How to celebrate Halloween 2024: 2024 সালের 31 অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হবে হ্যালোইন (Halloween) উৎসব। প্রতি বছর এই দিনে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই নানা রকম ভূতুড়ে সাজসজ্জায় সেজে উদযাপন করে এই উৎসব। হ্যালোইন মূলত পশ্চিমা দেশগুলোতে জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই এটি পালিত হয়।হ্যালোইনের ইতিহাস প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন সেল্টিক উৎসব সামহেইন (Samhain) থেকে এর উৎপত্তি।
সেল্টিক লোকেরা বিশ্বাস করত যে এই দিনে জীবিত ও মৃতদের মধ্যকার সীমারেখা ক্ষীণ হয়ে যায় এবং মৃতদের আত্মা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়। তাই তারা এই দিনে আগুন জ্বালিয়ে এবং নানা রকম পোশাক পরে ভূত-প্রেত তাড়াতে চেষ্টা করত।পরবর্তীতে খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাবে নভেম্বর 1 তারিখ অল সেন্টস ডে হিসেবে পালিত হতে থাকে। এর আগের রাত অর্থাৎ 31 অক্টোবর অল হ্যালোজ ইভ নামে পরিচিত হয়, যা থেকেই হ্যালোইন শব্দটির উৎপত্তি। ক্রমে ক্রমে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবে পরিণত হয়েছে।
হ্যালোইন উদযাপনের মূল আকর্ষণ হল ট্রিক-অর-ট্রিটিং। এতে শিশুরা নানা রকম পোশাক পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যান্ডি সংগ্রহ করে। এছাড়া জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন তৈরি করা, কস্টিউম পার্টি, হন্টেড হাউস ভ্রমণ, ভূতের গল্প বলা ইত্যাদি নানা কার্যক্রম করা হয়।হ্যালোইনের জনপ্রিয় প্রতীক হল কুমড়ো দিয়ে তৈরি জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন। এর উৎপত্তি আইরিশ কিংবদন্তি থেকে। বলা হয় জ্যাক নামের এক লোক শয়তানকে ঠকিয়ে নরকে যেতে পারেনি, আবার স্বর্গেও ঢুকতে পারেনি। তাই সে একটি কুমড়োর ভিতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়।হ্যালোইনে সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাক হল ভূত, ডাইনি, জম্বি, ভ্যাম্পায়ার ইত্যাদি। তবে বর্তমানে পপ কালচার থেকেও অনেক চরিত্রের পোশাক পরা হয়। শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও নানা রকম মজার পোশাক পরে এই উৎসব উপভোগ করে।হ্যালোইনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল বাড়ি ও এলাকা সাজানো। জালের মতো কৃত্রিম মাকড়সার জাল, কঙ্কাল, কবর ইত্যাদি দিয়ে ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি করা হয়। অনেকে বাড়ির সামনে কুমড়ো দিয়ে তৈরি জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন সাজিয়ে রাখে।
নরক চতুর্দশী ২০২৪: জেনে নিন তারিখ, সময় এবং এই পবিত্র উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য
হ্যালোইনে খাবারের মধ্যে ক্যান্ডি, চকলেট, কুমড়ো পাই, ক্যারামেল আপেল ইত্যাদি জনপ্রিয়। অনেকে হ্যালোইন থিমের কেক, কুকি ইত্যাদিও তৈরি করে। পানীয় হিসেবে কুমড়োর স্পাইস লাতে জনপ্রিয়।হ্যালোইন উপলক্ষে অনেক জায়গায় প্যারেড আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে নিউইয়র্কের ভিলেজ হ্যালোইন প্যারেড বিশ্বের বৃহত্তম হ্যালোইন প্যারেড। এতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং ২০ লক্ষ দর্শক উপস্থিত থাকে।হ্যালোইনে ভূতের গল্প বলা, হরর মুভি দেখা খুবই জনপ্রিয়। অনেক টিভি চ্যানেল হ্যালোইন উপলক্ষে বিশেষ প্রোগ্রাম প্রচার করে। নতুন হরর মুভিও এই সময় মুক্তি পায়।থিম পার্কগুলোতেও হ্যালোইন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হয়। সিক্স ফ্ল্যাগস ফ্রাইট ফেস্ট, ইউনিভার্সাল স্টুডিওস হ্যালোইন হরর নাইটস ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়। ডিজনিল্যান্ডেও মিকি’স নট-সো-স্কেয়ারি হ্যালোইন পার্টি আয়োজন করা হয়।হ্যালোইন এখন একটি বিশাল ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মার্কিনীরা হ্যালোইনে ১২.২ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে। এর মধ্যে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার শুধু ঘর সাজানোর জন্য ব্যয় হবে।হ্যালোইন উদযাপনের ধরণ দেশ ও অঞ্চল ভেদে কিছুটা ভিন্ন। যেমন মেক্সিকোতে ডে অফ দ্য ডেড (Day of the Dead) নামে একটি উৎসব পালিত হয় যা হ্যালোইনের সাথে মিলে গেছে। জাপানে অবোন ফেস্টিভ্যাল পালিত হয় যা হ্যালোইনের মতোই পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে।হ্যালোইন এখন শুধু পশ্চিমা দেশেই সীমাবদ্ধ নেই। এশিয়ার অনেক দেশেও এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভারতেও বড় শহরগুলোতে হ্যালোইন পার্টি, কস্টিউম কনটেস্ট ইত্যাদি আয়োজন করা হয়।তবে হ্যালোইন নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে। অনেকে মনে করেন এটি ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধী। আবার কেউ কেউ মনে করেন এটি শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।
Expensive Clothes in the World: বিশ্বের ৫ টি রাজকীয় পোশাকের মহাকাব্য
তবে অধিকাংশ মানুষই এটিকে একটি আনন্দময় উৎসব হিসেবেই দেখেন।সামগ্রিকভাবে হ্যালোইন একটি রঙিন ও আনন্দঘন উৎসব। এটি মানুষকে একত্রিত করে এবং শিশু-বড় সবাইকে কল্পনার জগতে বিচরণ করার সুযোগ দেয়। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ নানা রকম সাজে সেজে রাস্তায় নামে, ক্যান্ডি বিতরণ করে, পার্টি করে। এভাবেই হ্যালোইনের মাধ্যমে মানুষ কিছুক্ষণের জন্য হলেও দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পায়।
মন্তব্য করুন