেওয়া হয়।
সরকারি সার্টিফিকেট
প্রশিক্ষণ শেষে সরকারি স্বীকৃত সার্টিফিকেট পাওয়া যায় যা চাকরি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চাকরির নিশ্চয়তা
অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির ব্যবস্থাও করে দেয়। বিশেষ করে প্রাইভেট সেক্টরে এই দক্ষ কর্মীদের চাহিদা রয়েছে।
আবেদন প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কীভাবে আবেদন করবেন
নব্যা প্রকল্পে আবেদনের জন্য মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের মাধ্যমে মেয়েদের চিহ্নিত করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করা যায়।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
সাধারণত যেসব কাগজপত্র লাগে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- অভিভাবকের সম্মতিপত্র (নাবালকদের ক্ষেত্রে)
সামাজিক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
লিঙ্গ সমতায় অবদান
মেয়েদের বিনামূল্যে ট্রেনিং কেন্দ্র সরকারের এই উদ্যোগ সমাজে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যেসব কাজ আগে শুধু পুরুষেরা করতো, এখন মেয়েরাও সেসব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন
দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত উন্নতি নয়, বরং পুরো পরিবার এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখবে।
চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
সামাজিক প্রতিবন্ধকতা
এখনও অনেক পরিবার মেয়েদের অপ্রচলিত কাজে পাঠাতে দ্বিধা করে। এই মানসিকতা পরিবর্তনে সরকার এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে।
গ্রামাঞ্চলে পৌঁছানো
শহরের তুলনায় গ্রামে এই প্রকল্পের তথ্য পৌঁছাতে সময় লাগে। তাই স্থানীয় প্রশাসন এবং এনজিওদের সাহায্য নিতে হবে।
মেয়েদের বিনামূল্যে ট্রেনিং কেন্দ্র সরকারের নব্যা যোজনা শুধু একটি প্রকল্প নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীর ভারত হবে আরও শক্তিশালী, আরও সমতাভিত্তিক। প্রতিটি কিশোরী মেয়ে যখন নিজের স্বপ্ন পূরণের পথ খুঁজে পাবে, তখনই ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ এর স্বপ্ন বাস্তব হবে। এই প্রকল্প শুধু দক্ষতা শেখানো নয়, বরং একটি প্রজন্মের মানসিকতা পরিবর্তনের সূচনা করেছে।