পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ
পেয়ারা পাতা পুষ্টি উপাদানের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এতে রয়েছে:
- ভিটামিন C: পেয়ারা পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- খনিজ পদার্থ: ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সালফার, সোডিয়াম, আয়রন, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কুয়েরসেটিন, অ্যাভিকুলারিন, অ্যাপিজেনিন, গুয়াইজাভেরিন, ক্যাম্পফেরল, হাইপেরিন, মিরিসেটিন, গ্যালিক অ্যাসিড, ক্যাটেচিন, এপিক্যাটেচিন, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট, এবং ক্যাফেইক অ্যাসিড ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
Diabetes and Snacking: চাঞ্চল্যকর তথ্য! ডায়াবেটিস রোগীরা মুড়ি খেলে কী হবে জানলে আপনিও অবাক
পেয়ারা পাতার উপকারিতা
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
পেয়ারা পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি সুক্রোজ এবং মাল্টোজের শোষণ প্রতিরোধ করে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ১২ সপ্তাহ ধরে পেয়ারা পাতার চা পান করলে ইনসুলিন উৎপাদন না বাড়িয়েই রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস
পেয়ারা পাতা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমানো
পেয়ারা পাতায় থাকা জটিল শর্করা শরীরে চর্বিতে পরিণত হয় না, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি লিভারে কার্বোহাইড্রেট বিপাকের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে, যা স্থূলতা প্রতিরোধে সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পেয়ারা পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর প্রদাহরোধী গুণ প্রদাহকারী অণুগুলিকে প্রতিরোধ করে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
নিয়মিত পেয়ারা খেলে প্রস্টেট, স্তন, মুখ, ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে। পেয়ারা পাতার তেলে থাকা অ্যান্টিপ্রোলিফারেটিভ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করে দেয়।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নতি
পেয়ারা পাতায় থাকা পলিফেনল আলজাইমার্স রোগীদের শরীরে অ্যামাইলয়েডাল-বিটা পেপটাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং আলজাইমার্স রোগের অবনতি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
কাশি ও গলা ব্যথা উপশম
পেয়ারা পাতার নির্যাস কাশি ও গলা ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন C এবং আয়রন কাশি, সর্দি এবং গলা ব্যথা প্রতিরোধ করে। পেয়ারা পাতার চা পান করলে কফ দূর হতে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার হতে সাহায্য করে।
চিনি ব্যবহারের অন্ধকার দিক: জেনে নিন কি কি ক্ষতি করছেন নিজের
পেয়ারা পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যদিও পেয়ারা পাতা সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:
- অতিরিক্ত সেবনে বমি বমি ভাব, পেটে অস্বস্তি বা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দিতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এর প্রভাব সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।
পেয়ারা পাতা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে, যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস, ওজন কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ। তবে, এর পাশাপাশি কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। সুতরাং, পেয়ারা পাতা সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি কোনও ওষুধ গ্রহণ করেন বা কোনও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। মনে রাখবেন, সব কিছুর মতোই, মাত্রাতিরিক্ত সেবন এড়ানো উচিত। সঠিক পরিমাণে সেবন করলে পেয়ারা পাতা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।