Govt Official Join Rss: ভারতের রাজনৈতিক মহলে এক নতুন বিতর্কের সূচনা হল। কেন্দ্রীয় সরকার গত ৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কার্যকলাপে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের উপর থেকে দীর্ঘ ৫৮ বছরের পুরনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।১৯৬৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই সরকারি কর্মচারীদের RSS-এর কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন সেই আদেশ বাতিল করে দিয়েছে মোদী সরকার।
RSS-এর সাথে সরকারের সম্পর্কের ইতিহাস জটিল। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল RSS-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পরবর্তীতে RSS-এর শান্তিপূর্ণ কার্যকলাপের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।১৯৬৬ সালে সরকারি কর্মচারীদের RSS-এর কার্যকলাপে অংশগ্রহণের উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ছিল সরকারি কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা।
এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সরকারি কর্মচারীরা এখন থেকে RSS-এর কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। এর ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে RSS-এর প্রভাব বৃদ্ধি পাবে বলে অনেকে মনে করছেন।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দলগুলি তীব্র সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, “১৯৬৬ সালে যথার্থভাবেই সরকারি কর্মচারীদের RSS-এর কার্যকলাপে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। ৯ জুলাই ২০২৪-এ সেই ৫৮ বছরের পুরনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল।”অন্যদিকে, বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “৫৮ বছর আগে ১৯৬৬ সালে জারি করা অসাংবিধানিক আদেশ মোদী সরকার প্রত্যাহার করেছে। মূল আদেশটি কখনোই জারি করা উচিত হয়নি।”
মস্তিষ্কের মহাকাব্য: আপনার সন্তানের প্রতিভা বিকাশের ১০টি অমোঘ কৌশল
পক্ষের যুক্তি | বিপক্ষের যুক্তি |
---|---|
সরকারি কর্মচারীদের অধিকার পুনরুদ্ধার | প্রশাসনে RSS-এর প্রভাব বৃদ্ধি |
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা | সরকারি কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা |
ঐতিহাসিক অন্যায় সংশোধন | ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘনের সম্ভাবনা |
সরকারি কর্মচারীরা RSS-এর আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের কাজে পক্ষপাতিত্ব দেখাতে পারেন। এতে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব ক্ষুণ্ন হতে পারে।
সরকারি কর্মচারীদের মাধ্যমে RSS প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও নীতি নির্ধারণে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
RSS-এর সাথে যুক্ত হওয়ার ফলে সরকারি কর্মচারীরা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করতে পারেন, যা ভারতের সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী।
Rahul Dravid Returns 2.5 Crore Rupees: রাহুল দ্রাবিড়ের মহানুভবতা: ২.৫ কোটি টাকা ফেরালেন ভারতের কোচ
সরকারি কর্মচারীদের RSS-এর সাথে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দেওয়ার ফলে রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে বিভাজন রেখা আরও ক্ষীণ হতে পারে।
RSS-এর হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রভাবে সরকারি কর্মচারীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারেন।
RSS-এর একচেটিয়া প্রভাব বৃদ্ধির ফলে বহুত্ববাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।তবে এই সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলি এড়াতে সরকার যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় প্রশাসনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে RSS-এর আদর্শের প্রসার ঘটতে পারে। অন্যদিকে, এটি সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বৃদ্ধি করবে বলে অনেকে মনে করছেন।তবে এই সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রভাব কী হবে তা সময়ই বলবে। সরকারি কর্মচারীরা কীভাবে এই নতুন স্বাধীনতা ব্যবহার করেন এবং তা প্রশাসনিক কাজে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা, তা লক্ষ্য করার বিষয়।সামগ্রিকভাবে, এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় রাজনীতি ও প্রশাসনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। আগামী দিনগুলিতে এর প্রভাব নিয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনা ও বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।