আগামী রবিবার, অর্থাৎ ১৬ মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গের চারটি জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এই জেলাগুলো হলো পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই তাপপ্রবাহ কয়েক দিন ধরে চলতে পারে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এই গরমের হাত থেকে কবে নিস্তার মিলবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হয়েছে আবহাওয়া দফতরের তরফে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৬ মার্চ থেকে এই চার জেলায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে পারে। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাপপ্রবাহের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে বলে জানানো হয়েছে। এই সময়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাপপ্রবাহের জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে, তবে এখনও লাল সতর্কতার মতো চরম পর্যায়ে পৌঁছয়নি। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই তাপপ্রবাহ আগামী ১৮ মার্চ পর্যন্ত চলতে পারে, অর্থাৎ তিন দিন ধরে এই জেলাগুলোতে গরমের দাপট থাকবে। তারপর থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বসন্তের মাঝেই এমন তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসে অনেকেই চিন্তিত। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই গরমের কারণ হলো পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা শুষ্ক ও গরম হাওয়ার প্রভাব। এই সময়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম, যার ফলে আর্দ্রতার মাত্রা কম থাকবে এবং গরম আরও তীব্রভাবে অনুভূত হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষ করে যারা দিনের বেলা বাইরে কাজ করেন। তবে ১৯ মার্চ থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে এবং তাপমাত্রা কিছুটা কমে স্বস্তি ফিরতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এই তাপপ্রবাহের প্রভাব সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে গেলে দেখা যায়, শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধিই নয়, শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আবহাওয়া দফতর এবং চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, এই সময়ে ডিহাইড্রেশন এড়াতে পর্যাপ্ত জল পান করা জরুরি। বাইরে বেরোলে ছাতা, টুপি বা পাতলা কাপড় দিয়ে মাথা ও মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অতি প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়াই ভালো। এছাড়া, বাইরের খাবার বা তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে, কারণ এগুলো শরীরে তাপ বাড়াতে পারে।
এই ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা আরও বোঝা যায় যখন আমরা দেখি, চৈত্র মাস এখনও আসেনি, কিন্তু ফাল্গুনেই তাপপ্রবাহের এমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এবারের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা আরও বেশি হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এর পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহের ঘটনা বেড়েছে, এবং এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে সুসংবাদ এই যে, এই তাপপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ১৮ মার্চের পর থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে এবং আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সবশেষে বলা যায়, এই তাপপ্রবাহ স্থানীয়দের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৬ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত এই চার জেলায় তাপপ্রবাহ চলবে, এবং তারপর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তাই এই সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।