বঙ্গোপসাগরে নতুন করে ঘনীভূত হচ্ছে নিম্নচাপ অঞ্চল, যার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার নতুন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তার জেরে প্রায় সপ্তাহব্যাপী এই আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে। বিশেষত উপকূলবর্তী ও পশ্চিমের জেলাগুলিতে ৩০ জুন পর্যন্ত ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে বর্তমানে একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী অক্ষরেখাও সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই দুই শক্তির যৌথ প্রভাবে গোটা বঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই কলকাতা শহরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং দিনভর মেঘলা আকাশ থাকবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলিতেও বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে1। আবহাওয়া দফতর বিশেষভাবে সতর্ক করেছে যে কোথাও কোথাও ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে1। রবিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
পাঁচটি জেলায় ভারী বৃষ্টির জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই জেলাগুলি হলো পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কিছু অংশে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৭০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন জেলায়।
সোমবার বৃষ্টির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত সোমবারে নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং তার প্রভাবে উপকূলের সমুদ্র উত্তাল অবস্থায় থাকবে1। এই সময়ে ৫৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড়ো বাতাস বইতে পারে1। উত্তর বঙ্গোপসাগরও উত্তাল হয়ে উঠতে পারে এবং রবিবার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে1।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি – উপরের পাঁচ জেলাতেই বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই অঞ্চলে ১০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। রবিবার দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়িতে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে।
বিগত ২৪ ঘণ্টায় কালিম্পংয়ে ৬৪ মিলিমিটার এবং দার্জিলিংয়ে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস এবং নিচু এলাকাগুলিতে জল জমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে যে আগামী দুদিন ধরে কলকাতা শহরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এই সময়ে তাপমাত্রা ৩১-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকতে পারে। একটি উচ্চ বায়ুচক্র এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে এবং কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এমনকী রথযাত্রার দিনও এই জেলাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্যজীবীদের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে এবং বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে কারণ এই সময় সমুদ্র উত্তাল থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিম্নচাপ এবং মৌসুমি অক্ষরেখার জোড়া প্রভাবে শনিবার দক্ষিণবঙ্গের উপকূল ও পশ্চিমের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে6। দক্ষিণবঙ্গের উপকূল ও পশ্চিমের জেলায় সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। রবিবার পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং হুগলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার পাঁচটি জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে – পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং হুগলি। মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলায় রয়েছে। তবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ কয়েক পশলা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে সমস্ত জেলাগুলিতেই।
ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে এবং নদীর জলস্তর নতুন করে বাড়তে পারে। অতিবৃষ্টিতে শস্যের ক্ষতি হতে পারে বলেও আবহাওয়া দফতর সতর্ক করেছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা বলা হচ্ছে।