Guru Purnima 2025 tithi: আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে আসছে পবিত্র গুরুপূর্ণিমা উৎসব। গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এই বিশেষ দিনটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। ২০২৫ সালে গুরুপূর্ণিমা পালিত হবে ১০ জুলাই, বৃহস্পতিবার। এই দিনটি মহর্ষি বেদব্যাসের জন্মতিথি হিসেবেও পরিচিত, তাই একে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়। আসুন জেনে নিই গুরুপূর্ণিমার সঠিক তারিখ, তিথির সময় এবং এর গভীর তাৎপর্য সম্পর্কে।
২০২৫ সালে গুরুপূর্ণিমা কবে? সম্পূর্ণ তারিখ ও সময়
পঞ্জিকা অনুসারে, ২০২৫ সালের গুরুপূর্ণিমা উদযাপিত হবে ১০ জুলাই, বৃহস্পতিবার। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই পবিত্র দিনটি পালিত হয়।
পূর্ণিমা তিথির সময়সূচী
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে:
-
পূর্ণিমা তিথি শুরু: ৯ জুলাই, বুধবার রাত ১টা ৩৮ মিনিটে
-
পূর্ণিমা তিথি শেষ: ১০ জুলাই, বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৭ মিনিটে
অন্যান্য পঞ্জিকা অনুসারে:
-
তিথি আরম্ভ: ১০ জুলাই, রাত ১:৩৬ মিনিটে
-
তিথি সমাপ্তি: ১১ জুলাই, রাত ২:০৬ মিনিটে
বৃহস্পতিবার গুরুপূর্ণিমা হওয়ায় এই উৎসবের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। এদিন ইন্দ্র এবং প্রজাপতি নামে দুটি শুভ যোগও থাকবে।
গুরুপূর্ণিমার তাৎপর্য ও ইতিহাস
হিন্দু ধর্মে গুরুকে ভগবানের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে মানা হয়। ‘গুরু’ শব্দটি সংস্কৃত ‘গু’ এবং ‘রু’ থেকে এসেছে – যেখানে ‘গু’ মানে অন্ধকার এবং ‘রু’ মানে আলো। অর্থাৎ গুরু হলেন তিনি যিনি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে পরিচালিত করেন।
মহর্ষি বেদব্যাসের জন্মতিথি
গুরুপূর্ণিমা উৎসব মূলত মহর্ষি বেদব্যাসের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণকারী মহর্ষি বেদব্যাস ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার। তিনি একটি বেদকে চারটি আলাদা বেদে বিভক্ত করেছিলেন – ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ। এই কারণেই তাঁর নাম হয়েছে ‘বেদব্যাস’। তিনি মহাভারত গ্রন্থের রচয়িতা এবং ১৮টি পুরাণের স্রষ্টা।
আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে গুরুপূর্ণিমা
শিবের প্রথম গুরু হয়ে ওঠা
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই পূর্ণিমার দিনেই ভগবান শিব প্রথম গুরুতে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। আদি যোগী শিব সপ্তর্ষিদের কাছে জ্ঞান প্রদান শুরু করেছিলেন এই দিনে। ৮৪ বছর কঠোর সাধনার পর পূর্ণিমার দিনে শিব তাঁদের গুরু হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বৌদ্ধ ধর্মে গুরুপূর্ণিমা
বৌদ্ধদের কাছে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ গৌতম বুদ্ধ এই দিনে সারনাথে তাঁর প্রথম ধর্মোপদেশ প্রদান করেছিলেন। জ্ঞানলাভের পর বুদ্ধ তাঁর পাঁচ সঙ্গীকে এই পবিত্র দিনে মহা-উপদেশ দান করেছিলেন।
জৈন ধর্মে গুরুপূর্ণিমা
জৈন ধর্মে এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে কারণ ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর এই দিনে তাঁর প্রধান শিষ্য ইন্দ্রভূতি গৌতমকে দীক্ষা দান করেছিলেন।
গুরুপূর্ণিমার পূজা বিধি ও আচার-অনুষ্ঠান
পূজার প্রস্তুতি
গুরুপূর্ণিমার দিনে ভক্তরা সকাল থেকে পূজার প্রস্তুতি নেন। অনেকে এই দিনে উপবাস রাখেন যা আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করে। পূর্ণিমা তিথির সময় সূর্যোদয়ের পর প্রথম তিন ঘণ্টা গুরুপূর্ণিমার সঠিক মুহূর্ত বলে মনে করা হয়।
গুরু পূজার নিয়মাবলী
-
সকালে স্নান করে পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করুন
-
গুরুর ছবি বা প্রতিমূর্তি স্থাপন করুন
-
ফুল, ফল, মিষ্টি, ধূপ-দীপ দিয়ে পূজা করুন
-
গুরু মন্ত্র জপ করুন
-
গুরুকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রার্থনা করুন
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ নিয়ম
ছাত্রছাত্রীরা এই দিনে তাদের শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। তারা গুরুদের কাছে উপহার নিয়ে যান এবং আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। এই দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গুরু না থাকলে কী করবেন?
যদি আপনার কোনো নির্দিষ্ট গুরু না থাকে, তাহলে দেবগুরু বৃহস্পতি, মহর্ষি বেদব্যাস, অথবা ভগবান বিষ্ণু, শিব বা হনুমানের যে কোনো একজনকে গুরু রূপে পূজা করতে পারেন। এছাড়া আপনার পিতা-মাতা, শিক্ষক বা যে কোনো আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বকে গুরু হিসেবে শ্রদ্ধা করতে পারেন।
গুরুপূর্ণিমার সামাজিক গুরুত্ব
আধুনিক যুগে গুরুপূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। এই দিনে সমাজের সকল স্তরের মানুষ তাদের গুরু, শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকদের কৃতজ্ঞতা জানান।
শিক্ষক দিবস হিসেবে গুরুপূর্ণিমা
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুপূর্ণিমাকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা এই দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করে।
গুরুপূর্ণিমার আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা
বর্তমান যুগে যখন তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে জ্ঞান অর্জনের নতুন মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে, তখনও গুরুর গুরুত্ব অপরিসীম। একজন সত্যিকারের গুরু শুধু তথ্য প্রদান করেন না, বরং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দিকনির্দেশনা দেন। গুরুপূর্ণিমা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জ্ঞান অর্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর জন্য একজন যোগ্য পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন।
গুরুপূর্ণিমা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি পবিত্র উপলক্ষ। ২০২৫ সালের ১০ জুলাই এই বিশেষ দিনটি উদযাপনের মাধ্যমে আমরা শুধু ঐতিহ্য রক্ষা করি না, বরং জ্ঞানের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধকে নতুন করে জাগ্রত করি। এই গুরুপূর্ণিমায় আসুন আমরা সকলে আমাদের গুরুদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করি এবং তাঁদের আশীর্বাদ গ্রহণ করে জীবনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা লাভ করি।