Mahalaya 2024 astrological impact: মহালয়া থেকে শুরু হয়ে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত দেবীপক্ষ জুড়ে শনির প্রভাব থাকবে বলে জানিয়েছেন জ্যোতিষীরা। এই সময়কালে বিশেষ করে ৫টি রাশির জাতকদের জন্য শনির প্রভাব অত্যন্ত অশুভ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনি গ্রহের প্রভাব সাধারণত মানুষের জীবনে নানা রকম বাধা-বিপত্তি নিয়ে আসে। তবে এই সময়কালে কিছু রাশির জাতকদের জন্য এই প্রভাব আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, এই ৫টি রাশির জাতকদের এই সময়কালে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।যে ৫টি রাশির জাতকদের জন্য এই সময়কাল বিশেষ বিপদজনক হতে পারে তারা হল:
১. মেষ রাশি
২. কর্কট রাশি
৩. তুলা রাশি
৪. ধনু রাশি
৫. মকর রাশি
এই রাশিগুলির জাতকদের জন্য শনির প্রভাব বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। কেউ আর্থিক সমস্যায় পড়তে পারেন, কারও চাকরি বা ব্যবসায় সমস্যা দেখা দিতে পারে, আবার কেউ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। পারিবারিক অশান্তি বা মানসিক চাপও বৃদ্ধি পেতে পারে এই সময়ে।তবে এই প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জ্যোতিষশাস্ত্রে কিছু উপায় বলা হয়েছে। নিয়মিত পূজা-অর্চনা, দান-ধ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে শনির কুপ্রভাব কমানো যেতে পারে বলে মনে করেন জ্যোতিষীরা।
মহালয়া অমাবস্যা ২০২৪: পিতৃপক্ষের শেষ দিনে কী করবেন, জেনে নিন তারিখ, সময় ও তাৎপর্য
বিশেষ করে শনিবার দিনে শনি দেবতার পূজা করা এবং কালো তিল, তেল ইত্যাদি দান করা ভালো ফল দিতে পারে।এছাড়াও মহালয়া অমাবস্যার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা এবং শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করা বিশেষ ফলপ্রসূ হতে পারে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ পেলে জীবনের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মহালয়া অমাবস্যার তাৎপর্য সম্পর্কে জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই দিনে সূর্য ও চন্দ্র একই রাশিতে অবস্থান করে। এর ফলে মানুষের মন ও আত্মা একত্রিত হয় এবং একধরনের সমাধি অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই কারণে মহালয়া অমাবস্যার দিন মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।তবে এই দিনটি শুধুমাত্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, মহালয়া অমাবস্যার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ করা খুবই শুভ। এর মাধ্যমে পিতৃপুরুষদের আত্মা শান্তি পায় এবং তাঁদের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
এছাড়াও এই দিনে মানুষের মধ্যে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বলে মনে করা হয়। কারণ অমাবস্যার দিন গ্রহগুলি অধিক শক্তি নিঃসরণ করে এবং মানুষের শরীর সেই শক্তি গ্রহণ করতে পারে।তবে অমাবস্যার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন:
- প্রবাহমান জলে একচামচ তিল ফেলে শিবের নাম জপ করা
- তুলসী গাছের নীচে প্রদীপ জ্বালিয়ে শনি দেবতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা
- হনুমানজীর মন্দিরে সিঁদুর, তেল, লবঙ্গ ও কালো উড়দ অর্পণ করে হনুমান চালিশা পাঠ করা
- তুলসী পাতা তোলা থেকে বিরত থাকা
- পিতৃকর্মের পর খিচুড়ি ও পুরি তৈরি করে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা
এই উপায়গুলি অবলম্বন করলে অমাবস্যার কুপ্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন জ্যোতিষীরা।তবে শুধুমাত্র জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর নির্ভর না করে বাস্তব জীবনেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে যে ৫টি রাশির জাতকদের জন্য এই সময়কাল বিপদজনক হতে পারে, তাদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।যেমন:
- যানবাহন চালানোর সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা
- অপরিচিত লোকের সাথে লেনদেন করা থেকে বিরত থাকা
- স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
- পারিবারিক সম্পর্কে কোনো অশান্তি দেখা দিলে ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা
- মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা
এছাড়াও এই সময়কালে নতুন কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষ করে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন বা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকা ভালো। কারণ শনির প্রভাবে এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলি ক্ষতিকর হতে পারে।তবে মনে রাখা দরকার যে, জ্যোতিষশাস্ত্রের এই সব ভবিষ্যদ্বাণী সম্পূর্ণ নির্ভুল নাও হতে পারে। কারণ মানুষের জীবনে অনেক কিছুই তার নিজের কর্মের উপর নির্ভর করে। তাই শুধুমাত্র জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর নির্ভর না করে নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনা প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।পিতৃপক্ষ বা মহালয়া থেকে শুরু হওয়া দেবীপক্ষের এই সময়কালটি হিন্দু ধর্মে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করার সময় হিসেবে পালিত হয়।
মহালয়া: মহাভারতের কর্ণের স্বর্গে তর্পণ থেকে শুরু হওয়া এক অনন্য ঐতিহ্য
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, এই সময়কালে পিতৃপুরুষদের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে এবং তাঁদের বংশধরদের দেখা করতে আসেন। তাই এই সময় পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ ও শ্রাদ্ধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পিতৃপক্ষের শেষ দিন অর্থাৎ মহালয়া অমাবস্যার দিন সর্বপিতৃ অমাবস্যা হিসেবে পালিত হয়। এই দিন সমস্ত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ করা হয়।জ্যোতিষশাস্ত্রে পিতৃপক্ষের গুরুত্ব অনেক। মনে করা হয় যে, পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ পেলে জীবনের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার পিতৃঋণ শোধ না করলে জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জন্মকুণ্ডলীতে পিতৃদোষ থাকলে তা নানা সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন সন্তান লাভে সমস্যা, পেশাগত জীবনে বাধা বা আর্থিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ করে পিতৃদোষ কাটানোর চেষ্টা করা হয়।তবে শুধুমাত্র পিতৃপক্ষেই নয়, সারা বছর ধরেই পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা উচিত। কারণ পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে।