Climate change impact on coral reefs: অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত Great Barrier Reef-এর জলের তাপমাত্রা গত দশকে ৪০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে একটি নতুন গবেষণায় জানা গেছে। Nature জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৬০ সাল থেকে প্রতি বছর Great Barrier Reef-এর জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যখন ব্যাপক প্রবাল বিরঞ্জন ঘটেছে।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রবালের কঙ্কাল নমুনা বিশ্লেষণ করে ১৬১৮ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার তথ্য পুনর্নির্মাণ করেছেন। এর সাথে তারা ১৯০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার তথ্য যুক্ত করেছেন।গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯০০ সালের আগে তাপমাত্রা মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু ১৯৬০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গত দশকে ২০১৬, ২০১৭, ২০২০, ২০২২ এবং ২০২৪ সালে যখন ব্যাপক প্রবাল বিরঞ্জন ঘটেছে, তখন জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের তাপমাত্রা ১৬১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল।
জলের নীচে অপরূপ সৌন্দর্য, স্কুবা ডাইভিংয়ের সেরা গন্তব্যগুলি
গবেষণার প্রধান লেখক এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই নগর ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক বেঞ্জামিন হেনলি বলেছেন, “রিফটি বিপদে রয়েছে এবং আমরা যদি আমাদের বর্তমান পথ থেকে বিচ্যুত না হই, তাহলে আমাদের প্রজন্ম সম্ভবত এই মহান প্রাকৃতিক বিস্ময়ের পতন দেখবে।”Great Barrier Reef-এর জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রবাল বিরঞ্জনের ঘটনা বেড়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আটটি ব্যাপক প্রবাল বিরঞ্জনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৯৮ এবং ২০০২ সালের গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে ব্যাপক ও তীব্র বিরঞ্জন ঘটেছে, যখন যথাক্রমে ৪২% এবং ৫৪% রিফ প্রভাবিত হয়েছিল।
গবেষকরা জলবায়ু মডেল ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে ১৯০০ সালের পর থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার মানুষের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে Great Barrier Reef-এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০৪০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে (SRES সিনারিও A1, A2) এবং ২০৭০ থেকে ২০৯০ সালের মধ্যে (SRES সিনারিও B1, B2) Great Barrier Reef-এর উত্তর প্রান্তের বর্তমান তাপমাত্রা দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।প্রবালের জন্য দীর্ঘমেয়াদী গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার চেয়ে মাত্র ১°C বেশি তাপমাত্রাতেই গণ প্রবাল বিরঞ্জন শুরু হয়। প্রবালরা এ থেকে পুনরুদ্ধার হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সর্বোচ্চ তাপমাত্রার চেয়ে ২ থেকে ৩°C বেশি তাপমাত্রা কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ ধরে থাকলে প্রবালরা মারা যায়।
গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে যদি বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন রোধ করা না যায় তাহলে Great Barrier Reef টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। এমনকি মাঝারি উষ্ণায়নের সিনারিওতেও (A1T, ২১০০ সালের মধ্যে ২°C) Great Barrier Reef-এর প্রবালগুলি গত ২০ বছরে পর্যবেক্ষিত তাপীয় সীমার চেয়ে বেশি গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।মডেল অনুযায়ী A1FI সিনারিওতে ২০৩০ সালের মধ্যে এবং A1T সিনারিওতে ২০৫০ সালের মধ্যে বার্ষিক প্রবাল বিরঞ্জনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যেহেতু একটি তীব্র বিরঞ্জন-জনিত মৃত্যুর ঘটনা থেকে পুনরুদ্ধারের সময় কমপক্ষে ১০ বছর (এবং সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের জন্য ৫০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে), এই মডেলগুলি সূচিত করে যে ২০৫০ সালের মধ্যে রিফগুলিতে প্রবালের পরিবর্তে ম্যাক্রোআলগির মতো অ-প্রবাল জীবের প্রাধান্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
Euro Cup Champion 2024: স্পেনের চতুর্থ ইউরো কাপ জয়, ইতিহাসের পাতায়
Great Barrier Reef-এর জৈব বৈচিত্র্য, মৎস্য শিকার এবং পর্যটন শিল্পের উপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। Great Barrier Reef-এ কঠিন প্রবালের আচ্ছাদন বজায় রাখতে হলে প্রবালদের তাদের উচ্চ তাপীয় সহনশীলতার সীমা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা পরিবর্তনের গতির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়াতে হবে, অর্থাৎ প্রতি দশকে প্রায় ০.১-০.৫°C।তবে বর্তমানে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে প্রবালদের এত দ্রুত জেনেটিক পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে। বরং বেশিরভাগ প্রমাণ এর বিপরীতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের অম্লীভবনও Great Barrier Reef-এর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুমণ্ডলে নিঃসৃত অতিরিক্ত CO2-এর প্রায় ৩০% সমুদ্র শোষণ করেছে। এর ফলে সমুদ্রের pH কমে যাচ্ছে। কার্বনেট আয়নের ঘনত্ব কমার সাথে সাথে ক্যালসিফিকেশন হ্রাস পায়, যা প্রবাল প্রাচীরের বৃদ্ধি ব্যাহত করে।গবেষকরা বলছেন, অম্লীয় অবস্থার কারণে বৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া বিরঞ্জনের ঘটনার পর রিফের পুনরুদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করবে এবং অন্যান্য চাপের (যেমন পলি, পুষ্টিসমৃদ্ধি) বিরুদ্ধে রিফের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে।
Great Barrier Reef-কে রক্ষা করার জন্য স্থানীয় চাপ (জলের গুণমান, মাছ ধরার চাপ) কমানোর মাধ্যমে মৃত্যু থেকে পুনরুদ্ধারকে সম্ভাবত বাড়ানো যেতে পারে। এজন্য Reef Water Quality Protection Plan এবং Representative Areas Programme (যা Great Barrier Reef-এর সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এলাকা ৪.৬% থেকে বাড়িয়ে ৩৩% এর বেশি করেছে) এর মতো ব্যবস্থাপনা উদ্যোগ দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের বর্ধমান চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বাড়াতে পরিকল্পিত অভিযোজন বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিষয় | তথ্য |
---|---|
আয়তন | প্রায় ৩৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার |
অবস্থান | অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূল |
প্রবাল প্রজাতির সংখ্যা | ৬০০ |
মাছের প্রজাতির সংখ্যা | ১ |