Gujarat Heavy Rainfall Cyclone Impact: গুজরাতে ভারী বৃষ্টিপাতের পর এখন ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’র আশঙ্কা কেটে গেলেও রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় জলমগ্নতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যদিও ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ এখন গুজরাত উপকূল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তবুও আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা
গুজরাতের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি এখনও বিরাজ করছে:
– কচ্ছ জেলায় সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে, যেখানে মান্দভি শহরে ৩১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
– দ্বারকা শহরে ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং শহরটি এখনও জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে।
– রাজকোট ও জামনগরে বৃষ্টিপাত কমেছে, কিন্তু এখনও বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
– বড়োদরা শহরে বিশ্বামিত্রী নদীর জলস্তর কমেছে, কিন্তু শহরের অনেক অংশ এখনও জলমগ্ন।
চাকরি প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে পশ্চিমবঙ্গ: অপেক্ষায় বেকার যুবসমাজ
মৃত্যু ও উদ্ধার অভিযান
গুজরাত সরকারের তথ্য অনুযায়ী:
– ২৫ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
– বড়োদরা শহরে আরও ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, যার ফলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯।
– ৩২,৯৩৩ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
– বিভিন্ন সংস্থা ২,৫৭২ জনকে উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে সর্বাধিক ১,২৯৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বড়োদরা শহর থেকে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
বন্যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে:
– ৬,৪১৪টি অস্থায়ী বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
– ৩৮০টি অস্থায়ী বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে
– ২৮৯টি স্থায়ী বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
– ১৮টি স্থায়ী বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে
বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান
গুজরাত জরুরি পরিচালনা কেন্দ্রের (State Emergency Operations Centre) তথ্য অনুযায়ী:
অঞ্চল | বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতাংশ) |
---|---|
কচ্ছ | ১৭৭% |
সৌরাষ্ট্র | ১২৪% |
উত্তর গুজরাত | ৮৮% |
পূর্ব-মধ্য অঞ্চল | ১০৫% |
দক্ষিণ গুজরাত | ১১১% |
সামগ্রিকভাবে, গুজরাতে এখন পর্যন্ত গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ১১১% বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী:
– ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ বর্তমানে গুজরাতের নালিয়া থেকে ৩১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছে।
– এটি পাকিস্তানের করাচি থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে।
– আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে আরও সরে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আগামী দিনগুলিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস
IMD-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী:
– আগামী ৫ দিনে গুজরাতে কোনও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
– তবে জামনগর, পোরবন্দর, দ্বারকা ও কচ্ছ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
– ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর কচ্ছ-সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
West Bengal Weather Forecast 31 August 2024: পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, সতর্কতা জারি
সরকারি প্রশাসনের পদক্ষেপ
গুজরাত সরকার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
– সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও স্থানীয় পুলিশ উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
– মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
– বড়োদরা শহরে একটি বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
– স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংঘভি জানিয়েছেন, নদীর তীরবর্তী অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে এবং নদীর পাড় পরিষ্কার রাখা হবে।
জনজীবনে প্রভাব
বন্যার ফলে গুজরাতের জনজীবন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে:
– হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
– বড়োদরা শহরে অনেক বাসিন্দার ঘরবাড়ি ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে।
– আহমেদাবাদে অনেক কর্পোরেট অফিস ও দোকানপাট বন্ধ ছিল, যা ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে।
– রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
“সাধারণত মৌসুমি বর্ষার সময় (জুন-সেপ্টেম্বর) আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া খুবই বিরল ঘটনা। প্রবল মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রতিকূল সামুদ্রিক উপাদানের কারণে এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই ‘আসনা’ ঘূর্ণিঝড়টি একটি বিরল ঘটনা।”
যদিও ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’র হুমকি কেটে গেছে, তবুও গুজরাতের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে আশা করা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।