স্টাফ রিপোর্টার
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫:০০ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

কলকাতার সেরা ১০ বনেদি বাড়ির পুজো: ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিলনমেলা

Heritage Durga Puja in Kolkata

 Heritage Durga Puja in Kolkata: কলকাতার দুর্গাপুজো শুধু উৎসব নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এই শহরের বনেদি বাড়িগুলিতে শতাব্দী প্রাচীন পুজোর ঐতিহ্য এখনও অটুট রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কলকাতার সেরা ১০টি বনেদি বাড়ির পুজো সম্পর্কে, যেগুলি এখনও তাদের প্রাচীন রীতিনীতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে।

১. শোভাবাজার রাজবাড়ি:

কলকাতার সবচেয়ে পুরনো ও বিখ্যাত বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম। ১৭৫৭ সালে নবকৃষ্ণ দেব এই পুজো শুরু করেন। এখানে দুটি পুজো হয় – বড় রাজবাড়ি ও ছোট রাজবাড়ি। বড় রাজবাড়িতে একচালা ঠাকুর ও ছোট রাজবাড়িতে দোচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানে এখনও পশুবলি দেওয়া হয়। সপ্তমীর দিন সকালে কুমারী পুজো ও সন্ধ্যায় সন্ধিপুজো অনুষ্ঠিত হয়। নবমীর রাতে মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়।

২. জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িতে ১৭৯০ সাল থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয়। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার পুজোয় কোনও জাঁকজমক নেই, সাদামাটা ভাবেই পুজো হয়। তবে এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্রনাথের সময় থেকেই এই ঐতিহ্য চলে আসছে।

মা আসছেন! জানেন দূর্গা পূজা আর কত দিন বাকি? জেনে নিন এখনই!

৩. লাহা বাড়ি, বেহালা:

১৮৪৯ সালে গোবিন্দ রাম লাহা এই পুজো শুরু করেন। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল ষষ্ঠীর দিন থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় আরতি হয়। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও সন্ধিপুজো হয়। নবমীর দিন মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়।

৪. সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ি, বাগবাজার:

১৬১০ সালে লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার বরিশায় এই পুজো শুরু করেন। পরে তা কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। এটি কলকাতার সবচেয়ে প্রাচীন পুজো। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন ১০৮ পদ্মফুল দিয়ে পুজো করা হয়। নবমীর দিন ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।

৫. পাঠুরিয়াঘাটা রাজবাড়ি:

১৮৩২ সালে আশুতোষ দেব এই পুজো শুরু করেন। এখানে দোচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও সন্ধিপুজো হয়। নবমীর দিন মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়। দশমীর দিন বিসর্জনের আগে দেবীর মুখে দই-চিড়ে খাওয়ানো হয়।

৬. মল্লিক বাড়ি, ভবানীপুর:

১৮৮৫ সালে কোয়েল মল্লিক এই পুজো শুরু করেন। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও সন্ধিপুজো হয়। নবমীর দিন মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পশুবলি দেওয়া হয় না, তার বদলে কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।

৭. হাতিবাগান দত্ত বাড়ি:

১৭৯২ সালে বিনয়রাম দত্ত এই পুজো শুরু করেন। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও সন্ধিপুজো হয়। নবমীর দিন মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়। এখানে এখনও পশুবলি দেওয়া হয়।

৮. চন্দ্র বাড়ি, ভবানীপুর:

১৮৫৮ সালে গোপাল চন্দ্র এই পুজো শুরু করেন। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও সন্ধিপুজো হয়। নবমীর দিন মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পশুবলি দেওয়া হয় না, তার বদলে কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।

৯. দাস বাড়ি, জোড়াসাঁকো:

১৮৪০ সালে দুর্গাচরণ দাস এই পুজো শুরু করেন। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও সন্ধিপুজো হয়। নবমীর দিন মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়। এখানে এখনও পশুবলি দেওয়া হয়।

১০. কোমারপাড়া মিত্র বাড়ি:

১৮০৯ সালে রাজা রাজকৃষ্ণ মিত্র এই পুজো শুরু করেন। এখানে একচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এখানকার বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও সন্ধিপুজো হয়। নবমীর দিন মহাষ্টমীর বলিদান অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পশুবলি দেওয়া হয় না, তার বদলে কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।

কলকাতার ৪টি অজানা পুরনো বই বাজার: কলেজস্ট্রীটের বাইরেও রয়েছে বইপ্রেমীদের স্বর্গ!

এই বনেদি বাড়িগুলির পুজো শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এগুলি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। প্রতিটি বাড়ির পুজোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য রয়েছে। যেমন, সোভাবাজার রাজবাড়িতে এখনও পশুবলি দেওয়া হয়, অন্যদিকে মল্লিক বাড়িতে কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। আবার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য রয়েছে।এই বনেদি বাড়িগুলির পুজো দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। UNESCO ২০২১ সালে কলকাতার দুর্গাপুজোকে Intangible Cultural Heritage of Humanity তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর ফলে এই বনেদি বাড়িগুলির পুজোর গুরুত্ব আরও বেড়েছে।বনেদি বাড়িগুলির পুজোর একটি বিশেষ আকর্ষণ হল এগুলির স্থাপত্য। অধিকাংশ বাড়িই কলোনিয়াল যুগের স্থাপত্যের নিদর্শন। যেমন, সোভাবাজার রাজবাড়ি ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। এই বাড়িগুলি দেখতে গেলে বাঙালি স্থাপত্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।

বনেদি বাড়িগুলির পুজোয় প্রতিমার সাজসজ্জাও অন্যরকম। অধিকাংশ বাড়িতেই একচালা বা দোচালা ঠাকুর পুজো করা হয়। এগুলি প্রাচীন বাঙালি শিল্পকলার নিদর্শন। প্রতিমার গঠন ও সাজসজ্জা দেখলে বাঙালি শিল্পকলার ক্রমবিকাশ বোঝা যায়।বনেদি বাড়িগুলির পুজোয় অনেক প্রাচীন রীতিনীতি এখনও পালন করা হয়। যেমন, কুমারী পুজো, সন্ধিপুজো, মহাষ্টমীর বলিদান ইত্যাদি। এগুলি বাঙালি হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতির জীবন্ত উদাহরণ। এছাড়া অনেক বাড়িতে এখনও পশুবলি দেওয়া হয়, যা একটি বিতর্কিত বিষয়।বনেদি বাড়িগুলির পুজোয় খাবারের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে নিজস্ব রেসিপিতে ভোগ তৈরি করা হয়। এগুলি বাঙালি রান্নার ঐতিহ্য বহন করে। যেমন, সোভাবাজার রাজবাড়িতে নিরামিষ ভোগ খুব বিখ্যাত।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close