হার্ট ব্লক: আপনার হৃদয় কি বিপদে? জানুন সতর্ক সংকেত ও প্রতিকার।

বর্তমান যুগের ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে হার্ট ব্লকের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের অভাব, জাঙ্ক ফুড, ধূমপান ও অ্যালকোহলের মতো অভ্যাস যৌবনে হার্ট ব্লকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ভারতবর্ষের মতো দেশে যেখানে…

Debolina Roy

 

বর্তমান যুগের ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে হার্ট ব্লকের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের অভাব, জাঙ্ক ফুড, ধূমপান ও অ্যালকোহলের মতো অভ্যাস যৌবনে হার্ট ব্লকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ভারতবর্ষের মতো দেশে যেখানে হৃদরোগের হার ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে হার্ট ব্লকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ট ব্লক কী?

হার্ট ব্লক হল একটি অবস্থা যেখানে হৃদয়ের বৈদ্যুতিক সংকেতগুলি সঠিকভাবে প্রবাহিত হয় না, যার ফলে হৃদস্পন্দন ধীর বা অনিয়মিত হয়ে যায়। এটি সাধারণত তিনটি স্তরে বিভক্ত হয়: প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডিগ্রী হার্ট ব্লক। তৃতীয় ডিগ্রী হার্ট ব্লক সবচেয়ে গুরুতর এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

হার্ট ব্লকের কারণ:

ভারতে হার্ট ব্লকের প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
  • উচ্চ রক্তচাপ: নিয়ন্ত্রিত না হলে উচ্চ রক্তচাপ হৃদয়ের বৈদ্যুতিক সংকেতগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস হৃদয়ের ধমনী ও বৈদ্যুতিক সংকেতগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • ধূমপান: ধূমপান হৃদয়ের ধমনী সংকীর্ণ করে এবং বৈদ্যুতিক সংকেতগুলিকে প্রভাবিত করে।
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অধিক চর্বিযুক্ত খাবার ধমনীতে প্লাক জমিয়ে হার্ট ব্লকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন হৃদয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং বৈদ্যুতিক সংকেতগুলিকে প্রভাবিত করে।

হার্ট ব্লকের লক্ষণ: 

হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলি বিভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়:
  • বুকে ব্যথা: বুকের মাঝখানে চাপ, ভারীতা বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
  • হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া: হৃদস্পন্দন ধীর বা অনিয়মিত হতে পারে।
  • অবসাদ: অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভূত হতে পারে।
  • মাথা ঘোরা: মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
হার্ট ব্লকের সতর্ক সংকেত
হার্ট ব্লকের সতর্ক সংকেতগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নলিখিত সতর্ক সংকেতগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়:
  • বুকে চাপ বা ব্যথা: এটি সাধারণত কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়।
  • শ্বাসকষ্ট: এটি বুকের ব্যথা ছাড়াও হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
  • ঠান্ডা ঘাম: হঠাৎ ঠান্ডা ঘাম হতে পারে।
  • মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া: মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি হতে পারে।

হার্ট ব্লকের প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

হার্ট ব্লকের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হার্ট ব্লকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অধিক চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, অধিক ফল ও শাকসবজি খাওয়া, এবং সঠিক পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম হৃদয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত।
৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
ধূমপান ও অ্যালকোহল হার্ট ব্লকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এগুলি পরিহার করা উচিত।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা হার্ট ব্লকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
ভারতে হার্ট ব্লকের পরিসংখ্যান
ভারতে হৃদরোগের পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ২০১৬ সালে, ভারতের মোট মৃত্যুর ২৮.১% হৃদরোগের কারণে হয়েছিল। এছাড়াও, ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগের মৃত্যুহার ১৩৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
সতর্ক সংকেত ও প্রতিকার: একটি তুলনামূলক টেবিল
লক্ষণ প্রতিকার
বুকে ব্যথা অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শ্বাসকষ্ট শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া ইসিজি পরীক্ষা করান
অবসাদ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
মাথা ঘোরা অবিলম্বে বসে পড়ুন এবং বিশ্রাম নিন
হার্ট ব্লকের সমস্যা থেকে বাঁচতে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা আমাদের হৃদয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে। তাই, হার্ট ব্লকের সতর্ক সংকেতগুলি উপেক্ষা না করে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।