Health vs. life insurance comparison: জীবন একটা অপ্রত্যাশিত যাত্রা, কখন কী ঘটে বলা মুশকিল। তাই জীবনের ঝুঁকিগুলো থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে বীমা বা ইন্স্যুরেন্সের গুরুত্ব অপরিহার্য। তবে, বীমা জগতে হেলথ ইন্স্যুরেন্স (Health Insurance) এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স (Life Insurance) এই দুটি বিষয় নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়েন। কোনটা আগে করা উচিত, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই দুটি বীমার মধ্যেকার পার্থক্যগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব এবং আপনার জন্য কোনটি প্রথমে প্রয়োজন, সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
শরীরের নাম মহাশয়, যা সইতে পারয়! তাই সুস্থ থাকতে হেলথ ইন্স্যুরেন্স নাকি পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে লাইফ ইন্স্যুরেন্স – আপনার জন্য কোনটা বেশি জরুরি, চলুন জেনে নেওয়া যাক!
জীবনযাত্রা এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত। রোগবালাইয়ের প্রকোপ বাড়ছে, বাড়ছে চিকিৎসার খরচ। অন্যদিকে, অপ্রত্যাশিত ঘটনা যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে, যা পরিবারের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রথমে কোনটিকে বেছে নেওয়া উচিত, তা কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হেলথ ইন্স্যুরেন্স হল এমন একটি চুক্তি, যেখানে বীমা কোম্পানি আপনাকে অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে হওয়া চিকিৎসার খরচ বহন করতে সাহায্য করে। অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য বিষয়ক ঝুঁকির হাত থেকে এটি আপনাকে অর্থনৈতিক সুরক্ষা দেয়।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স হল জীবন বীমা। এটি বীমাগ্রহীতার মৃত্যুর পর তার পরিবারকে আর্থিক সুরক্ষা দেয়। অর্থাৎ, বীমা চলাকালীন গ্রাহকের মৃত্যু হলে, নমিনি বীমা কোম্পানির থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পান।
বৈশিষ্ট্য | হেলথ ইন্স্যুরেন্স | লাইফ ইন্স্যুরেন্স |
---|---|---|
উদ্দেশ্য | চিকিৎসার খরচ বহন করা | পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা |
সুবিধা | অসুস্থতা বা দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা | গ্রাহকের মৃত্যুর পর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য |
প্রিমিয়াম | সাধারণত কম হয় | সাধারণত বেশি হয় |
মেয়াদ | সাধারণত ১ বছর (নবায়নযোগ্য) | ৫ বছর থেকে শুরু করে আজীবন পর্যন্ত হতে পারে |
কর সুবিধা | হ্যাঁ, প্রিমিয়ামের উপর কর ছাড় পাওয়া যায় | হ্যাঁ, এখানেও প্রিমিয়ামের উপর কর ছাড় পাওয়া যায় |
এই প্রশ্নের উত্তর আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবে, কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন:
যদি আপনার বয়স কম হয় এবং তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে, তাহলে প্রথমে লাইফ ইন্স্যুরেন্স করা ভালো। কারণ, অল্প বয়সে প্রিমিয়াম কম থাকে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনি আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
অন্যদিকে, যদি আপনার বয়স বেশি হয় বা আগে থেকেই কোনো রোগ থাকে, তাহলে হেলথ ইন্স্যুরেন্স আপনার জন্য বেশি জরুরি। কারণ, এই বয়সে স্বাস্থ্য বিষয়ক ঝুঁকি বেশি থাকে এবং চিকিৎসার খরচ অনেক বেড়ে যেতে পারে।
যদি আপনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হন, তাহলে লাইফ ইন্স্যুরেন্স অবশ্যই প্রথমে করা উচিত। আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারের যেন কোনো আর্থিক কষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করা আপনার প্রধান দায়িত্ব।
তবে, যদি আপনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে, কিন্তু স্বাস্থ্য বিষয়ক ঝুঁকির কারণে মাঝে মাঝেই বড় অঙ্কের খরচ হয়, তাহলে হেলথ ইন্স্যুরেন্স আপনার জন্য বেশি প্রয়োজনীয়।
যদি আপনার উপর কোনো ঋণ থাকে, তাহলে লাইফ ইন্স্যুরেন্স এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনার অবর্তমানে সেই ঋণ আপনার পরিবারের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। লাইফ ইন্স্যুরেন্স থাকলে, বীমা কোম্পানি সেই ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করে।
যদি আপনার যথেষ্ট পরিমাণে সঞ্চয় থাকে, যা দিয়ে আপনি অসুস্থতার খরচ সামলাতে পারবেন, তাহলে প্রথমে লাইফ ইন্স্যুরেন্স করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনার সঞ্চয় কম থাকে, তাহলে হেলথ ইন্স্যুরেন্স আপনার জন্য বেশি দরকারি।
হেলথ ইন্স্যুরেন্স কেনার আগে কিছু বিষয় ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত। তা না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো:
আপনার বীমা কোম্পানির নেটওয়ার্কে কোন কোন হাসপাতাল আছে, তা জেনে নিন। নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসা করালে আপনি ক্যাশলেস সুবিধা পাবেন, অর্থাৎ আপনাকে নগদ টাকা দিতে হবে না।
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কভারেজের পরিমাণ নির্বাচন করুন। যদি আপনার পরিবারে কারো জটিল রোগ থাকে, তাহলে বেশি কভারেজের পলিসি নেওয়াই ভালো।
কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে পলিসি নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কভারেজ পাওয়া যায় না, একটা নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়কালকে ওয়েটিং পিরিয়ড বলে। পলিসি কেনার আগে এই বিষয়ে জেনে নিন।
বিভিন্ন কোম্পানির প্রিমিয়ামের তুলনা করুন। প্রিমিয়ামের পাশাপাশি পলিসির অন্যান্য সুবিধাগুলোও বিবেচনা করুন।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স কেনার আগেও কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। নিচে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো:
বিভিন্ন ধরনের লাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসি পাওয়া যায়, যেমন – term insurance, whole life insurance, endowment policy, unit linked insurance plan (ULIP) ইত্যাদি। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পলিসিটি বেছে নিন।
Sum Assured হল সেই পরিমাণ অর্থ, যা আপনার মৃত্যুর পর আপনার পরিবার পাবে। আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ খরচ, ঋণ ইত্যাদি বিবেচনা করে Sum Assured-এর পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
আপনি কতদিন ধরে প্রিমিয়াম দিতে চান, তা পলিসি কেনার সময় নির্বাচন করতে হয়। প্রিমিয়াম পরিশোধের সময়কাল যত কম হবে, প্রিমিয়ামের পরিমাণ তত বেশি হবে।
রাইডার হল অতিরিক্ত কিছু সুবিধা, যা আপনি আপনার পলিসির সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। যেমন – accidental death rider, critical illness rider ইত্যাদি।
এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়:
হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স দুটোই জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনটা আগে করবেন, তা আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবে, এই দুটি বীমা আপনার জীবন এবং পরিবারের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখতে অপরিহার্য। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করুন, বিভিন্ন পলিসি তুলনা করুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
জীবন একটাই, তাই ঝুঁকি না নিয়ে আজই আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য সঠিক বীমাটি বেছে নিন। মনে রাখবেন, একটু সচেতনতাই আপনাকে দিতে পারে নিশ্চিন্ত ভবিষ্যৎ।
মন্তব্য করুন