স্বাস্থ্য সাথী কার্ড: ৫ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা – জেনে নিন কীভাবে অনলাইনে চেক করবেন!

Health Sathi Card Benefits: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প রাজ্যের প্রতিটি পরিবারকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা প্রদান করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সাধারণ মানুষ উন্নত স্বাস্থ্য…

Debolina Roy

 

Health Sathi Card Benefits: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প রাজ্যের প্রতিটি পরিবারকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা প্রদান করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সাধারণ মানুষ উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে পরিবারের যে কোনো সদস্য অসুস্থ হলে রাজ্যের যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবে।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২,৫১০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করেছে। প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দপ্তরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সুবিধাগুলি:

১) প্রতি পরিবার বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাবে।
২) প্রতি পরিবার ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাবে।
৩) জটিল রোগের ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
৪) বিনামূল্যে ওষুধ, খাবার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে।
৫) পূর্ববর্তী কোনও রোগ থাকলেও তা এই স্বাস্থ্য বিমার অন্তর্ভুক্ত।
৬) যাতায়াত বাবদ সরকারি হাসপাতালে ৫০০ টাকা পর্যন্ত এবং বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য সাথী কার্ড অনলাইনে কীভাবে চেক করবেন:

১) প্রথমে swasthyasathi.gov.in ওয়েবসাইটে যান।
২) হোমপেজে “Check Application Status” অপশনে ক্লিক করুন।
৩) আপনার আবেদন নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রবেশ করুন।
৪) “Submit” বাটনে ক্লিক করুন।
৫) আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা দেখতে পাবেন।

স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চেক করার পদ্ধতি:

১) swasthyasathi.gov.in ওয়েবসাইটে যান।
২) “Balance Check” অপশনে ক্লিক করুন।
৩) আপনার কার্ড নম্বর এবং মোবাইল নম্বর প্রবেশ করুন।
৪) “Submit” বাটনে ক্লিক করুন।
৫) আপনার কার্ডের বর্তমান ব্যালেন্স দেখতে পাবেন।
Ayushman Yojana: বিনামূল্যে চিকিৎসার সীমা ১০ লক্ষ টাকা! জানুন 

স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি:

১) swasthyasathi.gov.in ওয়েবসাইটে যান।
২) “Apply Online” অপশনে ক্লিক করুন।
৩) প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি প্রবেশ করুন।
৪) পরিবারের প্রধান বয়স্কা মহিলার নামে আবেদন করতে হবে।
৫) প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করুন।
৬) “Submit” বাটনে ক্লিক করুন।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পরিবার উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এই প্রকল্পের ফলে রাজ্যের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি এর সুফল পাচ্ছে। তাদের আর চিকিৎসার জন্য অর্থের অভাবে কষ্ট পেতে হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে যে সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায়:

১) হৃদরোগের চিকিৎসা
২) ক্যান্সারের চিকিৎসা
৩) কিডনি রোগের চিকিৎসা
৪) নিউরোলজিক্যাল সমস্যার চিকিৎসা
৫) বার্ন ইনজুরির চিকিৎসা
৬) পোলিও সংক্রান্ত চিকিৎসা
৭) জন্মগত ত্রুটির চিকিৎসা
৮) অর্থোপেডিক সমস্যার চিকিৎসাএছাড়াও অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসাও এই কার্ডের মাধ্যমে করা যায়।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করালেই সুবিধা পাওয়া যায়। বহির্বিভাগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই কার্ডের সুবিধা পাওয়া যায় না।স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সুবিধা পেতে যে সমস্ত নথিপত্র প্রয়োজন:
১) আধার কার্ড
২) ভোটার কার্ড
৩) রেশন কার্ড
৪) পান কার্ড
৫) পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৬) মোবাইল নম্বরএই সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়ে আবেদন করলে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পাওয়া যায়। কার্ডটি পাওয়ার পর এটি ১ বছরের জন্য বৈধ থাকে। প্রতি বছর এটি নবীকরণ করতে হয়।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে গেলে যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে
:১) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় অবশ্যই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
২) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কার্ডটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে।
৩) চিকিৎসার জন্য কত টাকা কম্পিউটারে ব্লক হল (প্যাকেজ রেট) তা জেনে নিতে হবে।
৪) চিকিৎসার পর কার্ডের অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ জেনে নিতে হবে।
৫) ডিসচার্জ স্লিপ চেয়ে নিতে হবে।
৬) কার্ডের অবশিষ্ট টাকা চিকিৎসার প্যাকেজ রেটের চেয়ে কম থাকলে বাকি টাকা রোগীকে দিতে হবে।

স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হারিয়ে গেলে কী করতে হবে:

১) স্মার্ট কার্ড হারিয়ে গেলে নতুন কার্ড পাওয়া যায়।
২) নতুন কার্ড তৈরির খরচ উপভোক্তাকে বহন করতে হবে।
৩) এই সুবিধা পাওয়ার জন্য উপভোক্তাকে জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এই প্রকল্পের ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন সহজেই উচ্চমানের চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন। এর ফলে রাজ্যের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে।স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য খাতে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি এখন নিশ্চিন্তে চিকিৎসা করাতে পারছে। তাদের আর অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তবে এই প্রকল্পকে আরও কার্যকর করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন:
১) গ্রামাঞ্চলে এই প্রকল্প সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
২) কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করা।
৩) বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে এই প্রকল্পের আওতায় আরও বেশি চিকিৎসা পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা।
৪) কার্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে ২-৩ বছর করা।
৫) বহির্বিভাগের চিকিৎসাও এই প্রকল্পের আওতায় আনা।
Aadhar Card: আসল নাকি নকল? জেনে নিন যাচাই করার সহজ উপায়

স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের প্রভাব:

১) চিকিৎসা খরচের বোঝা কমেছে: এই প্রকল্পের ফলে পরিবারগুলির উপর থেকে চিকিৎসার আর্থিক বোঝা অনেকটাই কমেছে। আগে যেখানে অনেক পরিবার চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারত না, এখন তারা বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে।
২) স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি: এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। তারা এখন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছে এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা নিচ্ছে।
৩) মৃত্যুহার কমেছে: উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার ফলে রাজ্যে মৃত্যুহার কমেছে। বিশেষ করে হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি রোগ ইত্যাদি জটিল রোগের কারণে মৃত্যুর হার কমেছে।
৪) স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে: এই প্রকল্পের ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে। নতুন হাসপাতাল তৈরি হয়েছে, পুরনো হাসপাতালগুলি আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।
৫) কর্মসংস্থান সৃষ্টি: এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নতুন ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক্স নিয়োগ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সাফল্যের পরিসংখ্যান:

১) ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২.৫ কোটি পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে।
২) প্রায় ১০ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন।
৩) ২০২২ সালে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসা পেয়েছেন।
৪) রাজ্যের ১,৫০০টিরও বেশি হাসপাতাল এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে।
৫) গত ৫ বছরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

১) আগামী ২ বছরের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা।
২) প্রতি পরিবারের জন্য বার্ষিক বিমার পরিমাণ ৭ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা।
৩) বহির্বিভাগের চিকিৎসাও এই প্রকল্পের আওতায় আনা।
৪) টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালু করা।
৫) স্বাস্থ্য সাথী অ্যাপ চালু করা, যার মাধ্যমে রোগীরা সহজেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।

স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত:

ডাঃ সুকুমার মুখার্জি, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ: “স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে। তবে এই প্রকল্পকে আরও কার্যকর করতে গ্রামাঞ্চলে এর প্রচার বাড়াতে হবে।”ডাঃ অরিন্দম চক্রবর্তী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ: “স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। এর ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি এখন নিশ্চিন্তে চিকিৎসা করাতে পারছে। তবে এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করছে এর সঠিক বাস্তবায়নের উপর।”
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য খাতে একটি মাইলফলক। এর মাধ্যমে রাজ্যের কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তবে এই প্রকল্পকে আরও কার্যকর করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন গ্রামাঞ্চলে এর প্রচার বাড়ানো, কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আরও বেশি চিকিৎসা পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি। এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করছে সরকার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর। সবাই মিলে কাজ করলে এই প্রকল্প আরও সফল হবে এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।