সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে যে, ভারতীয় সেনার একটি ‘রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফ্ট’ (আরপিএ) চীনের হাতে হ্যাক হয়েছে। এই দাবির সঙ্গে আরও বলা হয়েছিল যে, এই ড্রোনটি পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে চীনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। এই গুজব নিয়ে এবার মুখ খুলেছে ভারতীয় সেনা। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং সত্যের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। সেনার এই বিবৃতি পাঠকদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে এবং গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।
গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবরটি ঘুরছিল। একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছিল যে, ভারতীয় সেনার একটি আরপিএ, যা সাধারণত নজরদারি বা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়, পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে চীনের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে। এরপর চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) সেই ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করা হয়। পোস্টটিতে আরও বলা হয়েছিল যে, চীন কিছুক্ষণের জন্য ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করার পর তা ভারতের কাছে ফেরত দেয়। এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় এবং অনেকেই প্রশ্ন তুলতে থাকেন ভারতীয় সেনার সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে। কিন্তু ভারতীয় সেনা দ্রুত এই গুজবের জবাব দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি এবং এই ধরনের খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সেনার একটি সূত্র জানিয়েছে যে, এই ধরনের দাবি ‘অসত্য এবং ভিত্তিহীন’। তারা আরও বলেছে, ভারতীয় সেনার সমস্ত সম্পদের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য তারা সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই গুজবের উৎস যে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, তাতে কোনো প্রমাণ বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দেওয়া হয়নি। সেনা জানিয়েছে, এই ধরনের ভুয়ো খবর ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারা মিডিয়া হাউস এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করেছে যেন এই ধরনের ‘অপ্রমাণিত’ এবং ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য প্রচার না করা হয়। এই ঘটনার পর সেনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তাদের আরপিএগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই।
এই বিষয়টি আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য জানা দরকার। ভারতীয় সেনা বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফ্ট বা ড্রোন ব্যবহার করে, যেগুলো মূলত নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সীমান্তে শত্রুপক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ড্রোনগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই উচ্চ প্রযুক্তির এবং এনক্রিপ্টেড ডেটা লিঙ্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবুও, অতীতে চীনের সাইবার ক্ষমতা নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, চীন-সংযুক্ত হ্যাকার গ্রুপগুলো ভারতের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে টার্গেট করেছে। তবে এই ক্ষেত্রে সেনা জোর দিয়ে বলেছে যে, তাদের ড্রোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই উন্নত যে হ্যাকিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এই গুজবের পিছনে আরেকটি দিকও থাকতে পারে। ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিশেষ করে পূর্ব লাদাখে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সেনার প্রযুক্তিগত ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হতে পারে গুজবের মাধ্যমে। তবে ভারতীয় সেনা এই ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, তাদের ড্রোনগুলো উচ্চমানের প্রযুক্তিতে সজ্জিত এবং সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষিত। এছাড়া, সেনা গত কয়েক বছরে তাদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে, যাতে শত্রুপক্ষের কোনো হস্তক্ষেপ রোধ করা যায়।
সাধারণ মানুষের জন্য এই ঘটনা বোঝা সহজ করতে বলা যায়, এটি এমন একটি গল্প যা সত্যের চেয়ে গুজবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক খবর ছড়ায়, যার কোনো ভিত্তি থাকে না। এই ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। সেনা জানিয়েছে, তাদের ড্রোনগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র ভারতীয় সেনার হাতেই থাকে। তাই এই ধরনের খবরে কান না দেওয়াই ভালো। এছাড়া, সেনা সবাইকে সতর্ক করেছে যে, এমন গুজব ছড়ালে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে অযথা উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।
এই ঘটনা থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে খবর ছড়ায় খুব দ্রুত, কিন্তু সেটি সত্য কি না, তা যাচাই করা জরুরি। ভারতীয় সেনা এই গুজবের জবাব দিয়ে শুধু সত্য প্রকাশ করেনি, বরং জনগণকে সচেতনও করেছে। তারা বলেছে, এমন খবরে বিশ্বাস করার আগে প্রমাণ দেখা উচিত। এই ঘটনার পর সেনার প্রতি মানুষের ভরসা আরও বেড়েছে, কারণ তারা দেখিয়েছে যে, তারা কেবল সীমান্তে নয়, তথ্যের ক্ষেত্রেও দেশকে সুরক্ষিত রাখতে প্রস্তুত।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, এই গুজব ছিল একটি অপ্রমাণিত দাবি, যা ভারতীয় সেনা দ্রুত খণ্ডন করেছে। তারা জানিয়েছে, তাদের ড্রোনগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং চীনের হাতে হ্যাক হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই বিবৃতি দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছে।