মুম্বইয়ের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দিল্লি ক্যাপিটালসকে ৮ রানে হারিয়ে উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ (WPL) ২০২৫-এর শিরোপা জিতেছে। এটি মুম্বইয়ের দ্বিতীয় WPL ট্রফি, যিনি ২০২৩ সালে প্রথম আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। হরমনপ্রীত কৌরের দুর্দান্ত ৬৬ রানের ইনিংস এবং ন্যাট সাইভার-ব্রান্টের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সুবাদে মুম্বই ১৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে। জবাবে দিল্লি ১৪১ রানে থেমে যায়, ফলে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে তাদের হ্যাটট্রিক ফাইনাল হারের দুঃখ বরণ করতে হয়।
ঘটনার শুরুটা হয়েছিল টস দিয়ে। দিল্লির অধিনায়ক মেগ ল্যানিং টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। মুম্বইয়ের ইনিংস শুরু হয় হেয়লি ম্যাথিউস (৩) এবং যশটিকা ভাটিয়ার (৮) দ্রুত বিদায়ের মধ্য দিয়ে। মারিজান ক্যাপের দারুণ বোলিংয়ে মুম্বই ১৪/২-এ চাপে পড়ে। তখনই মাঠে নামেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। তিনি ন্যাট সাইভার-ব্রান্টের সঙ্গে ৮৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে দলকে টানেন। হরমনপ্রীত ৪৪ বলে ৬৬ রান করেন, যেখানে ছিল ৯টি চার এবং ২টি ছক্কা। তবে, তিনি আউট হওয়ার পর মুম্বইয়ের মিডল অর্ডার ধস নামে। ১০৩/২ থেকে ১১৮/৬-এ পড়ে যায় দলটি। শেষ পর্যন্ত সাইভার-ব্রান্টের ৩০ রানের সুবাদে মুম্বই ১৪৯/৭-এ পৌঁছায়। দিল্লির হয়ে ক্যাপ ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, যেখানে শ্রী চরণী (২/৪৩) এবং জেস জোনাসেন (২/২৬)ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দিল্লির রান তাড়া শুরু হয় মেগ ল্যানিং এবং শাফালি বর্মার ওপেনিং জুটি দিয়ে। কিন্তু সাইভার-ব্রান্টের বোলিংয়ে ল্যানিং (১৮) এবং ক্যাপ (৪০) দ্রুত ফিরে যান। শাফালি ১৮ বলে ২৫ রান করে আউট হন। মিডল অর্ডারে জেমিমা রড্রিগেস (১০) এবং অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড (২) ব্যর্থ হন। তখন মারিজান ক্যাপ দলের হাল ধরেন। ২৬ বলে ৪০ রানের দারুণ ইনিংস খেলে তিনি দিল্লিকে লড়াইয়ে রাখেন। ১৬তম ওভারে সাইকা ইশাকের ওভারে ১৭ রান আসে, যেখানে ক্যাপ দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন। তবে, পরের ওভারে তিনি আউট হলে দিল্লির আশা ফিকে হয়ে যায়। শেষ ওভারে ১৪ রান প্রয়োজন ছিল। নিকি প্রসাদ ২৫* এবং শ্রী চরণী ৩* চেষ্টা করেন, কিন্তু সাইভার-ব্রান্টের শেষ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে মুম্বই জয় ছিনিয়ে নেয়।
ম্যাচে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্যও উঠে এসেছে। হরমনপ্রীতের এই ফিফটি তাকে WPL-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, সাইভার-ব্রান্ট ৩/৩০ নিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। তিনি এই টুর্নামেন্টে ১৮টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। দিল্লির জন্য এটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা তিনটি আসরেই ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৩ সালে মুম্বই, ২০২৪ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হারার পর এবারও তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হল।
এই ম্যাচের আগে দুই দলের প্রস্তুতি ছিল ভিন্ন। দিল্লি গ্রুপ পর্ব শেষ করে এক সপ্তাহ বিশ্রাম পেয়েছিল, যেখানে মুম্বই পাঁচ দিনে তিনটি ম্যাচ খেলে এলিমিনেটর জিতে ফাইনালে এসেছিল। তবে, মুম্বইয়ের এই ধারাবাহিকতা এবং হরমনপ্রীতের নেতৃত্ব তাদের জয় এনে দেয়। ব্রাবোর্নের পিচ ছিল ব্যাটিং সহায়ক, যেখানে প্রথমে ব্যাট করা দলগুলো এই আসরে সব ম্যাচ জিতেছে। এটিও মুম্বইয়ের জয়ে ভূমিকা রেখেছে।
খেলাটি সহজ ভাষায় বোঝা যায় এভাবে—মুম্বই প্রথমে ব্যাট করে হরমনপ্রীতের দাপটে ভালো স্কোর গড়ে। দিল্লি চেষ্টা করলেও ক্যাপের আউট হওয়া এবং শেষ ওভারে সাইভার-ব্রান্টের দারুণ বোলিং তাদের হারিয়ে দেয়। ফলে, মুম্বই দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ল।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, এই জয় মুম্বইয়ের দলীয় শক্তি এবং হরমনপ্রীতের নেতৃত্বের প্রমাণ। দিল্লির জন্য এটি একটি শিক্ষা, যে ফাইনালে পৌঁছানোই যথেষ্ট নয়, জিততে হলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে হবে। WPL-এর তৃতীয় আসর এভাবেই এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল দিয়ে শেষ হল।