পশ্চিমবঙ্গের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প এখন রাজ্যবাসীর জন্য একটি বড় ভরসার নাম। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৯ কোটি মানুষ স্বাস্থ্য সুবিধা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ খরচ বহন করে চালানো এই প্রকল্পে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট প্যাকেজ রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে বেশ কৌতূহলের বিষয়। সম্প্রতি বিধানসভায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। কীভাবে এই প্রকল্প রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন দিগন্ত খুলেছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ঘটনার শুরু থেকেই বলা যায়, ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্প চালু করেন। লক্ষ্য ছিল রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৭২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬০৭ জন। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার খরচ করেছে প্রায় ২৬৯৪ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। বিধানসভায় বিধায়ক সুকান্ত কুমার পালের প্রশ্নের জবাবে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ২১ লক্ষ ২৮ হাজার ৮৩৪ জন সরাসরি সুবিধা পেয়েছেন। এছাড়া, ২৯১৪টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগও উঠেছে, যার সমাধানে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিষয়টির গভীরে গেলে দেখা যায়, এই প্রকল্পে রোগভিত্তিক প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কোন রোগে কত টাকা পাওয়া যাবে, তা জানতে অনেকেই আগ্রহী। এর জন্য স্বাস্থ্যসাথীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://swasthyasathi.gov.in/) একটি সহজ উপায় দিয়েছে। প্রথমে এই সাইটে গিয়ে ‘Package Details’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর ‘Grade’ ও ‘Procedure’ বেছে নিয়ে নির্দিষ্ট রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সিলেক্ট করলেই প্যাকেজের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ অস্ত্রোপচার বা জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা আলাদা প্যাকেজ রয়েছে, যা হাসপাতালে ভর্তির সময় প্রযোজ্য হয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভর্তির কারণে নির্ধারিত রোগের জন্যই টাকা দেওয়া হয়। পরে অন্য রোগ ধরা পড়লে তার জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই।
এই প্রকল্পের প্রাসঙ্গিক দিকগুলো আরও জানতে গেলে বোঝা যায়, এটি শুধু চিকিৎসার খরচ কভার করেই ক্ষান্ত হয় না। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ২২৬৩ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ২৬৩০ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২৬৯৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে হাওড়া জেলায় ২০২২-২৩ সালে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ২৪৯ জন সুবিধা নিয়েছেন, যার জন্য ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া, অভিযোগ সমাধানের জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে একটি হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া আছে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা ফোন করে সমস্যা জানানো যায়। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কোনও বেসরকারি হাসপাতাল পরিষেবা দিতে অস্বীকার করলে এই নম্বরে অভিযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সহজ কথায় বলতে গেলে, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প রাজ্যের সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় সুবিধা। এটি শুধু চিকিৎসার খরচ কমায় না, বরং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চিন্তা থেকেও মুক্তি দেয়। তবে এর সফলতার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেকে জানেন না কীভাবে প্যাকেজের তথ্য জানতে হয় বা অভিযোগ করতে হয়। সরকার এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিশ্বের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে। তাই এটি কেবল একটি সরকারি প্রকল্প নয়, বরং লাখো মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার গল্প।